শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

সহযোগীসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার : ডাক্তার পরিচয় ছাড়া ঈশিতার সবই ভুয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানী, কখনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা গবেষক। আরো রয়েছে কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মানবাধিকারকর্মীসহ অসংখ্য পরিচয়। এত সব পরিচয় যার ঝুলিতে, সেই প্রতারক ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। অথচ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ালেখা করেছেন তিনি। চিকিৎসক হিসেবেই নাম-যশ কামাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে নাম লিখিয়েছেন প্রতারকের খাতায়। গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর মিরপুর-১ থেকে ‘আন্তর্জাতিক প্রতারক’ ডা. ঈশিতাকে গ্রেপ্তারের সময় তার সহযোগী মো. শহিদুল ইসলামকেও কব্জায় নিয়েছে র‌্যাব।
এরপর বিকালে কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খোন্দকার আল মইন জানান, গ্রেপ্তারের সময় ঈশিতার কাছ থেকে ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ ছাড়াও ইয়াবা ও বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজন প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছেন।
ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতা ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-০৬) এমবিবিএস কোর্স শেষ করেন। ২০১৪ সালের জুনের শুরুতে

মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি সরকারি সংস্থায় চিকিৎসক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। চার মাস চাকরির পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুতও হন।
র‌্যাব জানিয়েছে, ভুয়া পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে বিভিন্ন ধরনের ভুয়া নথিপত্র তৈরি করেছেন ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতা। জায়গা অনুযায়ী পরিচয়ের স্বপক্ষে এসব ভুয়া নথিপত্র দেখাতেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি তৈরি করেছেন এমপিএইচ, এমডি, ডিও ইত্যাদি ডিগ্রির ভুয়ার সনদ। আবার চিকিৎসাবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, আর্টিকেল বা থিসিস পেপারও প্রকাশনা করেছেন। র‌্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত অনলাইনে পাওয়া বিভিন্ন গবেষণাধর্মী প্রকাশনা সম্পাদনা করে তিনি নিজের নামে চালিয়ে দিতেন।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঈশিতা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিদেশ থেকে প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন বলে প্রচার করতেন তিনি। এর মধ্যে ২০২০ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে হোটেল পার্ক অ্যাসেন্টে অনুষ্ঠিত জিআইএসআর ফাউন্ডেশনের দেয়া ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সপিরেশনাল উইমেন অ্যাওয়ার্ড (আইআইডব্লিউ ২০২০)’, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, ভারতের ‘টেস্ট জেম অ্যাওয়ার্ড ২০২০’, থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে অংশ নিয়ে ‘আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট এন্ড রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড’- এরকম নানা পুরস্কার পাওয়ার তথ্য প্রচার করেছেন ডা. ঈশিতা, যার কোনোটিই আদতে তিনি পাননি। শুধু তাই নয়, প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া নথি ব্যবহার করে ২০১৮ সালে জার্মানিতে ‘লিন্ডে ও নোবেল লরিয়েট মিটে (মেডিসিন)’ অংশও নেন তিনি।
র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ডা. ইশরাত ঈশিতা করোনা মহামারিকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন। এ বিষয়ে আলোচক ও প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। অনলাইনে করোনা প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন ও সার্টিফিকেট বিতরণের প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। একইসঙ্গে অনিবন্ধিত ও অননুমোদিত বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো আন্তর্জাতিক প্রতারণামূলক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। এই আন্তর্জাতিক প্রতারণা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জড়িতরা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভুয়া অ্যাওয়ার্ড দিতেন। এরই মধ্যে বুরুন্ডি ও আফগানিস্তানে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাঙ্ক ব্যাজ ও পদ অর্জনেরও চেষ্টা চালান ঈশিতা। ফিলিপাইনের একটি ওয়েবসাইট থেকে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদটি অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন ইত্যাদি সদস্য পদের ভুয়া সনদ তৈরি করেও প্রচারণা চালাতেন।
র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এড়াতে ঈশিতাকে ‘বস’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদার। তিনি টেলিফোনে, অনলাইনে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ঈশিতার পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করতেন।
গ্রেপ্তারকৃত মো. শহীদুল ইসলাম দিদার ২০১২ সালে একটি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা (ইঞ্জিনিয়ার) সম্পন্ন করেন। পরে তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমাও সম্পন্ন করেন। বর্তমানে একটি পোশাক কারখানায় কমার্শিয়াল ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনিও ফিলিপাইনে একই ওয়েবসাইট থেকে অর্থের বিনিময়ে মেজর জেনারেল পদ ধারণ করেছেন। নিজেকে আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক), ইয়াং ওয়ার্ল্ড লিডার ফর হিউম্যানিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ফাউন্ডার (প্রতিষ্ঠাতা) বা কর্ণধার হিসেবে উপস্থাপন করেন। একইভাবে তিনি দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার দূত বা অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন।
ব্রিফিংয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, তাদের আরো বেশ কয়েকজন সহযোগী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়