কবিতাসমগ্র

আগের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

পরের সংবাদ

ভারতে নির্বাচন : হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ভারতে লোকসভা নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে কংগ্রেসসহ প্রায় দুই ডজন আঞ্চলিক দলের জোট আইএনডিআইএর (ইন্ডিয়া) সঙ্গে। পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষের ৫৪৩টি আসনে এই নির্বাচন আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে ৭ দফায় এই নির্বাচন শেষ হবে ১ জুন। নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।
জনমত জরিপের তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির সহজ জয় পাবে। এমনটা হলে জওহরলাল নেহেরুর পর টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক নেহরু ছিলেন দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি ভারতের ১৯টি রাজ্যে জরিপ পরিচালনা করে সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটি (সিএসডিএস)। ১০ হাজার ভোটার এই জরিপে অংশ নেন। প্রাকনির্বাচন জরিপ অনুসারে, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) প্রতিদ্ব›দ্বী ইন্ডিয়া জোটের চেয়ে ১২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। জরিপ মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনো এনডিএ জোটে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তবে জীবিকা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো এবারের নির্বাচনে ভারতীয় ভোটারদের প্রধান উদ্বেগ উঠে আসছে। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সমাজের কিছু অংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে- যা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জরিপ মতে, নির্বাচনে কংগ্রেস ২১ শতাংশ ভোট পাবে। কংগ্রেসের শরিকরা পাবে ১৩ শতাংশ। বিজেপি পাবে ৪০ শতাংশ। বিজেপির শরিকরা পাবে ৬ শতাংশ। বিএসপি পাবে মাত্র ৩ শতাংশ। বামপন্থিরা পাবে ২ শতাংশ এবং অন্যান্য দল পাবে ১৫ শতাংশ।
জরিপ মতে, ভারতের জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো ক্ষমতাসীন এনডিএ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট। তবে ২০১৯ সালের প্রাক- নির্বাচন জরিপে তুলনায় এবার সংখ্যাটা কমে এসেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে ৬৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছিলেন যে, তারা ‘কিছুটা’ বা ‘পুরোপুরি’ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট। ২০২৪ সালের জরিপে সেই সংখ্যা কমে ৫৭-তে নেমেছে।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশ মানুষ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার অভাব প্রকাশ করেছেন। প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন বিজেপি নির্বাচনে কারচুপি করতে পারে।
বাংলাদেশসহ ২৫ দেশের রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ : আসন্ন লোকসভা নির্বাচন দেখতে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মরিশাসসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের প্রথমসারির রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজপি)। তবে ডাক পায়নি চীন ও পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের শুধু শাসক দল আওয়ামী লিগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া নেপালের মাওবাদীসহ প্রথমসারির সব স্বীকৃত দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দফায় দফায় বিদেশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার খুঁটিনাটি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেছে পদ্ম শিবির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার নির্বাচনী সভাতেও তাদের নিয়ে যাওয়া হবে।
বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার : গত রবিবার দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দলের ‘সংকল্প পত্র’ নামে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে ‘শক্তিশালী ভারত’ গড়ার প্রতিশ্রæতি দেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেয়া, এক দেশ, এক ভোট ও এক আইনের পক্ষেও দলীয় অবস্থানের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
অর্থনীতি, বিজ্ঞান, সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণ ছাড়াও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের কঠোর অবস্থানের কথাও নির্বাচনী প্রতিশ্রæতিতে জানিয়েছে বিজেপি। নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ৭০ বছর বয়সিদের ৫ লাখ টাকা স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করা হবে। ১০ কোটি কৃষককে ১০০ দিনের কাজের আওতায় আনা হবে। কমপক্ষে ৩ কোটি নারীকে ‘লাখপতি দিদি’ করা ঘোষণা দেন মোদি। বলেন, গৃহহীন মানুষের জন্য ৪ কোটি বাড়ি তৈরি করবে বিজেপি সরকার। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও সামাজিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের পাশাপাশি ট্রান্সজেন্ডার তথা তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার : ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস গত ৫ এপ্রিল রাজধানী নয়াদিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। এ সময় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দলের সাবেক দুই সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনী ইশতেহারকে ‘নয়া পত্র’ নামে অভিহিত করেছে কংগ্রেস। এতে ৩ ‘ডব্লিউ’-এর ওপর জোর দেয়া হয়েছে- ওয়ার্ক, ওয়েলফেয়ার ও ওয়েলথ। ৫টি স্তম্ভের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রæতি জোরদার করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো হলো- ইয়ুথ জাস্টিস, জেন্ডার জাস্টিস, ফার্মার্স জাস্টিস, ওয়ার্কার্স জাস্টিস ও ইকুইটি জাস্টিস।
কংগ্রেস জানিয়েছে- প্রত্যেক নাগরিকের মতো সংখ্যালঘুদেরও পোশাক, খাদ্য, ভাষা ও ব্যক্তিগত আইন পছন্দের স্বাধীনতা থাকবে। ব্যক্তিগত আইনের সংস্কারকে উৎসাহিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও সম্মতিতে এ ধরনের সংস্কার করা হবে। সরকারি পরীক্ষা এবং সরকারি পদগুলোর আবেদন ফি বাতিল করা হবে।
এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়ের অন্তর্গত দম্পতিদের মধ্যে নাগরিক ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি আইন আনা হবে। জাতীয় সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ নাগরিক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পেনশনে কেন্দ্রীয় সরকারের অবদান মাসিক ২০০-৫০০ টাকা। কংগ্রেস এই পরিমাণ বাড়িয়ে মাসে ১০০০ টাকা করা হবে। গরিব মেয়েদের বছরে ১ লাখ টাকা দেয়া হবে।
‘বৈদিশিক নীতি’ অংশে বলা হয়েছে, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশীদের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেবে কংগ্রেস। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য তাদের শক্তিশালী করবে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারত ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা হবে।
রাহুল গান্ধীকে বহন করা হেলিকপ্টারে তল্লাশি : লোকসভায় নিজের নির্বাচনী আসন ওয়েনাডে ভোটের প্রচার চালাতে কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী গতকাল সোমবার হেলিকপ্টারে করে দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় যান। যেখানে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারে তল্লাশি অভিযান চালায় নির্বাচনী কর্মকর্তারা। পুলিশ জানিয়েছে, কেরালায় রাহুলকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণ করার পর ফ্লাইং স্কোয়াডের কর্মকর্তারা সেটিতে তল্লাশি চালান।
ওয়েনাডে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ২৬ এপ্রিল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে একমাত্র ওয়েনাড আসন থেকে জিতেছিলেন রাহুল।
বিজেপি ভালো করবে, বললেন প্রশান্ত কিশোর : ভারতের ভোট কুশলী হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোর (পিকে) সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এবারো বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় যাবে। তিনি আরো বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও তামিলনাড়ুতে বিজেপি ভালো ফল করবে। ভালো ফল হবে দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোয়।
উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে বিজেপির অবস্থান সুসংহত দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু দক্ষিণের তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গনা, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে দলটির অবস্থান তত ভালো নয়। এর মধ্যে গতবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করে বিজেপি।
প্রশান্ত কিশোরের এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, পিকে কত বড় ভোট কুশলী জানি না, তবে তিনি আগে নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রমাণ করুন। তারপরে বড় বড় কথা বলবেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে তার এই মুহূর্তে যে বিজেপিতে প্রয়োজন, তা তার মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
ভোটপরবর্তী সহিংসতা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভোটপরবর্তী সহিংসতা ঠেকাতে ১ মার্চ থেকে দফায় দফায় এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথম দফায় ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসে। ৭ মার্চ দ্বিতীয় দফায় এসেছে আরো ৫০ বাহিনী। ১ এপ্রিলের পর আরো ২৭ কোম্পানি বাহিনী আসে। এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট ২৯৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে।
১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচনের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ৩টি আসন রয়েছে। এগুলো হলো- আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি আসন। নির্বাচনের পরেও এই ৩ কেন্দ্রে বাহিনী থাকবে বলে গতকাল জানিয়েছে কমিশন। ওই ৩ কেন্দ্রে দুটি করে মোট ৬ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন থাকবে। দুই কোম্পানির মধ্যে এক কোম্পানি করে বাহিনী স্ট্রংরুম পাহারা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। ভোটপরবর্তী সময়ে যেন প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করবে আর এক কোম্পানি বাহিনী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়