বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যাব না- বিএনপির এই মুখে মুখে বুলিকে আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির ধারণা, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি দলগতভাবে অংশ না নিলেও বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অন্য স্থানীয় নির্বাচনের মতো স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন- এটি মোটামুটি স্পষ্ট। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে- এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও অংশ নেবেন। প্রতীক কিংবা মনোনয়ন না দিলেও নিজেদের দলের নেতাকর্মীদের জিতিয়ে আনার প্রস্তুতি রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত নির্বাচন হওয়ায় দলে কোন্দল বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রধান এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভিন্ন কৌশল নিয়েছে দলটি। উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের সাধারণ সম্পাদক নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে একাধিকবার সতর্ক করে বলেছেন- যারা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীবকে গত সোমবার বিকালে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। কয়েক ঘণ্টা পর তাকে বাড়ির সামনে ফেলে যায় তারা। এ ঘটনার জন্য চেয়ারম্যান পদের আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে দেলোয়ার হোসেনের পরিবার। এই ঘটনায় রাতেই দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নাটোরের সিংড়ার এমন ঘটনার পর সতর্ক এবং কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয়, কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। প্রশাসন কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।
সূত্র মতে, শুধু বিএনপিই নয়, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিচ্ছে তাদের মিত্র যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতও। বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই জনসংযোগ করছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। প্রতীকবিহীন এই নির্বাচনের সুযোগ কাজে লাগাতে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি এবং জামায়াত। এমনকি কোনো কোনো উপজেলায় নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টাও করবে তারা। এক্ষেত্রে সব অপচেষ্টা মোকাবিলা করে ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে ভিন্ন কৌশল আওয়ামী লীগের। উন্মুক্ত এই নির্বাচনেও শক্তিশালী, দক্ষ এবং যোগ্য প্রতিদ্ব›দ্বীর প্রতি এক ধরনের নেপথ্য সমর্থন দেয়া হবে কিনা- এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন দলের কেউ কেউ। তবে প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন, প্রচারণা কিংবা অন্য প্রার্থীকে হারাতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। এমনকি এক্ষেত্রে দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ

সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রকার অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং নিরপেক্ষতা নষ্টের কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার জন্য মন্ত্রীসহ দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে- এমন প্রত্যাশা করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত প্রশাসনও শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। কেউ কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করেন- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কৌশল সফল হয়েছে। দলের এই কৌশলের কারণে জাতীয় নির্বাচনের অধিকাংশ জায়গায় প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভোটের এই প্রতিযোগিতার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ চাঙ্গা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে।
এদিকে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। তবে আশঙ্কা রয়েছে- আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগই। প্রতিটি উপজেলায় মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। শুধু তাই নয়, একে অন্যকে বিষোদাগার করছেন, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ করবেন না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে হবে, বাধা নেই। নৌকা দেয়া হচ্ছে না কিছু বাস্তব পরিস্থিতির কারণে। দল করলে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
সংঘাত এড়াতে আওয়ামী লীগের কৌশল কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এজন্যই নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তবে যারা অসদুপায় অবলম্বন করবে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।
এদিকে বিএনপির সূত্র মতে, উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আনুষ্ঠানি ঘোষণা সত্ত্বেও দলের অনেকেই প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। তারা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন। রমজান মাসে ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন বিএনপি না এলেও তাদের অনেকেই অংশ নেবেন বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি প্রকাশ্যে উপজেলা নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও আমাদের জানা মতে তাদের অনেকেই অংশ নেবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়