রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

অন্দোলনে নেই, নির্বাচনেও নেই : সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা চায় বিএনপি তৃণমূল

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : একের পর এক নির্বাচন বর্জন করছে বিএনপি। রাজপথে নেই যুৎসই আন্দোলনের কর্মসূচি, নেতাদের কণ্ঠের হুঙ্কারও থেমে গেছে। তবে কি করতে চায় রাজপথের এ বিরোধী দলটি? ফের পাঁচ বছর অপেক্ষা? নাকি নতুন আন্দোলন? গন্তব্য কোন পথে? এসব নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিএনপির তৃণমুল। মামলা হামলার মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো দলটির পোড় খাওয়া এসব নেতাকর্মীরা জানতে চান দলের আগমীর দিনের পরিকল্পনা। তারা চান, একটি সঠিক পথরেখা।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নতুন করে আন্দোলন ও দলকে সুসংগঠিত করা ছাড়া দলটির সামনে বিকল্প নেই। অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাস পার হতে চললেও নতুন কোনো কর্মসূচি পালন করেনি দলটি। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো প্রশ্ন তুললেও সেটা দৃশ্যত আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য নতুন কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি। বিএনপিও এ সময় কোনো কর্মসূচি দেয়নি। সর্বশেষ তিন দফায় কালো পতাকা মিছিলের মতো কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এসব মিছিল বা সমাবেশে কর্মীরা থাকলেও নেতাদের উপস্থিতি সেভাবে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ঢাকায় কর্মসূচি নিয়ে সবশেষ দলটির দাঁড়াতে না পারা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
বিএনপির একাধিক নেতা আরাপকালে জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সিনিয়র নেতাদের অনেকেই নিজ এলাকায় ঈদ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফাঁকে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দলের আগামী দিনের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের রোডম্যাপের বিষয়ে হাইকমান্ড কি ভাবছে? রাজনৈতিক আলাপের সূত্র ধরে এ সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনকি অনেকে স্থানীয় পর্যায়ে মামলা হামলা উপক্ষো করে কীভাবে টিকে থাকবেন- এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিক নিদের্শনা ও সহযোগিতা চেয়েছেন। তবে সিনিয়র নেতারা ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ ছাড়া কর্মীদের তেমন কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।
সূত্রের দাবি- দলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নিজেরাই ধোঁয়াশায়। তারা তাকিয়ে আছেন লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শীর্ষ নেতারা ভার্চুয়ালি তার দেখা পেলেই সবার আগে দলের কর্ম-পরিকল্পনরা চূড়ান্ত করে শিগগিরই তৃণমূলে দিকনির্দেশনা পাঠানোর তাগিদ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতার ভাষ্য- তৃণমূল নেতারা জানতে চায় বিএনপি এখন কি করবে? অথচ এ প্রশ্নের সঠিক জবাব আমাদের কাছেই নেই। তাই আপাতত তাদের ধৈর্য ধরতে বলা ছাড়া কিছুই করার নেই। সূত্র জানায়, গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শেষ পর্যায়ে মাঠের কর্মীদের চাওয়া পাওয়া প্রসঙ্গে আলাপ তোলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আবেকজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভীষণ কষ্টে আছে। এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের মুখে তারা অসহায় জীবনযাপন করছেন। এলাকায় গেলেই তারা জানতে চান- দল এখন কোন পথে যাবে? আন্দোলন কবে থেকে? তারা দিক নির্দেশনা চান।
এ সময় মির্জা ফখরুল স্কাইপিতে যুক্ত থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের অতি শিগগিরই দলকে সুসংহত করে আন্দোলন সংগ্রামের নতুন পরিকল্পনা ঠিক করা উচিত। এ সময় স্থায়ী কমিটির আরো দুয়েকজন নেতা তার কথায় সায় দিয়ে বলেন, একদম সঠিক; তৃণমূল কর্মীদের কথার কোনো জবাব নেই আমাদের কাছে। দল এভাবে চলতে পারে না। আমরা চুপ থাকলে, কর্মীরা হতাশ হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে যাবে। দল এক সময় কর্মীশূন্য হয়ে পড়বে। সবার বক্তব্য শেষে তারেক রহমান বলেন, আগামী বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা পর্যালোচনা করব।
সূত্র জানায়, দলকে সুসংগঠিত করতে বিএনপির নেতারা যে যার জায়গা থেকে কাজ করছেন। নিয়ম করে অসুস্থ ও সদ্য কারামুক্ত নেতাদের বাসায় গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলের ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর শীর্ষনেতা, বিশিষ্ট একাধিক নাগরিকের সঙ্গে আলোচনা করছেন। জনগণের সামনে নতুন করে কি ধরনের রাজনৈতিক কৌশল তুলে ধরবেন, এ নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলছেন। মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক কৌশল স্পষ্ট না হওয়ার কারণে মির্জা ফখরুল প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন কম। বিষয়টি নিশ্চিত হলেই তিনি আবার সক্রিয় হবেন।
বিএনপির আগামীর আন্দোলনের রূপরেখার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ভোরের কাগজকে বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়। এই পর্যায়টি অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে শেষ হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর মামলা হামলার খড়ক নেমে আসে। এ বাস্তবতা থেকে আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। কর্মসূচি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে; খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে মাঠের নেতাদের কাছে দিকনির্দেশনা পৌঁছে যাবে।
একের পর এক নির্বাচন বর্জন ও বিএনপির আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কৌশল আছে, বিএনপিরও আছে। আমরা সেটা নিয়ে ভাবছি। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি, অংশ নিয়েও তো দেখেছি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমরা নির্বাচনে যাই বা না যাই তাতে কি আসে যায়! যা হওয়ার তাই হবে। আমরা মনে করি না- আমরা ভুল করেছি। আমরা মনে করি, বিএনপি সঠিক পথেই ছিল এবং আছে। আগামী দিনে দল সুসংগঠিত হবে; রাজপথের আন্দোলন নতুন করে গতি পাবে।
তবে সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী হতে পারছে না তৃণমূল নেতারা। কর্মসূচি সফলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ের অভাবও দেখছেন তারা। বিএনপির দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক, তিনজন জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, একটি এক তরফা জাতীয় নির্বাচন হয়ে যাওয়ার চার মাস পার হওয়ার পরও যেহেতু কোনো আন্দোলন কর্মসূচি নেই; বলতে হবে দল এখন আন্দোলন শূন্য। আগামী জুন-জুলাই কিংবা আগস্ট সেপ্টেম্বরের আগে নতুন আন্দোলন শুরু হবে বলে মনেও হচ্ছে না। কারণ, শিগগিরই বর্ষা শুরু হয়ে যাবে, বর্ষাকালে আন্দোলন জমে না। নেতারা বলেন, নির্বাচনের পর কর্মীরা কিছুটা হতাশ হলেও সেটা এখন কেটে গেছে। তারা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কর্মসূচিতে রাজপথে নামতে চায়। অথচ কেন্দ্রীয় নেতারা নিশ্চুপ, আমরা কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছি না।
জানতে চাইলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ড বলেন, গণমানুষের যে দাবি এবং আশা-আকাক্সক্ষা সেখান থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বিএনপির। আবারো আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে লড়াইয়ে নামতে হবে। হাইকমান্ডের সঠিক দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
উপজেলা নির্বাচন বর্জন; শেষ সময়ের সিদ্ধান্তে অস্বস্তি : শেষ মুহূর্তে বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের নেতৃত্বের শেষ সময়ের সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে রয়েছেন। এখন তাদের নির্বাচন থেকে ফেরানো নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন নীতিনির্ধারকরা। কারণ, প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রার্থীদের ফেরানো না গেলে পরের ধাপগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে, তাতে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে অস্পষ্টতা ছিল লক্ষণীয়। এতে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় পার হওয়ার সাড়ে আট ঘণ্টা পর বিএনপি স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারও ১১ ঘণ্টা পর গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়। এর আগেই দলটির প্রায় অর্ধশত নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এখন তাদের নির্বাচন থেকে ফেরাতে সাংগঠনিক খড়গ আরোপসহ দলকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
বিএনপির নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি করল কেন, সে প্রশ্নে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি যে উপজেলা নির্বাচনে যাবে না- এ বার্তা এমনিতেই আছে, তা সবাই জানে। তবু এটি দলীয়ভাবে বলার দরকার, সে জন্য বলা হয়েছে, এটুকই। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক মাসুদুল আলম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত। এরপরও অনেক সময় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্থানীয় মতামতে ভিন্নতাও আসে। আমরা স্থানীয়ভাবে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়