গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : অর্থ আত্মসাৎ

আগের সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির হস্তক্ষেপে লাগাম

পরের সংবাদ

১৪ জনের মৃত্যু : টোল প্লাজায় উন্মত্ত ট্রাকের তাণ্ডব

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি (শহর) থেকে : টোল প্লাজায় টোল দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল একটি প্রাইভেটকার ও তিনটি অটোরিকশা। বিয়ে বাড়িতে যাবেন এসব গাড়ির যাত্রীরা। কিন্তু টোল প্লাজার মধ্যেই দুর্ঘটনায় ঝরে গেল নারী ও শিশুসহ ১৪ জনের প্রাণ। একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক দ্রুতগতিতে এসে চাপা দেয় গাড়িগুলোকে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় ঝালকাঠি শহরতলীর খুলনা-বরিশাল মহাসড়কের গাবখান সেতুর পূর্ব টোল প্লাজায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করেছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর প্রায় এক ঘণ্টা সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর বেলা সারে ৩টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, গতকাল দুপুরে বরিশালে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঝালকাঠি শহরের দিকে যাচ্ছিল একটি প্রাইভেটকার ও তিনটি অটোরিকশা। দুপুর ২টার দিকে গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল গাড়ি চারটি। এ সময় একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক (খুলনা মেট্রো ০৯৫৭) দ্রুতগতিতে এসে প্রাইভেটকার ও অটো রিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলো। ঘটনাস্থলে মারা যান অটোরিকশার ৬ যাত্রী। প্রাইভেটকারের ৭ আরোহীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরে তারাও মারা যান। নিহত ১৪ জনের মধ্যে চারটি শিশু, তিনজন নারী রয়েছেন। বাকি সাতজন পুরুষ। তাদের বাড়ি ঝালকাঠির জেলার রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া এবং পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়।
প্রত্যক্ষদর্শী গাবখান টোল প্লাজার কর্মী আবুল বাশার (৫০) বলেন, প্রাইভেটকার ও তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল। হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটি প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাকে চাপা দিলে কার ও অটো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে কি হয়ে গেল বুঝলাম না। শুধু রক্ত আর কান্না। তিনি বলেন, আমার ধারণা ট্রাকটি ব্রেক ফেল করেছিল। এ কারণে টোল প্লাজায় ব্রেক না করেই প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে সরাসরি যাওয়ার চেষ্টা করে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনায় মোট ১৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে প্রাইভেটকারে একই পরিবারের ছিল ৬ জন। হাসপাতালে নেয়ার পরে মারা যান ৪ জন এবং ঘাতক ট্রাকের ধাক্কায় উল্টে যাওয়া অন্য ট্রাকের নিচ থেকে ১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন মারা যায়। পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আরো একজন মারা যান।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ট্রাকটি সেতু থেকে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটায়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা বলেন, সেতুর পশ্চিম দিক থেকে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি দ্রুতগতিতে টোল ঘরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা ৩টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মোট্র- গ ৩৯-৫৭৪২) এবং ঘরের আসবাবপত্র বহনকারী অন্য একটি ছোট ট্রাককে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ৩ অটোরিক্সা এবং প্রাইভেট কারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় অটোরিকশার ৬ জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান (৩২), তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার (২৭), সাড়ে ৪ বছরের কন্যা সন্তান তাকিয়া, ১ বছরের ছেলে তাহমিদ, একই পরিবারের সদ্য বিবাহিত ইমরান (২৬) ও তার স্ত্রী নিপা (২২)। নিহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রাইভেটকার চালক দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের ইব্রাহিম ফকির (৩০), ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের শফিকুল মাঝি (৫০), নওয়াপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান সাদিক (১১), কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের নুরজাহান (৭), রাজাপুর থানার আনোয়ার (৫৫), গাবখানের শহিদুল ইসলাম (৪৫), সোহেল মাঝি (৩০)।
এ দিকে এ দুর্ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ব বরণকারীদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা জানিয়ে ঝালকাঠি থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়