গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : অর্থ আত্মসাৎ

আগের সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির হস্তক্ষেপে লাগাম

পরের সংবাদ

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হিতে-বিপরীত হতে পারে : ইসরায়েলি হামলা রুখতে প্রস্তুত ইরানি সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইসরায়েলের যে কোনো ধরনের হামলা মোকাবিলায় ইরানের সামরিক বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করতে পারে ইসরায়েল, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ প্রধান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। এদিকে ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন হামলার দায়ে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের একটি কূটনৈতিক ভবনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত ১৩ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। এদিন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা ও ঘাঁটি লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সামরিক বাহিনী। হামলায় ইসরায়েলে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কারণ, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা বিমান প্রতিরক্ষা এবং পাল্টাব্যবস্থা ব্যবহার করে অধিকাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। তবে এই হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানে পাল্টা হামলা করবে।
ইরানের ভেতরে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘাঁটি কিংবা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে সরাসরি হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। এছাড়া ইরানের বাইরেও লক্ষ্যবস্তু রয়েছে।
ইরানের সশস্ত্র দিবস উপলক্ষে গতকাল তেহরানে এক সামরিক প্যারেডে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, আমাদের মাটিতে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের যে কোনো ধরনের হামলার কঠোর জবাব দেয়া হবে। একই অনুষ্ঠানে ইরানের বিমান বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদ ভাহেদি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইরানের হাতে থাকা রাশিয়ার তৈরি সুখোই-২৪ যুদ্ধবিমানসহ অন্যান্য বিমান ইসরায়েলি হামলার মোকাবিলা করার জন্য ‘সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়’ রয়েছে। আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং বোমারু বিমানসহ সব ক্ষেত্রেই পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
এদিন ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার অ্যাডমিরাল শাহরাম ইরানি বলেন, ইরানের নৌবাহিনী তাদের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে লোহিত সাগরে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জামারান ফ্রিগেট এডেন উপসাগরে উপস্থিত রয়েছে। তেহরান অন্যান্য দেশের জাহাজগুলোকেও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রসঙ্গত, ইয়েমেনের ইরানসমর্থিত বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথিদের হামলায় লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজ চলাচলে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে।
পারমাণবিক কেন্দ্র বন্ধ রাখছে ইরান : ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করতে পারে ইসরায়েল, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ প্রধান। এদিকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ইরান ‘নিরাপত্তা বিবেচনায়’ রবিবার তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সোমবার কয়েকটি আবার চালু হলেও যতক্ষণ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি আইএইএ পরিদর্শকদের সেখান থেকে দূরে রাখছেন।
সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮১ সালে ইরাকের ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলার বিরোধিতা করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি ইসরায়েল সরকার। ২০১৮ সালে ইসরায়েল স্বীকার করেছে, ১১ বছর আগে সিরিয়ার একটি পারমাণবিক চুল্লিতে বিমান হামলা চালিয়েছিল তারা। এছাড়াও ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ‘স্টাক্সনেট’ নামের কম্পিউটার ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্র ‘নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ’ ধ্বংস করেছিল ইসরায়েল। পরে এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী সাধারণ কম্পিউটারেও ছড়িয়ে পড়ে।
পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হিতে-বিপরীত হতে পারে : বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতার রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হওয়ার ‘দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে এবং ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। আশাতীত দ্রুতগতিতে ইরানের ইউরেনিয়াম পরিশোধন কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায়, এমন কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলও আপাতত ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালানোর কথা ভাবছে না। তা সত্ত্বেও, ইরান সরকার দেশটিতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরমাণুকেন্দ্রের পরিদর্শন স্থগিত থাকবে। আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানান, প্রায় প্রতিদিনই এসব কেন্দ্রে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের উপস্থিতি বজায় থাকে। সোমবার কেন্দ্রগুলো আবার খুলে দেয়া হলেও মঙ্গলবারের আগে পরিদর্শকরা সেখানে ফেরেননি।
ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি ভেস্তে গেলেও আগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ শিথিলের বিনিময়ে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজর রাখতে দেয়ার বন্দোবস্ত এখনো কার্যকর রয়েছে। মূলত ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ না করে, সেজন্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ বছর পরিদর্শকরা দেখতে পেয়েছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ নিউক্লিয়ার ফুয়েল উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং পরিশোধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পেয়েছে, যার ফলে ‘ওয়েপনস গ্রেড’ ইউরেনিয়াম উৎপাদন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে ইরানের পরমাণু সংস্থা জানিয়েছে, তারা অন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে আসা পারমাণবিক হামলা প্রতিহত করার সক্ষমতা অর্জনে কাজ করছে।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নন-প্রলিফারেশন নীতিসংক্রান্ত পরিচালক কেলসি ড্যাভেনপোর্ট জানান, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের দ্বারপ্রান্তে। তারা এখন খুব দ্রুত পারমাণবিক বোমা নির্মাণ করতে সক্ষম। তিনি সতর্ক করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে হিতে-বিপরীত হতে পারে।
কেলসি বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে হামলা চালানোর বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আসাই উচিত নয়। ড্রোন ও মিসাইল হামলার জবাবে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো একটি বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ হবে। এতে আরো বড় আকারে আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
ইরানের কর্মকর্তারা সবসময় জানিয়ে এসেছেন, বেসামরিক চাহিদা মেটাতেই তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে তারা ‘ভয়াবহ’ ও ‘বেদনাদায়ক’ জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি : মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে এবং ইসরায়েলকে ব্যাপক প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার কথা জানিয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, আগামী দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আশা করছে, মার্কিন মিত্ররাও তাদের অনুসরণ করবে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন মঙ্গলবার বলেছেন, ইসরায়েলে তেহরানের হামলার প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরানের তেল রপ্তানির সক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করা হবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি ভিডিও কনফারেন্সের পর ব্রাসেলসে বক্তৃতা দেয়ার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, কিছু সদস্য রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রসারিত করার কথা বলেছে।
সংযম দেখানোর আহ্বান রাশিয়ার : মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে আলাপের পর ক্রেমলিন বলেছে, ইরানের মিত্র রাশিয়াও তাদের ‘সংযমের’ আহ্বান জানিয়েছে। পুতিন আশা করছেন যে, সব পক্ষ যুক্তিসঙ্গতভাবে সংযম দেখাবে এবং এই পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনে, এমন নতুন কোনো সংঘর্ষকে প্রতিরোধ করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়