পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ : তাপপ্রবাহকে গণ্য করতে হবে দুর্যোগ হিসেবে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অংশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর জারি করেছে হিট এলার্ট। বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণ ও তা মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আলাপ হয় কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুমণ্ডলের প্রকৃতি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছেন তিনি। নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসও দিয়ে থাকেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আয়েন উদ্দীন।
ভোরের কাগজ : বাংলাদেশে এই তাপপ্রবাহ কেন হচ্ছে?
মোস্তফা কামাল : কোনো স্থানের ওপর তাপপ্রবাহ অবস্থা ঘোষণা করার জন্য কিছু অবশ্যকীয় শর্ত পূরণ করতে হয়। আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় কোনো স্থানে তাপপ্রবাহ অবস্থা বিরাজ করবে যদি সেই স্থানের ঊর্ধ্ব-আকাশে বায়ুর নি¤œচাপ ও ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুর উচ্চচাপ অবস্থা বিরাজ করে দীর্ঘ সময় ধরে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বায়ুমণ্ডলে ওপরে বর্ণিত বায়ুচাপ অবস্থা বিরাজ করছে গত এক সপ্তাহ ধরে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপপ্রবাহের সংজ্ঞা অনুসারে, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মধ্যম তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ অবস্থা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হলো আকাশে বায়ুর চলাচল স্থবির হয়ে পড়া, বাতাসের গতিবেগ কমে যাওয়া ও আকাশ মেঘমুক্ত থাকা।
ভোরের কাগজ : এই তাপপ্রবাহ কি শুধু বাংলাদেশে হচ্ছে নাকি আরো দেশে চলমান?
মোস্তফা কামাল : এই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছিল ভারতের পশ্চিম দিকের রাজ্যগুলোর উপরে ও ধীরে-ধীরে পূর্ব দিকের রাজ্যগুলোর ওপরে অগ্রসর হচ্ছে। আজ (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িষ্যা ও বিহার রাজ্যের ওপর তাপপ্রবাহ বিরাজ করে। তবে সবচেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে।
ভোরের কাগজ : তীব্র গরমের পেছনে মানবসৃষ্ট কারণ আছে?
মোস্তফা কামাল : তাপপ্রবাহের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকার বিষয়ে একমত ৯০ শতাংশ বিজ্ঞানী। তবে এর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও আছে। এগুলোর একটি হলো স্থানীয় কারণ এবং অন্যটি বৈশ্বিক কারণ। কোনো স্থানে তাপপ্রবাহের সৃষ্টি প্রাকৃতিক নিয়মে শুরু হলেও তাপপ্রবাহের তীব্রতা কম বা বেশি হওয়া নির্ভর করছে ওই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের দ্বারা কতটুকু পরিবর্তিত হয়েছে তার ওপর। একই ডিগ্রির তাপপ্রবাহ ঢাকা শহরের পাশে অবস্থিত আড়িয়ল বিল এলাকার কিংবা টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকার মানুষের জন্য যতটুকু অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, তার চেয়ে ঢাকা শহরের মানুষের জন্য অনেক বেশি কষ্টদায়ক হবে। কারণ, সূর্যতাপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হবে আড়িয়ল বিল এলাকার জলাভূমির পানি বাষ্পায়নের জন্য, কিংবা মধুপুর বনভূমি থেকে ইভাপোট্রান্সপিরেশনের (যার মাধ্যমে জল ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়) জন্য। যে শহর এলাকায় খোলা জায়গা ও গাছপালা যত বেশি থাকবে, সেই শহরের মানুষ তাপপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব তত কম অনুভব করবে।
ভোরের কাগজ : কতদিন থাকতে পারে চলমান তাপপ্রবাহ?
মোস্তফা কামাল : ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেলের পূর্বাভাস অনুসারে চলমান এই তাপপ্রবাহ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
ভোরের কাগজ : তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নিতে পারে? অন্য দেশের সরকার এক্ষেত্রে কী করে?
মোস্তফা কামাল : জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক দেশে এমন সময় তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটছে। উন্নত দেশগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি আবহাওয়া প্রতিষ্ঠান তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস ১০ থেকে ১৫ দিন আগেই দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সেসব দেশের গণমাধ্যম জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাপপ্রবাহ শুরুর অনেক আগে থেকেই সংবাদমাধ্যম সতর্কতা ও করণীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশ করে। এতে মানুষ আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোতে তাপপ্রবাহ চলাকালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আশ্রয় শিবির চালু করে, যেখানে ঘরহীন মানুষ আশ্রয় নেন। বিভিন্ন ফুড-ব্যাংক থেকে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারও একই ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। তাপপ্রবাহকে দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করে এ সময়ে ‘আবহাওয়াজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি করতে হবে। বন্যা, শীত, ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমানো ও দুর্গত মানুষের জন্য যেমন সরকারের বরাদ্দ থাকে, তেমনি তাপপ্রবাহ নিয়েও নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য সরকারের পরিকল্পনা ও বরাদ্দের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ভোরের কাগজ : তাপপ্রবাহে সাধারণ জনগণ ও কৃষকদের করণীয় কী?
মোস্তফা কামাল : তীব্র গরমে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের হিট-স্ট্রোকের ঝুঁকি খুবই বেশি। তাই এই দুই শ্রেণির মানুষের সকাল ৯টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে না যাওয়া উচিত। কৃষকদের সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে খোলা মাঠে কাজ করা থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকতে হবে। মাঠে কাজ করার সময় যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সাদা রঙ এবং সুতি কাপড় পরিধান করা। ছাতা নিয়ে বাইরে যাওয়া। কোনো মানুষ হিট-স্ট্র্র্র্রোকে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে কাপড়-চোপড় খুলে যত দ্রুত সম্ভব গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়