শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

৭ই মার্চ কেন একতরফা স্বাধীনতা ঘোষিত হয়নি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনেক বিশ্লেষক অভিযোগ উত্থাপন করেন যে, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এত অধিকসংখ্যক বাঙালি হত্যা করার সুযোগ পেত না। ওই সভায় নির্দেশ দিলে তারা ক্যান্টনমেন্ট দখল করত। এ কথাগুলো যে মারাত্মক ভ্রান্তি তা বিশ্লেষণে বোঝা যাবে।
৭ই মার্চের পূর্বাপর কি ঘটনাবলি ঘটেছিল? পহেলা মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের আহুত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে যে গণবিপ্লব দেখা দেয় সে প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘ভদ্র’ গভর্নর অ্যাডমিরাল আহসানকে সরিয়ে লে. জে. সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে নতুন গভর্নর হিসেবে নিযুক্তি দেন। তিনি প্রেসিডেন্টকে ঢাকায় আসা ও অধিবেশনের নতুন তারিখ ঘোষণার অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তা না করায় তিনি পদত্যাগ করেন এবং একটি সিগনাল বার্তা পাঠান। বার্তাটিতে বলা হয়, ‘এ সমস্যার কোন সামরিক সমাধান নেই।… সামরিক সমাধান করতে হলে অজস্র নিরপরাধ সিভিলিয়ান মারা যাবে। আমি এটা মেনে নিতে পারি না। তাই আমি পদত্যাগ করছি।’
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাধ্য হয়ে জেনারেল টিক্কা খানকে ৬ই মার্চ গভর্নর নিয়োগ দেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১০ই মার্চ রাজনৈতিক

নেতৃবৃন্দের গোলটেবিল আহ্বান করেন। বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ৬ই মার্চ গভীর রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোনে অনুরোধ করেন, ‘আমি আশ্বাস দিতে পারি যে, জনগণের কাছে আপনার প্রদত্ত ওয়াদার চেয়ে আরো বেশি কিছু আপনি পেতে যাচ্ছেন।’
৭ই মার্চ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড সকালে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে একান্ত বৈঠকে বলেন, ‘পূর্ববাংলায় স্বঘোষিত স্বাধীনতা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না।’ সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে সাহেবজাদা ইয়াকুব বলে পাঠান ‘একতরফা স্বাধীনতা ঘোষিত হলে শাসন করার জন্য এবং শাসিত হওয়ার জন্য কেউ থাকবে না।’ রাইফেল, কামান, ট্যাঙ্ক, ভারী অস্ত্র নিয়ে রমনা পার্কে পূর্বেই বেলুচ রেজিমেন্ট অবস্থান নিয়েছিল। লে. জে. কামাল মতিনউদ্দীন-এর ভাষ্যনুসারে, প্রকৃতপক্ষে জেনারেল টিক্কার হাতে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ইউনিফর্ম পরিহিত ১২ হাজার সৈন্য, ইনফ্যান্টি ডিভিশন ও আর্মার্ড রেজিমেন্ট।
৭ই মার্চের পূর্ব পর্যন্ত বাঙালি সেনা-অফিসারদের মধ্যে শপথ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ‘বিদ্রোহ’ করার মানসিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। তাদের মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা ছিল কিন্তু সামরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী বলেছেন, ‘২৫শে মার্চ তাদের উপর আক্রমণ হলেই কেবলমাত্র তারা বিদ্রোহ করেন।’
জেনেভা কনভেনশন অনুসারে ৭ই মার্চ স্বাধীনতা ঘোষিত হলে প্রথম আক্রমণকারী হিসেবে বাঙালিদের চিহ্নিত করে নিশ্চিহ্ন করলে বিশ্বজনমত পাকিস্তানের পক্ষেই থাকত। বঙ্গবন্ধু একজন ঋদ্ধ ও প্রাজ্ঞ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে জানতেন, একটি অখণ্ড রাষ্ট্র কাঠামোর অভ্যন্তরে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনে মূল শর্তই হলো সর্বপ্রথম আক্রমণকারী না হওয়া। নাইজেরিয়ার বায়াফ্রার বিদ্রোহ বিচ্ছিন্নতাবাদ হিসেবে বিশ্বে চিহ্নিত হয়, যার ফলে সেই বিদ্রোহ স্বাধীনতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তান বাহিনী যখন প্রথম আক্রমণ করল কেবলমাত্র তখনই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানতেন, জনগণ স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেই। এমনকি বাঙালি সামরিক বাহিনীও না। ৭ই মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধ-পদ্ধতি, গেরিলা যুদ্ধে ও জনযুদ্ধের রূপরেখা ঘোষণা করলেন তারপর হতে বাঙালি জাতি সশস্ত্র যুদ্ধ-প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
আসগর খান লিখেছেন : “মার্চের প্রথম সপ্তাহে আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। রওয়ানা হওয়ার আগে ভুট্টোকে জানিয়েছিলাম ঢাকা যাচ্ছি। তিনি আমাকে করাচি হয়ে যেতে বললেন। করাচি গেলাম কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন না। ঢাকায় মুজিবের সঙ্গে আমার তিনটি মিটিং হয়েছে। মুজিব জানিয়েছিলেন, তিনি নিশ্চিত যে, ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না এবং পূর্ব পাকিস্তানে শক্তি প্রয়োগ করবেন। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের জন্য যখন তারা আন্দোলন করেন তখন ভুট্টো-ইয়াহিয়া কোথায় ছিল?”
আসগর খান আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘বাঙালিদের তারা কখনো মানুষ মনে করেনি। মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তান যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিন্তু তিনি যাননি। কেন যাননি, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আমার ধারণা তার ও তার ঘনিষ্ঠজনদের ধারণা হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান গেলে তাকে হত্যা করা হবে। তা হলে ভবিষ্যতটা কী?
বঙ্গবন্ধু বললেন, ইয়াহিয়া খান প্রথমে ঢাকা আসবে, তারপর আসবেন এম এম আহমদ এবং তারপর ভুট্টো। ইয়াহিয়া খান এরপর সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দেবেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যদি গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে পাকিস্তানি বাহিনী অথবা তার লোকই তাকে হত্যা করবে। তারপর পাকিস্তান শেষ। আশ্চর্য নয় কি তিনি যা বলেছিলেন ঠিক তাই ঘটছে।”
আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘বঙ্গবন্ধুকে ভুট্টোর পত্র’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়