মির্জা ফখরুল : দলমত নির্বিশেষে ‘গণঐক্য’ গড়ার আহ্বান

আগের সংবাদ

পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ প: সুনামগঞ্জে একসঙ্গে ৩ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নির্দেশ : গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অনুমতি দিতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দুর্ভিক্ষ এড়াতে ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় বাধাহীন ত্রাণ প্রবাহ সক্রিয় করতে ইসরায়েলকে সর্বসম্মতভাবে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই ‘অবিলম্বে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার বিধান’ অনুমোদন করতে হবে। গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করার পর আইসিজের এমন আদেশ এলো। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির নতুন আলোচনার অনুমোদন দিয়েছেন। কাতারের রাজধানী দোহা ও মিসরের রাজধানী কায়রোতে এই আলোচনা হবে।
গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে জানুয়ারিতে ইসরায়েলকে আদেশ দেয় দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালত। আদালতের কাছে এই আদেশকে আরো জোরদার করার আর্জি জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপরই সর্বশেষ এই আদেশ জারি করল আইসিজে। তবে আইসিজের আদেশ মানায় আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা এ আদালতের নেই।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন গেøাবাল ইনিশিয়েটিভ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, গাজায় একটি ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই ‘উচ্চ মাত্রার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন’ আর মে মাস শেষ হওয়ার আগেই ভূখণ্ডটির উত্তরাংশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যাবে বলে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
আদেশে আইসিজে বলেছে, গাজা ‘এখন আর শুধু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন না’ বরং ‘দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসছে’ আর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী অপুষ্টি ও পানি শূন্যতায় ভুগে এরই মধ্যে ২৭ শিশুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক গত সপ্তাহে বলেন, গাজায় ক্ষুধা, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি মানবিক ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশের বিষয়ে ইসরায়েলের ব্যাপক বিধিনিষেধ, জনসংখ্যার অধিকাংশের বাস্তুচ্যুতি আর এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করার ফল।
আন্তর্জাতিক আদালত তুর্কের এসব মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেছে। আদালত বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবাগুলো ও মানবিক ত্রাণ সহায়তার বাধাহীন প্রবাহ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জাতিসংঘের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সব পদক্ষেপ নিতে হবে। যে সব সহায়তা সবচেয়ে বেশি দরকার তার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, আশ্রয় ও পোশাকের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ওষুধ। রায়ে আরো বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে তাদের সামরিক বাহিনী গণহত্যা ঘোষণার অধীনে গাজায় ফিলিস্তিনিদের কোনো অধিকার লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করবে না।
গাজায় প্রায় ৬ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার ৬২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ হাজারের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে। আহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা অন্তত ৭৫ হাজার।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফিরছে ইসরায়েল : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির নতুন আলোচনার অনুমোদন দিয়েছেন। কাতারের রাজধানী দোহা ও মিসরের রাজধানী কায়রোতে এই আলোচনা হবে। গতকাল শুক্রবার নেতানিয়াহুর দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চেয়ে তোলা প্রস্তাব পাস হয়। সেদিন এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দোহায় অবস্থানরত আলোচনাকারী দলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন নেতানিয়াহু।
মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার পরেরদিন মঙ্গলবার জানায়, যুদ্ধবিরতির আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে যুদ্ধরত দুই পক্ষ এবং মধ্যস্থতাকারীরা এ ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য জানায়নি।
নেতানিয়াহুর দপ্তর আরো জানিয়েছে, তিনি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নেয়ার সঙ্গে নতুন আলোচনা নিয়ে কথা বলেছেন। তবে বার্নেয়া নিজে দোহা অথবা কায়রোয় যাবেন কিনা সেটি স্পষ্ট করা হয়নি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি অন্তত ২৫০ জনকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করা হয়। সেদিন থেকেই ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী চলা যুদ্ধবিরতিতে ১০৫ জনকে ছেড়ে দেয় হামাস। ইসরায়েলের বিশ্বাস হামাসের কাছে এখনো ১৩০ জিম্মি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।
রাফায় প্রবেশের প্রস্তুতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর : ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজার রাফায় আশ্রয় নেয়। এটি মিসর সীমান্তবর্তী এলাকা। এর মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজাকে ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এখন আন্তর্জাতিক সব চাপ উপেক্ষা করে রাফায়ও অভিযান চালাবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি সেনাদের পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, একমাত্র সামরিক চাপের মাধ্যমেই তাদের মুক্ত করা সম্ভব। এছাড়া রাফায় সেনাবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। রাফায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা এরই মধ্যে উত্তর গাজা ও খান ইউনিস জয় করেছি।
উল্লেখ্য ইসরায়েলের হামলায় গাজা উপত্যকায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪২ : সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আলেপ্পোয় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চালানো এ হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ৫ সদস্য আছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিরিয়ার দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আলেপ্পোয় ইসরায়েল ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর হামলায় বহু বেসামরিক ও সামরিক সদস্য নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আলেপ্পোর গ্রাম এলাকায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। একই সময় সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ ও আলেপ্পোর পশ্চিমাঞ্চল থেকে আলেপ্পো শহর ও এর আশপাশে ড্রোন হামলা চালানো হয়। ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো’ এসব ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে সিরীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে। এসব হামলায় কতজন নিহত হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেনি মন্ত্রণালয়টি। হতাহতের ঘটনাগুলো ইসরায়েলি হামলায় না জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর হামলায় হয়েছে তা-ও পরিষ্কার করেনি তারা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী সিরিয়ায় হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটিতে তারা হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশটি। সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ও কিছু বাহিনীর বিরুদ্ধেও হামলা চালিয়েছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষ নেয় প্রতিবেশী ইরান। গৃহযুদ্ধে জয় পেতে আসাদ বাহিনীকে সহায়তা করে ইরান ও রাশিয়া। এরপর থেকে সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব বাড়তে থাকে। হিজবুল্লাহসহ ইরানের মিত্র যোদ্ধারা সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং রাজধানী দামেস্কের আশপাশে বিশাল সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে পরস্পরের বিরুদ্ধে গোলাবর্ষণ করে চলছে। এসব পাল্টাপাল্টি হামলায় এরই মধ্যে শতাধিক সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। ২০০৬ সালে দুই পক্ষ মাসব্যাপী এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। তারপর থেকে এবারই দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়