পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

অর্থাভাবে বন্ধ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। কোথাও এক মাস, আবার কোথাও টানা দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ। গত দুই মাসে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই মেগা প্রকল্পের কাজে অর্থের যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাজের ধীরগতির কারণে এই প্রকল্পের ঋণদাতা চীনের দুই প্রতিষ্ঠান অর্থ ছাড় বন্ধ রেখেছে। এই অচলাবস্থা কবে নিরসন হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলছে পারছেন না।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘২০২৪ সালের মধ্যেই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।’ তবে আপাতদৃষ্টিতে এই সম্ভাবনা মোটেই দেখা যাচ্ছে না। ফলে কাওলা থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পেতে নগরবাসীকে ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক মেগা প্রকল্প। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে। র‌্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) অংশীদারত্বে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে সরকার দেবে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। বাকিটা ঋণ হিসেবে দেবে থাইল্যান্ডের ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড এবং চীনের দুটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান- চীনের শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। অংশীদার তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ হলো এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে শুরু হয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। চলতি বছরের ২০ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) গেটসংলগ্ন একটি র‌্যাম্প খুলে দেয়া হয়। এরপর কাজ এগিয়ে চলতে থাকলেও হঠাৎ করে কাজের গতি কমে যায়। এখন মগবাজারের হাতিরঝিল এলাকায় স্বল্প পরিসরে অল্পসংখ্যক কর্মী দিয়ে কাজ চলছে, তবে অন্যসব স্থানের কাজ বন্ধ রয়েছে। মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সব পিলার উঠে গেলেও পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ চলছে না। কমলাপুরের দিকে পিলার তৈরির কাজও বন্ধ রয়েছে।
চলতি বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে পুরো প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি হঠাৎ করেই চীনের দুটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা ছাড় না করায় আর্থিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে কর্মী ছাঁটাই ও

নির্মাণকাজে ধীর গতি নেমে আসে। চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা টাকা দিচ্ছে না।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা এবং এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেডের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েক মাসে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটি দেয়া হয়েছে। মূলত টাকার অভাবে প্রকল্পের কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। টাকার সংস্থান না হওয়া পর্যন্ত কাজ এভাবে চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকারের সংশ্লিষ্টদের এই প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। কাজের গতি হারিয়ে ফেলায় প্রকল্পের মেয়াদ আবারো বাড়াতে হবে।
অবশ্য প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ বন্ধ নেই, চলমান রয়েছে। তবে আর্থিক কারণে কিছুটা ধীর গতিতে চলছে। ঋণের টাকা ছাড় হওয়া না-হওয়ার বিষয়টি আমাদের দেখার দায়িত্ব না। এটা বিনিয়োগকারীরা দেখবেন। আমরা মালামাল পেলে কাজ চালিয়ে নেব। আর্থিক বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীরা দেখবেন, মন্ত্রণালয় দেখবে। তবে ঋণের টাকার ছাড় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে। অর্থ পেতে চেষ্টা চলছে।
প্রকল্পের হাতিরঝিল ওয়ার্ক ইয়ার্ডের কর্মী শামীম জানান, গত দুই মাস ধরে কম কাজ হচ্ছে। কাজ কম থাকায় অনেক কর্মীকে ছুটি দেয়া হয়েছে। এক মাস আগে রাতের বেলাতেও কাজ চলত, এখন হয় না। অন্য ইয়ার্ড থেকে কিছু কর্মীকে হাতিরঝিল এলাকায় আনা হয়েছে।
প্রকল্পের তেজগাঁও ইয়ার্ডে কাজ বন্ধ রয়েছে। টিটিপাড়াতেও একই অবস্থা। রড বানানো, গার্ডার ঢালাই, বৈদ্যুতিক কাজসহ সব ধরনের কাজই কম হচ্ছে। কমলাপুর ও টিটিপাড়া এলাকায় শুধু নিরাপত্তা কর্মীরাই রয়েছেন। ঢালাই তৈরির জন্য প্ল্যান্ট একেবারেই নিশ্চুপ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়