মির্জা ফখরুল : দলমত নির্বিশেষে ‘গণঐক্য’ গড়ার আহ্বান

আগের সংবাদ

পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ প: সুনামগঞ্জে একসঙ্গে ৩ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ

পরের সংবাদ

শ্রমবাজারে দুষ্ট চক্রের থাবা

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। পরিকল্পনার অভাব ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে একের পর এক বাজার হাতছাড়া হচ্ছে। সরকার নতুন বাজার তৈরির চেষ্টা করায় সম্ভবনা দেখা দিলেও তা হারাতে হচ্ছে অসাধু চক্রের কারণে। মালয়েশিয়ার বাজার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এখনো কাটেনি। বন্ধ হওয়া এই বাজার চালু হলেও কর্মী পাঠানোর হার সন্তোষজনক নয়। সৌদি আরবের বাজার থেকে রেমিটেন্স আসা কমেছে। কোরিয়া, কাতার ও লিবিয়ার বাজারের খবর ভালো নয়। সম্ভাবনা জাগালেও রোমানিয়ার বাজার হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতালির বাজারে নতুন কর্মী যাওয়ার খবর নেই। গ্রিসে কর্মী যাওয়া বন্ধ আছে। ইউরোপের শ্রম বাজারে প্রবেশ করাই যাচ্ছে না। অবৈধ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রা, কর্মী পাঠাতে বয়স জালিয়াতি ও বিদেশে গিয়ে কাজ না পেয়ে অপরাধে জড়ানো- বিতর্কিত এমন সব কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হচ্ছে মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ অন্যান্য শ্রমবাজার। এর সুযোগ নিচ্ছে নেপাল, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশ। সব মিলিয়ে শ্রমবাজারে সুখবর নেই। এর প্রভাবে অনেক কমে যেতে পারে রেমিট্যান্স।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, সরকার নতুন বাজার খুঁজছে। শ্রমবাজারে ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে পুনরায় চালু হচ্ছে ‘প্রবাসী সেল’। প্রবাসী ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সমস্যা সমাধানে শিগগিরই ‘প্রবাসী কল্যাণ সেল’ গঠন হবে। জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা আলাদা কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ সেল প্রবাসীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানে সবসময় তৎপর থাকবে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে বলেন, প্রবাসীদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। তারা ঝুঁকি নিয়েই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন। এর প্রভাব পড়তে পারে শ্রমবাজারে। নতুন বাজার তৈরি হবে বলেও আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, নতুন বাজার তৈরি করতে দক্ষ কর্মী দরকার। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। মালয়েশিয়া সব দেশের জন্যই এই আইন করেছে। বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু নয়। তারা নতুন সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে। তা করলে বাংলাদেশ, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়াকে তারা গুরুত্ব দেবে। রোমানিয়ার বাজারে সম্ভবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে আমাদের সুযোগ আগে থেকেই কম। ওমানের বাজার আটকে আছে। কাতারের বাজার বন্ধ

হলেও শিগগিরই সে দেশের আমির এদেশে আসবেন। এরপর এই বাজার নতুন করে চালু হতে পারে। তিনি বলেন, লিবিয়ার বাজার ভালো নয়। দালালদের মাধ্যমে কর্মীরা সেখানে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। মানবপচারকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। তবে সৌদি আরব ও দুবাইয়ের বাজার তুলনামূলক ভালো। ডলারের দাম বেশি, অবৈধ চ্যানেলে টাকা আসাসহ অনেক কারণে রেমিট্যান্সে প্রভাব পড়ছে বলেও জানান তিনি।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, অনেক বছর ধরে আমাদের শ্রমবাজার ৭-৮টা দেশের মধ্যে আটকে আছে। সংকট হলেই এতে প্রভাব পড়ছে। দক্ষ কর্মী তৈরি ও পাঠাতে না পারলে এই সমস্যার সমাধান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবে গিয়েও অনেকে কাজ পাচ্ছে না। আরব আমিরাত ও ওমানে বলতে গেলে বাজার ঝিমিয়ে আছে। এতে রেমিট্যান্স এক জায়গায় আটকে আছে, বাড়ছে না। মালয়েশিয়ার বাজার বহু বছর ধরে দুষ্ট চক্রের কাছে জিম্মি। তারা ৫/৭ বা দশগুণ টাকা নিচ্ছে কর্মীদের কাছ থেকে। ফাঁদে পা দিয়ে যারা মালয়েশিয়া যাচ্ছেন- তারাও প্রত্যাশিত কাজ ও মুজুরি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের হতাশা নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। শরিফুল হাসান বলেন, চিহ্নিত দুষ্ট চক্রের বিচার না হওয়ায় এই বাজারটি নষ্ট হচ্ছে। বাজার নষ্ট হলে রেমিট্যান্সে এর প্রভাব পড়ছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, দালালদের উচ্চ বেতন আর উন্নত জীবনের প্রলোভনে থামছে না ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীর ঢল। নিয়মিত ঘটছে অকাল মৃত্যু বা নিখোঁজের ঘটনা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ বা মারা গেছেন ৩ হাজার ৪১ অভিবাসী। আর জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বলছে, অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের তালিকায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এছাড়া বয়স জালিয়াতি করে ১৪ বছরের কর্মীকে ২৭ বছর দেখানো, বিদেশে গিয়ে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে ভালো অফারে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ও ১ লাখ টাকার ভিসা ১০ লাখে কিনেও প্রবাসে গিয়ে কাজ না পাওয়াসহ পদে পদে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, নতুন বাজার হিসেবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী পাড়ি জমিয়েছিলেন পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায়। সহজে ভিসা প্রাপ্তি এবং কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠে দেশটি। বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছিল রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা সেন্টারও। তবে কিছুদিনের মধ্যেই হোঁচট খায় সেই উদ্যোগ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর উদ্দেশ্যমূলক আচরণ, কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির উদাসীনতা এবং বাড়তি টাকা নেয়ায় শ্রমিক যাওয়া কমে যায়। গত ছয় মাসে বেশ কিছু শ্রমিক ভিসা পেলেও বিএমইটির কয়েকজন কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে সঠিক সময়ে যেতে পারছেন না কর্মীরা। এতে আশা জাগালেও নিজেদের সংকটের কারণে এই বাজার দখলে নিচ্ছে নেপালসহ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলো।
এদিকে প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর চালু হওয়া মালয়েশিয়ার বাজারে ফের কর্মী যাওয়া বন্ধ হতে যাচ্ছে। চালু হওয়ার পর পুরনো কায়দায় তা সিন্ডিকেটের দখলে থাকায় সেখানে গিয়ে লাখো বাংলাদেশি কর্মী প্রতারিত হয়েছেন। চাকরি না পেয়ে মাসের পর মাস মানবেতর জীবনযাপন করছেন বহু কর্মী। তবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। এর মধ্যে বাজারটি ফের বন্ধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন করে আর বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোনো আবেদন অনুমোদন করছে না মালয়েশিয়া সরকার। যারা ইতোমধ্যে অনুমোদন নিয়েছেন, তাদের কর্মীদের কাল ৩১ মার্চের মধ্যে ভিসার জন্য আবেদন জমা দিতে হবে। এরপর আর কর্মীদের ভিসার আবেদন নেবে না দেশটি। যারা ইতোমধ্যে ভিসা নিয়েছেন বা নেবেন; তাদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের শেষ সময় আগামী ৩১ মে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ খবর দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়