রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির হস্তক্ষেপে লাগাম

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দল এড়াতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য দলীয় মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়-স্বজনদের লাগাম টেনে ধরার কৌশল নিয়েছে দলটি। নির্বাচনে প্রার্থী না হতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান। এর মধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে যারা মনোনয়ন দাখিল করেছেন তাদেরকেও সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। দলীয় নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়ে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এর মধ্যে নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী ও এমপিদের দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত জানাতে শুরু করেছেন। এদিকে দলের এমন সিদ্ধান্তে খুশি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, দলীয় এই কঠোর নির্দেশনা উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপিদের হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে ভূমিকা রাখবে। নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। প্রশাসনও চাপ মুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনাটি জানাতে মন্ত্রী ও এমপিদের নামে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দেশনার কথা সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমেও পুনরায় জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, তৃণমূলে দলের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতেই হাইকমান্ড এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না; কিংবা কাউকে সমর্থনও দেয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণ নির্বাচনটা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এই সুযোগে কিছু মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়-স্বজন- দেখা যাচ্ছে তাদের অনেকেই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সেইভাবে সম্পৃক্ততা নেই। দুলাভাই বা মামা এমপি সেজন্য তারা প্রার্থী হয়েছেন। অথচ দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই। এরা সেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে প্রার্থী হয়। কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এতে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। এবার যেন সেটা না হয়, সেজন্য আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনদের প্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন। এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে আমাদের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা জানিয়ে দিতে শুরু করেছেন। যারা এই সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিষয়ে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত স্বতন্ত্র এমপিদেরও মানতে

হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোরের সিংড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের। গত সোমবার এই ঘটনা ঘটে। যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। যাতে বিব্রত হয় আওয়ামী লীগ। অভিযোগ উঠেছে, দুলাভাই প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে শুরু করেছেন হাবীব। তার লোকজনও বেপরোয়া। হাবীব কোনোভাবেই চাননি দেলোয়ার প্রার্থী হয়ে তার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করুক। এরকম আরো বেশকিছু এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক তার খালাতো ভাইকে ধনবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। অন্য উপজেলা মধুপুরে তিনি প্রার্থী করেছেন তারই পছন্দের প্রার্থীকে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ওই দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন দলের সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে। নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় সংসদ সদস্য আনোয়ার আশরাফ খান প্রার্থী করেছেন তার শ্যালক মো. শরিফুল হককে। মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের ছোট ভাই বিমল শিকদার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। মাদারীপুর সদর আসনের এমপি শাজাহান খান তার ছেলে আসিবুর রহমান খানকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য শাহাদারা মান্নান তার আপন ভাই ও ছেলেকে দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি এম এ মান্নানের ছেলে শাহাদাত মান্নান চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই ইসরাফিল হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। নোয়াখালী-৬ আসনে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী তার ছেলে আশীক আলীকে হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীকে সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই নূর ই আলম নাজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ছেলে আশিক আব্দুল্লাহ আগৈলঝাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এসব প্রার্থী স্থানীয় প্রশাসনের ওপরও নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রশাসনও সরকারি নির্দেশনা অনুসারেই কাজ করছেন। ফলে প্রার্থীরা খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তারা আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থীদের ওপর নানাভাবে ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করছেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে।
এদিকে আওয়ামী লীগের এই নির্দেশনার পর তৃণমূলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। তাদের মতে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে উপজেলা নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ প্রভাবশালীদের প্রভাবমুক্ত। জনগণ ভোটেও অংশ নেবে। বিজয়ী হয়ে আসবে যোগ্য নেতৃত্ব। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোরের কাগজকে বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের মনোভাব বুঝেন। সেজন্যই তিনি এবার উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করেছেন। এখানে দলীয় প্রার্থী নেই, দলীয় প্রতীক নেই। ফলে সবাই যার যার মতো করে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু দলের কিছু সুবিধাবাদী এমপি ও প্রভাবশালী নেতা প্রভাব খাটিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী করেছেন। তারা প্রশাসনকেও ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখন যে নির্দেশনা দিয়েছেন, এতে আমরা খুশি হয়েছি। এখন দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারবেন। এমপি-মন্ত্রীরা আর কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। প্রশাসনও চাপমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনা করবে। যোগ্য নেতৃত্ব বিজয়ী হয়ে আসবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের কাগজকে বলেন, আগেও দলের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের আমরা বারবার সতর্ক করেছি। এবার দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা সাংগঠনিকভাবে জানানো হচ্ছে। সব মন্ত্রী ও এমপিকে এই নির্দেশনা জানানো হচ্ছে। আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ উপজেলা নির্বাচন চাই।
এর আগে গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে তিনি উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয়দের প্রার্থী হওয়া মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। তাদের দলীয় প্রধানের নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক সম্পাদকদের কথা বলার নির্দেশনাও দেন তিনি।
অপর একটি সূত্র জানায় আগামী ২ মে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে। ওই অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হতে পারে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরবেন। প্রভাব বিস্তার থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। এ ছাড়া শিগগিরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরও বৈঠক হতে পারে। সেখানেও বিষয়টি আলোচিত হবে। নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সরাসরি বহিষ্কারের বিধান রয়েছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়