রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

ফিলিস্তিনের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট আজ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের আর্জি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আজ শুক্রবার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তবে ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপে বাধ সাধতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই স্বীকৃতি পাবে। এদিকে গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আরো তীব্র হওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
কূটনীতিকরা জানান, ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে ভোট অনুষ্ঠান করবে। এই প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হোক।
নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব পাস হতে এর পক্ষে অন্তত ৯টি ভোট প্রয়োজন এবং স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া কিংবা চীনের কোনো ভেটো পড়া যাবে না। কূটনীতিকরা বলছেন, ফিলিস্তিনকে পূর্ণ জাতিসংঘ সদস্য করার পক্ষ সমর্থন করতে পারে নিরাপত্তা পরিষদের ১৩ সদস্য। ফলে প্রস্তাবটি আটকানোর জন্য শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে।
ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেয়ার মর্মে খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে আলজেরিয়া। দেশটি এ প্রস্তাবের ওপর বৃহস্পতিবার বিকালে ভোট অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ওই একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে অংশ নেবেন কয়েকটি দেশের মন্ত্রীরা।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মধ্য দিয়ে, জাতিসংঘের মাধ্যমে নয়। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড গত বুধবার বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবনা পাস করেই যে আমরা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে এগুনোর মতো একটি অবস্থানে পৌঁছতে পারব, তেমন সম্ভাবনা দেখি না।
ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘ সদস্য না হলেও ২০১২ সালে তারা জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য ফিলিস্তিন বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে তাদের এই আর্জি প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পেতে হবে এবং তারপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এর পক্ষে অন্তত দুই-

তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে।
গাজায় দুর্ভিক্ষ আরো তীব্র হচ্ছে : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এর ফলে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আরো তীব্র হওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, মনবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ গাজা উপত্যকাজুড়ে ‘তার গ্রাস আরো শক্ত করছে’ বলে ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান গত বুধবার সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে গাজায় সাহায্য বিতরণে বাধা দেয়া এবং ভূ-খণ্ডটিতে ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি। ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম শেষ করার জন্য একটি প্রতারণামূলক প্রচারণা চলছে, যার ওপর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার গুরুতর প্রভাব রয়েছে।
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি বা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কাজ পরিচালনা করা জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ার লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে। গাজায় সংস্থাটির প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।
৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইউএনআরডব্লিউএকে ভূ-খণ্ডটিতে সাহায্য কার্যক্রমের মেরুদণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লাজারিনি বলেন, গাজাজুড়ে মনবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ তার কবলকে আরো শক্ত করছে। উত্তরাঞ্চলে শিশু এবং ছোট শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যেতে শুরু করেছে। সেখানে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অপেক্ষায় আছে মানুষ। কিন্তু ইউএনআরডব্লিউএকে সেখানে সাহায্য দিতে এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংস্থাটির কর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছে। অবশ্য অভিযোগ সামনে আসার পরপরই লাজারিনি অভিযুক্ত কর্মীদের বরখাস্ত করেছেন এবং অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত ইউএনআরডব্লিউএর পৃথক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হাতে আটক কিছু কর্মীকে মিথ্যা বলতে চাপ দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। মূলত ইউএনআরডব্লিউএর সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক রয়েছে এবং সেই কর্মীরা গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে মিথ্যা বলতে চাপ দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধ শুরুর কারণে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে ইউএনআরডব্লিউএ তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন এবং তাদের অনেকে গাজায় পালিয়ে যান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়