রিজভী : সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাস নির্ভর হয়ে গেছে

আগের সংবাদ

বুয়েটে হার্ডলাইনে সরকার

পরের সংবাদ

পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ প: সুনামগঞ্জে একসঙ্গে ৩ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার টুকেরবাজার থেকে ১৯ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে সারিসারি গাছগুলো কাটতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের দুই পাশে রয়েছে সারি সারি নানা প্রজাতির গাছ। গাছগুলোর বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। সবুজে মোড়া হাজারো গাছের ছায়ায় পথ চলেন পথচারীরা, পাখিরা নেয় আশ্রয়। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই ‘সামাজিক বনায়ন বিধির’ দোহাই দিয়ে প্রায় তিন হাজার বৃক্ষনিধনের আয়োজন চলছে সড়কটিতে। প্রতিটি গাছের গায়ে লাল কালিতে দেয়া হয়েছে নম্বর। এ যেন একেকটি গাছের মৃত্যু পরোয়ানা।
এদিকে সুনামগঞ্জ বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী গাছ বিক্রির টাকা উপকারভোগীদের ৫৫ শতাংশ, বন অধিদপ্তর ১০ শতাংশ, ভূমির মালিক হিসেবে সওজ ২০ শতাংশ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৫ শতাংশ পাবে। বাকি ১০ শতাংশ টাকা দিয়ে আবার বনায়ন করা হবে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার টুকেরবাজার থেকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের দুই পাশে লাগানো বৃক্ষনিধনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে বন বিভাগ। আগামী ১ এপ্রিল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। স্থানীয় লোকজন জানান, গাছগুলো গণনার জন্য নম্বর দেয়া হয়েছে। কাটার কথা শুনে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক সড়কে এত গাছ কাটার বিষয়ে কোনো কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক। যদিও সড়কটি তাদের আওতাধীন।
বন বিভাগের দাবি, এসব গাছ সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে লাগানো হয়েছিল। এগুলো কাটার সময় হয়ে যাওয়ায় নিয়মানুযায়ী এখন গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর থেকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। সওজের আওতাধীন সড়কটি ২০২২ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের জুনে সড়কটি সংস্কার হয়। তখন সওজের পক্ষ থেকে সড়ক সংস্কারের সময় যেসব গাছের গুঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বন বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। ওই গাছগুলো সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোপণ করা হয়েছিল।
স্থানীয় লোকজন গাছের পরিচর্যা করেন। এখন মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় গাছ কাটার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সরজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার সুরমা নদীর আব্দুজ জহুর সেতু থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তেমন গাছ নেই। টুকেরবাজার থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিয়ামতপুর হয়ে সড়কটি জামালগঞ্জের সাচনাবাজার পর্যন্ত গেছে। সড়কের বেশিরভাগ অংশই সুনামগঞ্জ সদরের। দুই পাশে সারি-সারি গাছ। টুকেরবাজার থেকে গাছে নম্বর দেয়া শুরু হয়েছে। সদরের উমেদশ্রী, নিধিরচর, ইচ্ছারচর, ইসলামপুর, বেড়াজালি, আহমদাবাদ, বিশ্বম্ভরপুরের দুলবারচর, সংগ্রামপুর এবং জামালগঞ্জ উপজেলার শেরমস্তপুর, নজাতপুর থেকে সাচনাবাজার পর্যন্ত প্রতিটি গাছে নম্বর দেয়া।
নিয়ামতপুর সেতুর পাশে স্থানীয় দুজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তারা জানান, গাছ কাটার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এর মধ্যে একজন জানান, এলাকার লোকজনকে নিয়ে বছর বিশেক আগে গাছগুলো লাগানো হয়। কিছু লোক বন বিভাগের কমিটিতে আছেন।
জামালগঞ্জের নজাতপুর গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন একটি কমিটির সদস্য। তিনি জানান, গাছ লাগানোর পর তারা গাছগুলো দেখেশুনে রেখেছেন। এজন্য তাদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিও আছে। গাছ বিক্রি হলে তারা কিছু টাকা পাবেন। গাছ কাটা প্রয়োজন কিনা, জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, তারা তো (বন বিভাগ) বলছে- কাটার সময় হয়ে গেছে। পরে আবার লাগাবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান গাছ কাটার কথা শুনে বিস্মিত। তিনি বলেন, এত গাছ কাটবে কেন? পরে আবার লাগানোর চেয়ে এগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেই পথ খোঁজা উচিত। প্রশাসন স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরাও থাকব। প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষদের সরকার অন্যভাবে সুবিধা দিক। তবু হাজার হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ বন্ধ করা দরকার।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, গাছ কাটার জন্য যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। একটি গাছ ঘিরে একটি জীবন চক্র গড়ে ওঠে। গাছ কাটা মানে সব শেষ। সামাজিক বনায়নের বিধিমালার পরিবর্তন দরকার। একটি সড়কের সব গাছ কেটে ফেলা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। নতুন করে গাছ লাগিয়ে এ ক্ষতিপূরণ করা যায় না।
বন বিভাগের সুনামগঞ্জ রেঞ্জ কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মো. দ্বীন ইসলাম জানান, গাছগুলো সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে লাগানো হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের পরিচর্যা করেছেন। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় তারাই গাছ কাটতে তাগাদা দিচ্ছেন। এজন্য বিভাগীয় কার্যালয় থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পরে আবার সড়কের দুই পাশে গাছ লাগানো হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়