পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

উত্তেজনা কি আপাতত শেষ হলো : ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতিদ্ব›িদ্বতা মনে হচ্ছে এবারের মতো শেষ হলো। যদিও ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি যে শুক্রবার ভোরে ইরানে যে হামলা হয়েছে সেটি তারা করেছে। এদিকে ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টিকে গুরুত্বহীন, এমনকি এ নিয়ে হাস্যরস পর্যন্ত করেছেন যে আদৌ কিছু হয়েছে কিনা। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে মন্তব্য না করার নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন।
ইরানে শুক্রবার ভোরের হামলায় কী ধরনের অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছিল এবং তাতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে এখনো অসম্পূর্ণ ও পরস্পরবিরোধী তথ্য আসছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা। কিন্তু ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যাঞ্চলীয় ইস্ফাহান প্রদেশের এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিযে কয়েকটি ছোট ড্রোন বিস্ফোরিত হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান বলেছেন, ভূপাতিত করা মাইক্রো এয়ার ভেহিক্যালের কারণে কোনো ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু এসব সাধারণ কোয়াডকপ্টার হলো ইসরায়েলের এক ধরনের কলিং কার্ড- যা তারা ইরানের অভ্যন্তরে গোপন কার্যক্রম চালাতে কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করছিল। এবার তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল ইস্ফাহান, যেখানে দেশটির চমৎকার ইসলামী ঐতিহ্য রয়েছে। তবে এই প্রদেশটির বিশেষ পরিচিতি হলো নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য। দ্য ইস্ফাহান নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সেন্টার এবং একটি বড় ধরনের বিমান ঘাঁটি সেখানে আছে যা গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া এটি ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানারও একটি কেন্দ্র। সেখান থেকেই শত শত ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে গেছে ইসরায়েলের দিকে।
সুতরাং সীমিত হলেও এটি ইরানের দিকে শক্ত বার্তা নিয়ে গেছে যে ইরানের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত করার মতো গোয়েন্দা সামর্থ্য ও সক্ষমতা ইসরায়েলের আছে। ইসরায়েলের জন্য এই বার্তা দেয়াটাই জরুরি ছিল এবং তারা সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নাতাঞ্জকে সুরক্ষা দেয়া ইরানের এয়ার ডিফেন্স রাডার সিস্টেমের মতো কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের। তবে এটা কতটা সফল হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হতে পারে এই হামলা ছিল একেবারেই সিরিজের প্রথম পর্বের মতো বিষয়। তবে উদ্দেশ্যমূলক না হলেও এটা ছিল ওই সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ৮৫তম জন্মদিনের উপহার।
ছায়া যুদ্ধ এখন প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নিয়েছে : ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের নীরবতা ইরানকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক সুযোগ দিয়েছে। আবার যখনই শত্রæ আক্রমণ চালাবে তখনই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সঙ্গে নিয়েই ইরান পাল্টা শক্ত জবাব দেবে- এই নীতির দিকেও যায়নি ইরান। তারা বরং নিজেদের শক্তির প্রদর্শনকে উপভোগ করেছে।
কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তার শুক্রবারের বক্তৃতায় এসব সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করেননি। ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির জন্য, তারা অঙ্গীকার অনুযায়ী অভিযান চালিয়েছে- ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে। তিনি তার দেশের ইস্পাত কঠিন অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ বা সরাসরি উত্তেজনার বদলে দীর্ঘমেয়াদি খেলার কৌশলগত ধৈর্যের জন্য ইরান গর্ব করেছে।
এখন দেশটি ‘কৌশলগত প্রতিরোধ’-এর

কথা বলছে। নতুন এই নীতি তারা নিয়েছে দামেস্কে গত ১ এপ্রিল কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে হামলার পর। এদিন ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ ৭ জন নিহত হন। এ হামলার বদলা হিসেবে গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। তবে ইসরায়েলি ও মার্কিন বাহিনী এর বেশির ভাগই প্রতিহত করেছে। সবশেষ গত শুক্রবার ইরানের ইস্পাহান শহরে হামলা হয়।
কয়েক দশকব্যাপী শত্রæতা, যার জের ধরে আগে দুই দেশের মধ্যে ছায়া যুদ্ধ ও গোপন অভিযান হতো, সেটিই এখন প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নিয়েছে। সবশেষ আঘাত ও পাল্টা আঘাত যে প্রকৃতিরই হোক না কেন উভয় পক্ষের জন্য আরো কিছু মৌলিক অগ্রাধিকার রয়েছে; যেমন প্রতিরোধ- একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য যেন নিজের মাটিতে আর হামলা না হয়। যদি হয় তাহলে মূল্য দিতে হবে এবং এটা হবে ক্ষতিকর। সে কারণেই আপাতত ওই অঞ্চলে এবং কাছে ও দূরের রাজধানীগুলোতে একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস বইছে।
ইসরায়েলের সবশেষ পদক্ষেপ, নিজেদের সহযোগীদের দিক থেকে সীমিত প্রতিশোধের আহ্বান, এখনকার জন্য উত্তেজনা কমিয়ে এনেছে। সবাই সর্বাত্মক যুদ্ধ বন্ধ চায়। কিন্তু এ শান্তি যে স্থায়ী হবে না- এমন সন্দেহের বাইরে কেউ নেই।
মধ্যপ্রাচ্যে এখনো আগুন জ্বলছে। গাজায় যুদ্ধ এখনো চলছে। অসংখ্য ফিলিস্তিনি হতাহতের শিকার হয়েছে। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের চাপের মুখে ইসরায়েল বড় আকারে মানবিক সহায়তার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিপর্যস্ত ওই ভূখণ্ডটি এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
হামাসের হাতে জিম্মিরা এখনো ফিরে আসেনি এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনাতেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল হামাসের শক্ত ঘাঁটি রাফায় ঢোকার হুমকি দিচ্ছে। এরই মধ্যে সেখানে হামলা চালিয়েছে। ত্রাণ সংস্থার প্রধান ও বিশ্ব নেতারা বলছেন এটি আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পুরো অঞ্চলে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক আছে যাকে বলা হয় ‘এক্সিস অব রেসিসট্যান্স’। লেবাননের হেজবুল্লাহ থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনের হুথি- সবাই প্রস্তুত। প্রতিদিনই হামলা চলছে। গত কয়েক সপ্তাহে অঞ্চলটির গভীর অন্ধকার বিপজ্জনক সময়েও তার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাইডেন প্রশাসনের মুখে কুলুপ : যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় তাদের প্রকাশ্যে মন্তব্য না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন থেকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে যেন সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদেরও চুপ থাকার খবরটিও সামনে এলো।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা দপ্তর, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং অন্য সংস্থার কর্মকর্তারা এ অভিযান নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, এ প্রসঙ্গে কথা না বলার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশ পেয়েছেন তারা।
এ মার্কিন কর্মকর্তারা আশা করছেন, ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ হামলা-পাল্টা হামলার চক্রটি গত শুক্রবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়