মির্জা ফখরুল : দলমত নির্বিশেষে ‘গণঐক্য’ গড়ার আহ্বান

আগের সংবাদ

পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ প: সুনামগঞ্জে একসঙ্গে ৩ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ

পরের সংবাদ

এখনো মুক্তিপণ চূড়ান্ত হয়নি : দুম্বা ছাগল আনছে দস্যুরা বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকদের জন্য জলদস্যুরা তীর থেকে দুম্বা ও ছাগল নিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে এখন নাবিকরা খাবার নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা করছেন না। তবে জাহাজে বিশুদ্ধ পানি কমে যাওয়ায়, সেটি নিয়ে তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। জিম্মি নাবিকদের বরাত দিয়ে জাহাজটির মালিকপক্ষ ও নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ নাবিক ও জাহাজের বিষয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে আলাপ অব্যাহত থাকলেও মুক্তিপণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘মুক্তিপণ চূড়ান্ত হয়েছে’ শীর্ষক খবর প্রচারের পর কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব চেষ্টা করছি জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করার। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। জলদস্যুরা যে তৃতীয়পক্ষ নিয়োগ করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তবে এখনো তারা মুক্তিপণের বিষয়টি সামনে আনেনি। তবে আমরা এমন কিছু হতে পারে ধরে নিয়ে অগ্রিম কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছি। বিমাকারী প্রতিষ্ঠান প্রোটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি (পিঅ্যান্ডআই) এবং ক্রাইসিস টোয়েন্টিফোর জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে কাজ করছে।
গত ১২ মার্চ জিম্মিদশা শুরু হওয়ার পর থেকে জাহাজে মজুত থাকা খাবারে ভাগ বসায় জলদস্যুরা। এতে দ্রুতই কমতে শুরু করে সংরক্ষিত খাবার। জিম্মি জাহাজের নাবিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে নাবিকদের সংগঠন সূত্র জানায়, খাবার নিয়ে এখন খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই। কারণ জলদস্যুরা জাহাজে ছাগল ও দুম্বা আনছে। নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, দস্যুরা নিজেদের স্বার্থেই খাবার নিয়ে আসে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজেও তেহারি জাতীয় খাবার

নিয়ে আসার খবর পেয়েছি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সাধারণত জাহাজে হিমায়িত ও শুকনো- দুই ধরনের খাবার থাকে। যাত্রাপথে কতদিন সময় লাগবে, তার ওপর নির্ভর করে জাহাজে খাবার রাখা হয়। এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ছিল। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে। তিনি বলেন, জলদস্যুরা কোনো জাহাজ জিম্মি করলে সাধারণত তারাই খাবার সরবরাহ করে থাকে। তবে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
এদিকে জাহাজে খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলেও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। কারণ জলদস্যুরা জাহাজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে জাহাজে যা বিশুদ্ধ পানি আছে, তা রেশনিং করে চলতে হচ্ছে। সপ্তাহে দুই দিন এক ঘণ্টা করে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন নাবিকেরা। জাহাজটি জিম্মি করার সময় সেখানে মজুত ছিল প্রায় ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি। এ পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে ধারণা ছিল নাবিকদের। জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজে মজুত খাবার পানি ফুরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে নাবিকদের রেশনিং করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন নাবিকেরা।
জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজে পানি রেশনিং করা হচ্ছে। জাহাজে নাবিকদের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ তীর থেকে দস্যুরা জাহাজে খাবার নিয়ে আসছে। জিম্মি নাবিকেরা সুস্থ আছেন। মিজানুল জানান, ১৩ বছর আগে এমভি জাহানমনিকে যেভাবে দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই কাজ করা হচ্ছে। নাবিকরা মুক্তি পেলে তাদের বিমানযোগে দেশে আনা হবে। এছাড়া জাহাজ ফিরিয়ে আনার জন্য অন্য একটি দলকে পাঠানো হবে, সেটিও ঠিক করে রাখা হয়েছে। আমরা আশা করছি, ঈদের আগে নাবিকদের মুক্ত করা যাবে।
প্রসঙ্গত গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের ওই কয়লাবাহী জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ২৩ নাবিককে জিম্মি করে। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়