গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : অর্থ আত্মসাৎ

আগের সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির হস্তক্ষেপে লাগাম

পরের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমাতে পরিবহন খাতে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্প এখনো চলমান। ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করা হচ্ছে মহাসড়কের লেন সংখ্যা। বিভিন্ন জায়গায় স্পিডগান দিয়ে নজরদারি করছে পুলিশ। সংশোধন করা হয়েছে নিরাপদ সড়ক আইনও। এরপরও প্রতি বছর সড়কে প্রাণহানির সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। বিশেষ করে ঈদের সময় একের পর এক বড় দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফরিদপুর ও ঝালকাঠিতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জনের প্রাণহানি নতুন করে এই প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল নজরদারি, সড়কের ত্রæটি ও বেপরোয়া গতি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেয়া ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে সড়কের গতি নিয়ন্ত্রণে গাইডলাইন প্রনয়ণ করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি করা না হলে সড়কের মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব হবে না।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে তাদের যে জনবল ও সরঞ্জাম রয়েছে- সেগুলো দিয়ে সারাদেশের প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারের মহাসড়কে নজরদারি করা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও আইন প্রয়োগ ও বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের কানাইপুরের তেঁতুলতলায় গত মঙ্গলবার বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জনসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মৃত্যুর পর জানা যায়, যে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে সেটির ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট নেই। মারা যাওয়া যাত্রীরা ছিলেন একটি ছোট ট্রাকে, যাতে যাত্রী পরিবহন আইনে একেবারেই নিষিদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে আসার পর বাসটির একটি চাকা গর্তে পড়ে। এতে সেটি আড়াআড়িভাবে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় ছোট ট্রাক দ্রুতগতিতে এসে বাসের মাঝামাঝি আঘাত করে। বিআরটিএর কোনো কোনো কর্মকর্তা বলছেন, বাসটির চালক দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও পারেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এরই মধ্যে বেড়িয়ে এসেছে এতোগুলো ভয়ংকর অনিয়মের চিত্র। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল বুধবার খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের গাবখান ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরো পাঁচটি গাড়িকে চাপা দিলে শিশুসহ ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। নিহতদের মধ্যে চার শিশু ও তিনজন নারী রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে পৌর এলাকার পশ্চিম প্রান্তে পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেপরোয়া গতিতে একটি ট্রাক টোল দেয়ার অপেক্ষায় থাকা তিনটি অটোরিকশা, একটি মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান এবং টোল আদায়কারী ও পথচারীকে চাপা দিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ওই পাঁচটি গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে ঘটনাস্থলে সাতজনের মৃত্যু হয়। আর আহত হন অন্তত ২০

জন। পরে তাদের হাসপাতালে নিলে আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়। ট্রাকটি রাজাপুর থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর আগের দিন (মঙ্গলবার) ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২৫ যাত্রী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে ঈদুল ফিতরে ১ হাজার ৯৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩০৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ০২২ জন। একই সময়ে ঈদুল আজহায় ১ হাজার ৮৮৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৬৮ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৭৮ জন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে সারাদেশে ৬২৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৬৮৪ জন। এসব দুর্ঘটনার শিকার মোটরযানের মধ্যে রয়েছে- জিপ ৩০টি, বাস-মিনিবাস ৯০টি, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ২০৪টি, পিকআপ ৪০টি, মাইক্রোবাস ১৯টি, অ্যাম্বুলেন্স ৪টি, মোটরসাইকেল ২০৪টি, ভ্যান ২৯টি, ট্রাক্টর ৩০টি, ইজিবাইক ৪১টি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ৪৪টি, অটোরিকশা ৭২টি ও অন্যান্য যান ১৪৮টিসহ ৯৫৫টি যানবাহন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়- ১৬১ জন। এরপরই রয়েছে ট্রাক দুর্ঘটনায়, নিহতের সংখ্যা ৮৫ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ রকম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ ভোরের কাগজকে বলেন, নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানা যাচ্ছে না। ঈদের সময় এই আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ঈদের আগে আমরা কিছুটা স্বস্তির যাত্রা দেখলেও ঈদের পর দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণ ঈদের পর নজরদারি কমে যায়। ফলে চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এছাড়াও দুর্ঘটনার পেছনে গাড়ি ও সড়কের ফিটনেস এবং চালকদের মানসিক অবস্থাও জড়িত। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ শনাক্ত করে প্রতিকারের অনেক সুপারিশও দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা কমাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। সবকিছু কাগজে-কলমেই থেকে যাচ্ছে। এমনকি সড়কে গর্তসহ যে ঝুঁকিপূর্ণ ত্রæটিগুলো থাকে সেগুলোও সময় মতো সংস্কার করা হয় না।
কাজী সাইফুন নেওয়াজ আরো বলেন, রাস্তা তৈরির পর সড়ক নিরাপত্তা পরিদর্শন করা হয় না। ফলে রাস্তাগুলো দুর্ঘটনাপ্রবণ রয়েই যায়। এর কারণ একটি প্রধান রাস্তা তৈরির পর প্রচুর সংযোগ সড়ক তৈরি হয়। ক্রমান্বয়ে দোকানপাট হয়, মানুষজনের আনাগোনা বাড়ে। এতে দুর্ঘটনাও বাড়ে। গাড়িগুলোর গতিসীমা মেনে চলার প্রবণতা খুব কম। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু জায়গায় স্পিডগান দিয়ে নজরদারি করা হলেও সেই স্পটগুলো চালকদের মুখস্থ হয়ে গেছে। ফলে নির্দিষ্ট ওই জায়গাগুলোতে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও পরে আবার বেপরোয়া গতিতে ছুটছে। বেপরোয়া গতির এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে মুক্তি পেতে হলে পুলিশের নজরদারি নির্দিষ্ট স্পট থেকে না করে বড় পরিসরে সড়কের কিছু দূরত্ব পরপর করতে হবে। সেই সঙ্গে সড়কে গাড়ির গতি কেমন হবে- সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন করতে হবে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান ভোরের কাগজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। ঈদকে ঘিরে দুর্ঘটনার প্রবণতাও বাড়ে। এই সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে আমরা ঈদযাত্রা শুরুর আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে ৩ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক এলাকায় বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করি। এরই ফলশ্রæতিতে ঘরমুখো মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রা আমরা দেখেছি। কিন্তু ঈদপরবর্তী ফিরতি যাত্রায় ফরিদপুর ও ঝালকাঠিতে আমরা মর্মান্তিক দুটি দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। এই দুটি ঘটনা বাদে সামগ্রিক দুর্ঘটনার চিত্র স্বাভাবিক সময়ের মতোই রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান বলেন, জেলা শহর ও মফস্বলে বেশি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। কেউই আইন মানতে চায় না, এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর সঙ্গে মোটরসাইকেল ও অন্য যানবাহনের বেপরোয়া গতিতো রয়েছেই। এরপরও পুলিশ আইন প্রয়োগ করে দুর্ঘটনা রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, নির্দিষ্ট স্পটে থেকে নজরদারির বিষয়টি অসত্য নয়। এর পেছনে হাইওয়ে পুলিশের জনবল ও সরঞ্জাম ঘাটতি অন্যতম কারণ। আমরা এখনই (গতকাল বুধবার বিকাল) সারাদেশে বার্তা পাঠাব, যেন স্পট পরিবর্তন করে গাড়ির ওপর নজরদারি করা হয়। তিনি বলেন, অতিরিক্ত গতির কারণে অসংখ্য গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু শুধু আইন প্রয়োগ করে সড়কে নিরাপত্তা আনা সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদেরও।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে ‘টেকসই পরিবহন কৌশল’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বড় বড় পদে রয়েছেন। তারা এমপি হয়ে জাতীয় সংসদে বসছেন। তারা ভেতর ও বাহির থেকে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হস্তক্ষেপ করছেন। এ কারণে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেয়া ১১১ সুপারিশ, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার পরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না, সড়কেও শৃঙ্খলা ফিরছে না। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়ক আইন শতভাগ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। দক্ষ চালক তৈরি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা হলে সড়কে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরবে।
নিরাপত্তা কাউন্সিলের ১১১ সুপারিশ অন্ধকারে : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে- ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ, অসচেতন ও অসুস্থ চালক, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, প্রচলিত আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর শিথিলতা প্রদর্শন, প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওভারটেকিং করা, বিভিন্ন স্থানে সড়কের বেহাল দশা, জাতীয় মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক থাকা। এছাড়া মহাসড়কে বাণিজ্যিকভাবে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল চলাচল, মহাসড়কে স্বল্পগতির তিন চাকার যানবাহন চলাচল, তরুণ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি ও উদাসীনতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং হাইওয়ে পুলিশের জনবল ও অন্যান্য সুবিধার ঘাটতি, সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
সড়কে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল ১১১টি সুপারিশ দেয়। এরপর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ আইন পাস হয়। পরবর্তী সময় দেরিতে হলেও আইনের বিধি প্রণীত হয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, সড়কে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা নেই। ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়নে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, চালকদের বেপরোয়া আচরণ ও অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে ৬২ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক আইনে বেপরোয়া গতির জন্য যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তা পুরোপুরি উপেক্ষিত। সড়ক আইন অনুযায়ী, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় সড়কে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য থামছে না। আইন প্রয়োগ না থাকায় চালকদের আচরণের কোনো পরিবর্তন আসছে না।
এদিকে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। গত মার্চ মাসের ২য় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আইনের ৬৯ ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্সসংক্রান্ত ভুল তথ্য দিলে আগে দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা ছিল। সংশোধনের পর ২ বছর কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান সড়ক আইনে ৮৪, ৯৮, ১০৫ ধারায় জামিন অযোগ্য ছিল। সংশোধনের পর ১০৫ নম্বর ধারা ছাড়া সব ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। মোটরযানের কারিগরি নির্দেশ ভঙ্গ করলে আগে অজামিনযোগ্য ছিল, এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
আইনের ১২ ধারায় লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও গাড়ি চালালে তিন মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিল। সংশোধনীতে তিন মাস কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারের জন্য এক মাস কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়