আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

আগের সংবাদ

বাজার তদারকি দৃশ্যমান নয়

পরের সংবাদ

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে নেই আশার আলো

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও তা ‘কানা গলিতে আটকে গেছে’। হামাসের দাবি-দাওয়ার কারণে ইসরায়েল নিজেদের প্রতিনিধিদের দোহা থেকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধানের ঘনিষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, গাজার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ‘রমজানে এই যুদ্ধকে আরো উসকে দেয়ার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে’ কূটনৈতিক নাশকতা চালাচ্ছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত সোমবার পাস হওয়া প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির শর্ত রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজানে গাজায় ৬ সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে দোহায় আলোচনা শুরু হয়। সেখানে বলা হয়, ইসরায়েল ৬ সপ্তাহ গাজায় অভিযান বন্ধ রাখবে। বিনিময়ে এখনো হামাসের হাতে বন্দি ১৩০ ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ৪০ জনকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু হামাস গাজা যুদ্ধের অবসান এবং সেখান থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার দাবি করছে। এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে ইসরায়েল বলেছে, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না করা পর্যন্ত তাদের এই অভিযান বন্ধ হবে না। যুদ্ধের শুরুর দিকে ইসরায়েল যখন গাজার উত্তরে স্থল অভিযান শুরু করে তখন ওই অঞ্চলে বসবাস করা লাখ লাখ ফিলিস্তিনি প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যায়। হামাস ওই সব বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তরে ফেরার অনুমতি দেয়ার দাবিও জানিয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে, প্রথম যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল থেকে যত ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবার তারা এর দ্বিগুণ বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি আছে। কিছু কিছু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে ফেলার অনুমতিও দেবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, হামাস চুক্তির শর্ত হিসেবে ‘বিভ্রান্তিকর’ সব দাবি জানিয়েছে। তাতে বোঝাই যাচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে আগ্রহী নয়।
এদিকে, এখনো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের প্রায় ৩০০ স্বজন ও তাদের সমর্থকরা মঙ্গলবার তেল আবিবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তরের বাইরে জড়ো হন এবং জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে যে কোনো মূল্যে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার দাবি জানান। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ নিজেদের খাঁচায় বন্দি করে প্রতিবাদ জানান। কারো কারো হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে জিম্মি স্বজনদের ছবি। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘কোনো মূল্যই অনেক বেশি নয়’।
ইসরায়েল যেমন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা আটকে যাওয়ার জন্য হামাসকে দায়ী করছে। তেমনি হামাস বলছে, আলোচনা চলাকালেও ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে আলোচনার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। উভয় পক্ষ যখন পরস্পরকে দায়ী করায় ব্যস্ত সে সময়ে গাজার লাখ লাখ সাধারণ ফিলিস্তিনি প্রতিনিয়ত প্রাণ বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছেন। ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘসহ নানা মানবাধিকার সংস্থা।
গাজায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি : গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়াযান খান ইউনিসের একটি হাসপাতালকে ঘিরে রেখেছে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে আরো একটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সেখানে হামাসকে নির্মূলের অজুহাতে প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৪১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৭৪ হাজার ৭৮৭ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
লেবাননে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা : দক্ষিণ লেবাননের একটি গ্রামে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার জবাবে ইরানসমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের কিরিয়াত শোমোনা শহরে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালিয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরের দিকে এসব হামলায় অন্তত এক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার উত্তর লেবাননের দুটি শহরের কাছে একাধিক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। হিজবুল্লাহর জরুরি ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে ওই বিমান হামলা চালানো হয়। এতে হাব্বারিয়াহ গ্রামে অন্তত ৭ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর অন্তত ৩ যোদ্ধা রয়েছেন।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পর ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা শুরু করে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। পাল্টাপাল্টি হামলায় এরই মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর অনেক সদস্যের প্রাণহানি ঘটেছে। লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় প্রান্তের লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়