পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

উপজেলা ভোটে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না জাপা!

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েও প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে সম্প্রতি ভাগ হয়ে যাওয়া জাতীয় পার্টির (জি এম কাদের ও রওশন এরশাদ) উভয় অংশই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিলেও তৃণমূল নেতাদের অনাগ্রহের কারণে প্রার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনে ভরাডুবির পর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ফলে অর্থ নষ্ট করে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা দিয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে। দলটির মাহসচিব (কাদেরপন্থি) মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হওয়ার গ্যারান্টি না পাওয়ায় আমাদের ভালো প্রার্থীরা এগিয়ে আসছে না।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ২৬টি আসন ছেড়ে দিলেও জাপার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে যান। ছাড়ের ৯টি আসনে জামানতও হারাতে হয়েছিল জাপার প্রার্থীদের। লাঙ্গলে ভোট পড়ে মাত্র ৪ শতাংশ। যা ইতিহাসের সর্বনি¤œ। ছাড়ের বাইরে ২৩৯টি আসনের মধ্যে ২৩৫টিতেই জামানত হারান লাঙ্গলের প্রার্থীরা। এরপর মার্চে হওয়া দুই সিটি করপোরেশন, ৯ পৌরসভা এবং ১৩ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মাত্র দুটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছিল জাপা। সেখানেও জামানত রক্ষা করতে পারেননি তারা।
জাতীয় পার্টির দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত তিন ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও গতকাল পর্যন্ত দলটির মাত্র ৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ৩টি, দিনাজপুর, নরসিংদী, খাগড়াছড়ি সদর, বরিশালের সদর ও মূলাদীতে ১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে। অথচ, বিগত উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সাড়ে ৪শ উপজেলায় লাঙ্গল মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেয়া হয়েছিল। যদিও সে নির্বাচনে রংপুরের পীরগাছা ও দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ উপজেলায় ২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
দলের এই প্রার্থী সংকটের বিষয়ে জাপার একজন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, নির্বাচনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না জাতীয় পার্টির (জাপা) তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর তৃণমূল নেতাকর্মীরা একেবারে হতাশাজনক পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত। আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের কাছে টানতে পারছেন না। এ কারণে অনেক ভালো প্রার্থী থাকলেও তারা ফরম নিতে আগ্রহী নন। এই প্রার্থীরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সমর্থন কিংবা নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম উচ্ছাস না থাকায় কেন শুধু শুধু অর্থ নষ্ট করে তারা নির্বাচন করবেন। তাছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু কিংবা নিরপেক্ষ হবে, এরকম কোনো আস্থাও আমাদের প্রার্থীদের নেই। মোট কথা, তারা বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এ কারণে আগের মতো আগ্রহ নিয়ে ভালো প্রার্থীরা এগিয়ে আসছে না।
জাপার দলীয় সূত্র জানায়- উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণার শুরুর দিকেই জাপার উভয় অংশই (জি এম কাদের ও রওশন এরশাদ) নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সারাদেশের তৃণমূলে বার্তা পাঠিয়ে নির্বাচনে আগ্রহী নেতাদের মাঠপর্যায়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়। পাশাপাশি দল থেকে যারা অতীতে নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের তৃণমূলে জনপ্রিয়তা আছে, তাদের সঙ্গে দল থেকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে যোগাযোগও করা হয়। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে মাঠেও নামেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাড়া না পেয়ে হতাশ হন তারা। সারাদেশের চিত্র প্রায় একই রকম বলে জানা যায়। এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠিত হয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে দুপক্ষের প্রতিযোগিতা হলেও তাদেরও কোনো প্রাথী নেই উপজেলা নির্বাচনে। যদিও শুরুতে রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
নির্বাচনে অনীহার বিষয়ে গাইবান্ধা জেলার জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, সারা জীবন দলের রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টির অবস্থান তলানিতে। একটা নির্বাচন করতে মিনিমাম একটা খরচ হয়ে থাকে। এ টাকাটাই পানিতে ফেলে দেয়া হবে। এখানে দুইটি বিষয় জড়িত। প্রথমত, লাঙ্গলের জন্য ভোট চাওয়াটা এখন বোকামো। আমাদের অবস্থান যাচ্ছেতাই। আর দ্বিতীয়ত, আমি ভোট বেশি পেলেই যে জয়লাভ করব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যাওয়ার পথে। আমাদের এলাকায় যতই গ্রহণযোগ্যতা থাকুক না কেন, আমরা নির্বাচনে গেলে জামানত রক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, তারা নিজেদের সংসদের সিট নিয়েই খুশি। নিজের স্ত্রীর সিটের জন্য দল বিক্রি করতেও পিছপা হন না। একটা সমাবেশ করতে পারেন না। এমন নেতৃত্ব দিয়ে দল চলে না।
কুমিল্লা জেলা জাপার এক নেতা (দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী) বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোট নিয়ে একধরনের অনীহা দেখতে পাচ্ছি। ফলে নির্বাচন করে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার কোনো মানে নেই। তাই নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব (জি এম কাদের) মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রশাসনে যারা আছে, সবার মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে আওয়ামী লীগ এবারসহ টানা ৪ বার ক্ষমতায় এসেছে। তাই সারাজীবন তারা ক্ষমতায় থাকবে। সরকার ও আওয়ামী লীগকে খুশি করতে হবে। এই আওয়ামী লীগকে প্রশাসনের খুশি করার কারণে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হবে বলে আমরা মনে করছি না। নির্বাচনে প্রার্থী সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের ভালো ভালো প্রার্থীরা এগিয়ে আসছে না। প্রার্থীদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা নির্বাচন করব, কিন্তু ভোট সুষ্ঠু হবে এর গ্যারান্টি কী? গ্যারান্টিটা তো আমরা দিতে পারছি না। এক্ষেত্রে আমরাও কিছুটা অসহায়। তাহলে উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কেন অংশ নিচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন আসলে একটা দন্তহীন বাঘ। কারণ, ভোটের সময় তাদের অধীনে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা থাকবে, তারা কথা না শুনলে বড়জোর সংশ্লিষ্ট বিভাগে শাস্তির জন্য রেফার্ড করতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিজেদের লোককে শাস্তি দেয় না।
প্রসঙ্গত, এবার দেশের ষষ্ঠতম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চার ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিন ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট নেয়া হবে আগামী ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় ২১ মে ভোট নেয়া হবে। তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোটের লড়াই হবে ২৯ মে। আর চতুর্থ ধাপের নির্বাচন ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়