পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

বাতাসে আগুনের হলকা!

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলর ওপর দিয়ে। গতকাল শনিবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় পারদ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে- যা আবহাওয়াবিদদের ভাষায় ‘অতি তীব্র তাপদাহ’। উত্তাপের তীব্রতা এতটাই- রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। ফসল পুড়ে যাচ্ছে। গায়ে যে বাতাস লাগে, তা ছ্যাঁকা লাগার মতো অনুভূত হয়। ত্রাহি অবস্থা মানুষ ও প্রাণিকুলের। থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা, হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। অসহনীয় গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রচণ্ড এই তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন বয়স্ক, শিশু ও রোগাক্রান্ত মানুষ। সঙ্গে বিড়ম্বনায় শ্রমজীবী মানুষও। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রখর রোদে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তীব্র তাপদাহে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাই রোদ এড়িয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে তাপের তীব্রতায় হিটস্ট্রোকে গতকাল দেশের তিন জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
তাপপ্রবাহের মাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় গতকাল শনিবার থেকে দেশে হিট এলার্ট বা তাপপ্রবাহ সতর্কবাতা জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। ক্রমঊর্ধ্বগতির তাপদাহে জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন নগর-শহর। ঈদের ছুটির আমেজ শেষ না হওয়ায় যদিও রাজধানীতে এখনো মানুষের উপস্থিত কম। তার ওপর তাপের তীব্রতায় মানুষ আরো ঘরবন্দি রয়েছেন। নিতান্ত দরকার ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। এ কারণে নগরী প্রায় জনশূন্য। যানবাহনও অনেক কম দেখা গেছে। একই অবস্থা যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, টাঙ্গাইল, বরিশাল, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে। সবখানেই মানুষের উপস্থিতি কম। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে আগে মানুষের সমাগম এবং যানজট লেগে থাকলেও তা এখন প্রায় ফাঁকা।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে যতদূর সম্ভব তাপ এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। গায়ে পাতলা কাপড় পরতে হবে। ডায়াবেটিস ও প্রেসারের রোগীদের রোদে না যাওয়াই ভালো। এসব রোগী বাইরে বের হলে যদি সমস্যা মনে করেন; তাহলে দ্রুত ঠাণ্ডা জায়গায় যেতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে।
তাপমাত্রা পরিস্থিতি : আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে- ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপরই উচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়- ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ। সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়া খুলনা বিভাগে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল তাপমাত্রা। চড়েছে ঢাকার তাপমাত্রাও। গতকাল রাজধানীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি

সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩১ শতাংশ। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল তাপমাত্রা। রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ এবং ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরিশালে ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তবে চট্টগ্রামে তাপমাত্র কম রয়েছে- পারদের উচ্চতা এখানে ৩৩ দশমিক ৭ থেকে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, তাপমাত্রা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা হলেই তা অতি তীব্র তাপমাত্রা ধরা হয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে, তাপ এড়িয়ে চলতে হবে।
পূর্বাভাস : গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়ার তিন দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের বাকি জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটি জেলা, রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্ট অংশ এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামন্য বাড়তে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এছাড়া তাপপ্রবাহের মধ্যেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ২/১ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। পরবর্তী পাঁচ দিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এ বছর চৈত্র মাসের শুরু থেকেই তীব্র গরম পড়েছে। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। কোনো জায়গায় বাতাসের তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় ৩-৫ দিন অতি বাড়ে এবং আর্দ্রতাও বেড়ে যায় তাই।
হিটস্ট্রোকে তিন জেলায় ৩ জনের মৃত্যু : হিটস্ট্রোকে গতকাল শনিবার তিন জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গাজীপুরের কোনাবা?ড়ী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাজীপুর : জেলার কোনাবা?ড়ীতে মানু?ষিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মে?ডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পা?ঠায় পু?লিশ। নিহত সোহেল রানা (৪১) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এনায়েতপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
পু?লিশ জানায়, সকালে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে কা?শিমপুর কারাগার রুটে উলঙ্গ অবস্থায় তাকে দেখতে পায় কোনাবা?ড়ী থানাপু?লিশ। পরে তাকে এক রিকশাচালকের মাধ্যমে এনায়েতপুর পা?ঠিয়ে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই ওই ব্যক্তি কা?শিমপুর কারাগার রুটে এসে আবার ঘোরাফেরা করতে থাকে। দুপুরে তার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পু?লিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পু?লিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। জিএম?পি কোনাবা?ড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, প্রাথ?মিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন তিনি। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পাবনা : শহরের রূপকথা রোডে একটি দোকানে চা খাওয়ার সময় হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন সুকুমার দাস (৬০) নামের এক ব্যক্তি। তিনি শহরের শালগাড়ীয়া জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা।
জানা গেছে, দুপুরে শহরের রূপকথা রোডে একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় হিটস্ট্রোক করেন তিনি। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল জেলার ঈশ্বরদীতে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, কয়েকদিন ধরেই পাবনায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজকে রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, এ বছর এত তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি। এ তাপমাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) : দামুড়হুদায় সকালে ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় হিটস্ট্রোকে জাকির হোসেন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জাকির হোসেন (৩৩) দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেন ছেলে। এছাড়া তিনি ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্বজনরা জানান, সকালে ধানের ক্ষেতে সেচ দিতে যান জাকির হোসেন। ঘণ্টাখানেক পর খবর পাওয়া যায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে মাঠের অন্য কৃষকার তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপা জানান, এক রোগী স্ট্রোকজনিত কারণে হাসপাতালে আসে। কিন্তু হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়