বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

ইসরায়েল হামলা করলে দ্রুত জবাব দেবে ইরান : পাশে থাকার বার্তা দিল চীন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : নজিরবিহীন হামলার পর এবার ইসরায়েলকে কঠোর হুমকি দিল ইরান। চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে তেহরান। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেয়া হবে। ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের হুমকির একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ কথা বলেন।
ইরানের রাজনীতিবিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি গত সোমবার রাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরায়েলের যে কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তেহরানের পাল্টা আক্রমণ হবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। ইরান এবার জবাব দেয়ার জন্য ১২ দিন অপেক্ষা করবে না। এমনকি, এক ঘণ্টাও দেরি করবে না।
১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। বদলা হিসেবে ইরান গত শনিবার রাতভর ইসরায়েলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের বেশির ভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয় বলে দাবি তেল আবিবের। তবে ইসরায়েলের ৯টি স্থাপনায় ইরানি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলে হামলার মধ্য দিয়ে বদলার বিষয়টির রফাদফা হয়ে গেছে বলে মনে করছে ইরান। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব দেয়া হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল ফজল শেকারচি। তিনি বলেন, ইরান প্রমাণ করেছে যে, তারা যুদ্ধবাজ নয় ও যুদ্ধের বিস্তার চায় না। তবে ইসরায়েল যদি প্রতিশোধ বা উসকানিমূলক কোনো আগ্রাসন চালায়, তবে ইরান আরো শক্তিশালী জবাব দেবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেয়া হবে। গতকাল কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, এমনকি ক্ষুদ্র ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর, বিস্তৃত ও বেদনাদায়ক জবাব দেয়া হবে।
ইরানের হামলার জবাব দেয়া হবে : ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান হারজি হালেভি বলেছেন, তাদের ভূখণ্ডের ভেতরে ইরান যে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে সেটির জবাব দেয়া হবে। ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেভাটিম বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় তিনি একথা বলেন। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যেন যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলো ইরানে পাল্টা হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সাবেক প্রধান ডেভিড পেট্রাউস বিবিসিকে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে কোনো ঝুঁকি তৈরি হোক সেটি ওয়াশিংটন চায় না। জেনারেল পেট্রাউস ইরাক ও আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের ভূখণ্ডের ভেতরে ইরানের হামলা একটি ‘বড় ঘটনা’। ইসরায়েলের জন্য এর গুরুত্ব কতটা সেটি পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুধাবন করতে হবে।
পেট্রাউস বলেন, পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কোনো কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে অথবা উপসাগরীয় অঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে বিঘœ ঘটতে পারে। ইসরায়েল সরকারের মধ্যে যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে সেটি হচ্ছে- বড় ধরনের উত্তেজনা না বাড়িয়ে এই হামলার জবাব কীভাবে দেয়া যায়।
ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে এই মুহূর্তে যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাকে অনেকেই সে দেশের ইতিহাসে সব চেয়ে ‘কট্টরপন্থি’ বা হার্ডলাইন সরকার বলে বর্ণনা করে থাকেন। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো অতর্কিত হামলার জবাব দিতে ইসরায়েল সময় নিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপর ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা একটানা গাজা ভূখণ্ডে তীব্র অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে, গাজাকে যেন তারা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের প্রতি পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য ইসরায়েলের হাতে বেশ কিছু পন্থা আছে। তবে নেতানিয়াহু সরকার কোন ধরনের পন্থা ব্যবহার করবেন সেটি বোঝা মুশকিল।
ইরানের পাশে থাকার বার্তা চীনের : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ানকে টেলিফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উত্তেজনা আর না বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতে ওয়াং ইর সঙ্গে ফোনালাপে আবদুল্লাহিয়ান অভিযোগ করেন, ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানায়নি এবং ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা দেয়ার জন্য ‘সংক্ষিপ্ত’ এবং ‘প্রতীকী’ এই হামলা চালিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী।
জবাবে ওয়াং ই বলেন, সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলা ঘটনায় চীন ইসরায়েলের প্রতি কঠোর নিন্দা জানিয়েছে এবং বেইজিং মনে করে, এই হামলার মধ্যে দিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে- যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি ইসরায়েলে ব্যাপক বিধ্বংসী হামলা না চালানোর জন্য ইরানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তেহরান যে সংযম হারায়নি এবং স্থানীয় ও প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি বজায় রেখেছে, তা সত্যিই অভিনন্দনযোগ্য।
পরে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াং ই বলেন, বেইজিং মনে করে, ইসরায়েলে ইরানের সাম্প্রতিক হামলা আসলে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নিষ্ঠুর অভিযানের ফলাফল। সেই সঙ্গে বেইজিং বিশ্বাস করে, আঞ্চলিক অস্থিরতা উসকে না দিয়েই ইরান নিজেদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সক্ষম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়