প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১০, ২০২৪ , ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ
** আমি তখন রৌদ্র হয়ে প্রেমের উষ্ণতা খুঁজি **
ইমরুল ইউসুফ
তোমার ঠোঁটের তিলের মতো গাঢ় সন্ধ্যা
ঝিঁঝি পোকার শব্দডানায় ভেসে যেতে থাকে
রাতের গভীরতায়
তুমি তখন গভীর ঘুমে
চোখে ভাঙতে থাকা আকাশের মতো নীল স্বপ্ন
ঝরনা জ্বলে ভিজে স্বচ্ছ হয় বৃষ্টিধোয়া কাচের মতো।
রাত কখনো উঁইপোকার ঢিবির মতো নিঃসঙ্গ
ঠিক তোমার কানের লতির মতো
যেখানে ঝুলে থাকে রাতের
টুকরো টুকরো নীরবতা
নীরবতার প্রতিটি মুহূর্ত তোমাকে সঙ্গ দেয়
রাতজাগা হিমেল বাতাসের মতো।
তুমি বিধাতার সৃষ্টি
যৌবন তোমাকে ছুঁয়েছে
তুমি আলিঙ্গন করতে বুঝনি।
জগতের সীমাহীন কষ্ট,
সীমাহীন প্রশ্ন, গভীর দৃষ্টি, বিধাতার সৃষ্টির অসীম চাওয়া
তোমাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি।
তুমি নানা ছবি আঁকো মনোপটে।
সাজাতে বুঝনি তুমি এ জগতে।
তোমার আঙ্গিনায় তুমি একা
পথ চলো
পরিবার তোমায় বয়ে বেড়ায়
কেমন দুঃখ বলো?
তুমি নিতে পারো না হাজারো
ফুলের সুভাস
যেতে পারো না কোনো লোকালয়
মন শুধু যেতে চায় সুদূর,
কেউ তোমার সঙ্গী হয় না, বন্ধুও হয় না
অসম্ভব ইচ্ছে থাকার পরও
শিক্ষায়তনে যাওয়ার সুযোগ হয় না:
মায়ের গভীর ভালোবাসা, বাবার আদর, বোনদের কত মায়া,
সবই আছে,
কিন্তু তোমার শিশুকাল
কিংবা কিশোরী তুমি,
বা যৌবনের উচ্ছ¡াস,
উজ্জ্বল তরুণী হতে বুঝ না তুমি!
তোমার দুঃখ তুমি একা বহন করো।
কোনো কষ্ট কাউকে বুঝাতে পারো না।
তোমার জীবন কেউ সাজাতে
পারে না।
তুমি পৃথিবীর সব স্বীয় লালসার ঊর্ধ্বে
জগৎ সংসারে তোমাকে নিয়ে
ভাবার নেই কারো উদ্বেগ।
তুমি চাও প্রভাতের আলো গায়ে মাখিয়ে ছুটতে।
এই পৃথিবীতে তুমি একদিন ছুটবে দূরে বহু দূরে।
সেটা হোক আমাদের স্বপ্ন
পৃথিবীতে তোমরা বেঁচে থাকবে অফুরন্ত ইচ্ছেশক্তি নিয়ে!
** অক্ষম অক্ষর **
জিনাত রশীদ
রাখতে পারি কবিতার বুকে
লাবণ্য-সুষমা-ভাব-অলঙ্কার
আর ব্যাপক ঘর গৃহস্থালি।
মাঝে মাঝে ভুল করে রেখে দেই
নিজের ভুলের কিছু অংশবিশেষ।
পড়ন্ত বিকেল একটা নি¤œমানের ব্যাপার
ছিঁড়ে-ছুঁড়ে নষ্ট করে ভালো থাকা,
তখন নয়ন গড়িয়ে কি সব জল
আর ধুয়ে যায় সব অক্ষম অক্ষর
সেদিকে আমার কোনো পিছুটান নেই।
তবুও কবিতার বুকে বাঁচিয়ে রাখি
সম্বল-কম্বল সব ভাবগুলো,
আর ভাবের ডানায় গুজে রাখি স্বপ্ন
যদি বা দৈনিক পত্রিকায় বহু কবিতার ভিড়ে
আমার কোন স্বপ্ন ছাপা হয় কখনো।
** কখনো ছিলাম আমি **
ওমর কায়সার
মৃত্যুর মতো অবসর এইখানে
বুক পেতে আছি ঘাসময় শান্তিতে
স্বপ্নের মতো বিভ্রম চারপাশে
চোখ বুজে আসে নিদ্রার ভ্রান্তিতে।
এখানে সকাল আপাত অর্থহীন
অথচ পাখিরা গভীর ব্যঞ্জনায়
অকৃপণ ঠোঁটে গানের অঞ্জলিতে
গাছের শরীরে শিহরণ দিয়ে যায়।
এখানে রয়েছে না-ফেরার মতো বাড়ি
দিক ভুলে যাওয়া বাতাসের ফিসফিস
দীর্ঘ লেজের তারা খসে পড়া রাত
কেউ দিয়ে যায় অতীতের মতো শিস।
লাজুক নদীটি পাতার ঘোমটা পরা
বোবা স্রোতোধারা কোলাহল বুঝল না
একটা জীবন বৃষ্টির প্রেমে ভিজে
ভুলেও কখনো সমুদ্র খুঁজল না।
এখানে পাতারা মর্মর ধ্বনি তুলে
উত্তাপ দিল আগুনের বিশ্বাসে
এখানে দুপুর খুন ঝরা হাহাকারে
বাজিয়েছে বাঁশি বিষাদের নিশ্বাসে।
এখানে আমারও আসবার কথা ছিল
স্মৃতি ভাষ্যের রেখা ধরে পাব ঘর
এখন নেই তো, কখনো ছিলাম আমি
অতীত আকুল মগ্ন জাতিস্মর।
** সংসার **
ফারহানা হক
তোমার লগে আমার ঘর বান্ধন হইলো না। গঞ্জের হাট থিকা যেই ডুরে শাড়িখান আনছিলা, গতরে প্যাঁচান হইলো না। একচালা ঘরের দাওয়ায় শীতলপাটি দুপুর আইলো না। পুঁইগোটা তুইলা, কলার মোচা বাইছা বইয়া থাকি, রান্ধন হয় না…
মোতি আনে পুতি আনে
হাতে জাদুর খেলা
গলায় মণি মুক্তা বিছা
মুখে হাসির মেলা।
আকাশ থেকে নেমে আসে
ফটিক পরীর দল
হেসে-খেলে মুক্তা ছড়ায়
সুখ ঝরানোর কল।
ঘুমটা ভেঙে ঝুমকি দেখে
টাবুর হাসি মুখ
এক লহমায় যায় সে ভুলে
ঘুম হারাবার দুখ।
** মানুষ এবং মানুষ **
মাহমুদ কামাল
তিনি হাঁটছেন পাশাপাশি
তিনি যে কে এখনও ঠিকমতো চেনাই হলো না
তিনি মানুষ ছিলেন বটে
কারও বন্ধু, কারও বাবা কিংবা স্বামী
তিনি হাঁটছেন জীবনানন্দের মতো
হাজার বছর থেকে
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো
ভালো ও মন্দ তবে কাকে বলে
জীবনানন্দ না বুঝলেও আমি বুঝে গেছি
তবুও পাশাপাশি কখনো তুমি, তিনি কিংবা তুই
নির্দ্বিধায় হাঁটি আর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় যাই
তারপরও আমিও মানুষ আর তিনিও মানুষ
** এপ্রিল ফুল **
মামুন মুস্তাফা
কৃষ্ণশিসে রাধা নাচে
রাধার সাথে আমরা নাচি…
বখিল সময় গিলে নেয়
ঘরগেরস্থি, মোকামতলা
তুমি বলো মাথুরে অভিসার
আমি দেখি এপ্রিল ফুল
চোখের সামনে থেকে
মুছে যায় প্রিয় সংবাদগুেেলা
শুধু নেচে চলে রাধার ঘুঙুর!
** প্রতীক্ষা **
নাহারফরিদ খান
ঘাস ফড়িংয়ের উল্লাস কেন চাও দুঃখিনী সময়
অপেক্ষার অন্তিম প্রহরে প্রতীক্ষা অপলক চেয়ে রয়
কতো স্বপ্ন- সাধ ছিল আঙ্গিনায় বুনবো সহজ সবুজ
মনতো আয়না নয়, সরে গেলে মুছে যায়, মন অবুঝ
হৃদয়ের উত্তাপ দেবো ঢেলে নতুন প্রজন্মের আদরে
বাসনার সব রং ফিকে হয়, ভেসে যায় ভরা ভাদরে
বাতাসের ধ্রæপদী নৃত্য বৃক্ষের ডালে তোলে স্পন্দন
বসন্তের পরশে দেখি জেগে ওঠে আনন্দে ফুলনন্দন
স্বপ্নে শুনি সুডৌল হাতে রেশমিচুড়ির রিনিঝিনি
সব হারিয়ে কাতর মনে উৎসুক হয়ে শুধু দিনগুনি।
** মায়াময় ঈদ উৎসবে **
বিদ্যুৎ কুমার দাশ
মানবতা হেসে রঙিন হয়-
পৃথিবীর সব পাখি উড়ে
পাখিদের মেলায়-
তোমাকে খুঁজে বেড়াই
ঈদ উৎসবের মায়ায়
ফিরে এস খোলা দরজায়
একটাই মনের বাড়ি বানায়।
** হৃৎপিণ্ডে কষ্টের সাদর সম্ভাষণ **
মোহাম্মদ ইকবাল
রাতগুলো মাতাল হয়ে উঠার আগেই আমাকে নৈমিত্তিক নেশাগ্রস্ত করে তুলে তোমাকে না পাওয়ার অতৃপ্তি।
সময়ের চিলারে স্তরে স্তরে জমেছে হরেক পদের কষ্ট
ওগুলোর সাথে যখন তোমার চূর্ণ কথন, রূপ মাধুর্যের দ্যুতি, ইত্যাদি মিশিয়ে পান করি
প্রতিক্রিশীল কষ্টের বিষক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াকে দেখে প্রকাশ্যেই বিদ্রুপ করে নিজহাতে লেখা নিজের ভাগ্যলিপি।
রাতের সাথে বিনিদ্র অভিযাত্রার অন্য প্রান্তে দেখা মেলে জৌলুসের বিকিরণে সহাস্য সকাল।
যেমনটি স্নিগ্ধ হাসির বিদ্যুতে ঢেকে দেয়া পুঞ্জীভূত কষ্টের নদী।
আকাশের কষ্টে সে অবলীলায় অঝোরে ঝরে
আহত হলেই ঝড় ঝঞ্ঝার বিক্ষুব্ধ তাণ্ডব,
আকাশ পারে।
মানুষ পারে না।
মানুষকে কেবলই দক্ষতার সাথে অভিনয় করে যেতে হয়।
অতঃপর নিরন্তর হাসির আড়ালে এক সমুদ্র কষ্ট গিলে ফেলে পরবর্তী কষ্টকে হৃদয়ে সাদর সম্ভাষণের প্রক্রিয়ার ব্যস্ত থাকে হৃদয়…
নিজের কষ্ট ভুলে কৃষক
মুখে মুখে তুলে দেয়
ক্ষুধার খোরাক; তৃপ্তির বিরল হাসি।
অথচ কেউ মনে রাখে না
শুনে না পোড়া জীবন
এবং টানাপড়েনের দুঃখের গল্প
যাদের স্বপ্নের পৃষ্ঠায় শূন্যতার ঢেউ
সখহীন বয়স ভেঙে ভেঙে বাড়ায় সংসার
অবহেলার অপূর্ণ হলুদ জীবন।
** আধশোয়া ক্যালকুলাস **
মাহফুজা অনন্যা
এত শরীর! থোকা থোকা মাংস
তবলাগুলো তাকিয়ে আছে হাড্ডির তেষ্টা!
আগে মানুষ মুখোশ পরতো
তখন মানুষ মুখোশ খুলতো
এখন মানুষ মানুষ পরে
এখন মানুষ মানুষ খোলে
মানুষ খসে পড়লে থাকে কি?
ষমে বিষমে এমন আধশোয়া ক্যালকুলাস যখন ধরা পড়ে আলোধরাদের জালে
গায়ে আগুন ঢেলে তখন মিছিলে নামে লাইলীর পায়রা
আলো হরকরাদের দিনক্লাবে
শান্তি-প্রবর্তকের জন্য মুহুর্মুহু হাততালি।
** বিধ্বস্ত গাজা **
শামীম আহমদ
চোখ ভিজে যায় রক্তাশ্রæতে-পুতলি ফেটে পুরোটাই লাল
বিধ্বস্ত জনপদে কংক্রিটের জমানো স্তূপ ঘন অন্ধকার
এর নিচে ক্ষত মানুষের আহাজারি, ডাক শুনি আধিয়ার
পৃথিবী অবাক, দেখে জনহীন বিরান বধ্যভূমির কঙ্কাল!
মনে হয় কোন এক পরিত্যক্ত মর্গ পুরোটা হাসপাতাল
যতদূর দৃষ্টি যায় সুনামীর মতো ভাঙা শহরের ঢেউ
ওঠে, মরু ঝড় তাণ্ডবের মতো, দিশেহারা সব নেই কেউ
জনম জনম ধরে-মাতৃভূমি ছিনিবারে হায়েনা বেসামাল!
এত সব দেখিতেছি -মানুষ শব হয় পাষাণের বেদিতে
মুক্তির পদতলে -স্বাধীনতা রুঢ় হয়ে আসে এ পৃথিবীর
কাছে, বুকে তার ভীমরুল দংশন! যেন রক্তের নদীতে
যতো ভাবি ততো আমি ডুবে যাই ভ্রমে, দোষ দেই নিয়তির
রেনেসাঁ আসেনা-মৃত্যুবীজ ওম দেয় গাজার রুক্ষ ভূমিতে
আশাহত নই, প্রচণ্ড আক্রোশে হাড়ে শান দেই দধীচির
** প্রত্যাবর্তন **
হোসনেয়ারা বেগম
আটলান্টিকের ওপার হতে বিদ্ধস্ত সেই শঙখচিল-
ফিরে আসে পিছনে ফেলে টাগুস নদীর মোহনা,
টলমল জল আকাশের নীল।
ফিরে আসে ক্লান্ত ডানায়-
তুরাগ পাড়ে কোন এক বিষাদ সন্ধ্যায়।
ফিরে আসে ঘোরলাগা নিঃসীম আঁধারে
নীরবে নিভৃতে; একান্ত অভিসারে।
খুঁজে খুঁজে দিশেহারা
বিভ্রান্ত সময়ের ফেলে যাওয়া আশা ভালোবাসা।
উদ্ভ্রান্ত তৃষ্ণার্ত চোখে তার অনন্ত বিষাদ
তবুও অবস্বাদের দ্যোতনা শ্রান্তির ডানায়
এ প্রত্যাবর্তন যেন জীবনের আস্বাদন
ভরে ওঠে কানায় কানায়।
** ভার **
বাসু দেব নাথ
যত হাঁটছি ঝুঁকে পড়ছি তত
কিছু বন্ধ দুয়ার আর ব্যর্থতার সম্মুখে
দুই পা থরথর কাঁপে
ভারী হয়ে ওঠে নিঃশ্বাস
চোখ ফেটে যেন বেরিয়ে আসছে কিছু;
শরীর তো বেশ সুস্থ সবল ছিমছাম
তাও একজন টগবগে মানুষের এই হাল!
ঝুঁকতে ঝুঁকতে
কারণ খুঁজলাম দিনভর, পেলাম না।
অতঃপর নিঃশব্দের রাতে টের পেলাম,
আমার পুরো শরীরের চেয়ে যেন
এক টুকরা হৃদয়ের ভার অনেক বেশি।
** সবুজ রঙের টুকরো **
তাহমিনা শিল্পী
সময়ের যৌবনসন্ধিতে
টলটলে সাগর এসে ফিরে গেছে
এখানে আর কিছুই জন্মাবে না
না ঘাস, না ফুল
এমনকি লতাগুল্মও নয়।
এখানে পড়ে রয়েছে সবুজ রঙের ভাঙা ভাঙা টুকরো
এখানে পড়ে রয়েছে আধপোড়া স্বপ্নের কঙ্কাল
নীরস গ্রীষ্মের মাসে এক বৃদ্ধ
রয়েছে বৃষ্টির প্রতীক্ষায়।
বৃষ্টি ভেজা ধান দাওয়া মুখ, মাটির উপর
জলে ভাসা উদাস গলায় গান গাওয়া দূর
পুবান হাওয়ার ভেসে আসা কোলার থিকা
ভেজা বাতাস… মুখটি চেনা, আউশা জলে
এ মুখ তুমি কোথায় পেলে? বুকের ভিতর ছিল পোষা?
** প্রেম পাঠ্য নয় কেন **
নজমুল হেলাল
প্রেম
আতঙ্ক রহিত করে
বৈষম্য বিনাশক আশান্বিত করে
মিলনের মালা গাঁথে
সুখের ছড়ায় সৌরভ
গৌরব বাড়ায় মনুষ্যত্বের
এই জন্যই প্রেমের পাঠশালা নেই
প্রেম পাঠ্য নয় তাই
তাছাড়া মুনাফা শব্দটার ফাঁসি হয়ে যাবে
বাণিজ্যে মন বসবে না অনেকের
প্রেমের পাগল বেড়ে গেলে বিত্ত বৈভব
আসক্তি হারাবে
পর শব্দটারও অপমৃত্যু হবে
মানুষ ফিরে পাবে হারানো বন্ধন
প্রেম পাঠ্য নয় ব’লে
বিদেশ আর বর্ডার বেঁচে আছে আজও
হচ্ছে মানুষের পৃথিবীতে
অনাকাক্সিক্ষত রক্তপাত
** জবাফুলের জিহ্বা **
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
আবারো একটা খুনপর্ব শেষ করে হ্যালোইন রাতে
স্বস্তিপূর্ণ চা খাই। শীতল রক্তচা।
হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটা অদ্ভুত গন্ধ থাকে,
অপরাধমূলক আনন্দে নিজের সাথে নিজেই একটু হাসি,
ধন্যবাদ দিই।
এখন অজু করে তাহাজ্জুত পড়বো।
গøাভস ছিলো, তবু হাতে রক্তের দাগ!
লাশ নগ্ন করে আমিই সাজিয়েছি কাফনে,
সে দায়িত্বটাও আমারই ছিলো,
পালন করেছি। শুধু ভুলে গিয়েছিলাম খুনের দোয়া!
সেই ভুল থেকেই কি বেরিয়ে এলো রক্তের দাগ?
খুনের কবিতা থেকে বেরিয়ে আসছিলো জবাফুলের জিহ্বা
বিশ্বস্ত ছুরি ছাড়া আর কোনো সাক্ষী নেই,
সিসি ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছায়াও খুলে রেখেছিলাম।
ফিরে এসে দেখি ক্যালেন্ডারে কোত্থাও নেই—
পহেলা নভেম্বর।
নভেম্বর থেকে নিখোঁজ একটি তারিখ।
এই খুন কে করেছে- গাম আউট?
** মানুষের ধ্যানের দক্ষিণে **
ফকির ইলিয়াস
কোনো বিত্তই অনিবার্য নয়। কোনো
চিত্তই আরাধনার অর্ঘ্য ছাড়া,
সাজাতে পারে না জীবনের বিন্দু
যে মহাসাগরের কথা তুমি বলছ-
তার গভীরেও লুকিয়ে থাকে ধ্যানের দরদ।
আমি মানুষের মাঝে শুধু সেই ধ্যানের
পঙ্ক্তিগুলোই রোপণ করে যেতে চেয়েছি।
এই যে তুমুল ঝড়ের রাত আমাদের
বাহুগুলোকে শক্ত করে দেয়,
কিংবা ভয় পাওয়ার চিন্তা, বুকে জড়িয়ে
ধরতে কাছে টানে-
মূলত সেটাই ধ্যানের শক্তি।
দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করলেই আমরা
বুঝতে পারি,
উত্তর হস্ত উজ্জ্বল করে একটি আকাশ
আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
** মানুষ মাত্রই ভুল করে **
সোহেল মল্লিক
‘মানুষ মাত্রই ভুল করে’- এই কথাটি সত্য।
তারচে’ সত্য-
ভুল মানুষকে চেনা!
চেনা যায়- মুখে তার ফেনা ওঠে,
কলরব করে, হৈ হৈ বেজে ওঠে,
অসম্ভব স্তাবকতায় পঞ্চমুখ হয়ে পড়ে-
জীবনের
ক্ষণে ক্ষণে
স্তরে স্তরে
পদে পদে।
লোকটির বক্তৃতায় ইমান ঝরে পড়ে
বক্তৃতা শেষ হলে পোডিয়ামে ইমান রেখে লোকটি বসে যায় মঞ্চে
ইমানের জোয়ারে ভাসতে থাকে মঞ্চ, অডিয়েন্স
জলসা ভেঙে গেলে ইমান উড়ে যায় পিছনের পর্দা সরিয়ে
সকলেই তখন হয়ে যায় হিংস্র, সহিংস জানোয়ার।
লোকটির ওয়াজে নিদানও হয়ে যায় হাজী মহসিন
ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, লাইরস, এসির ওয়াদায়
হয়ে যায় বহুতল মসজিদ মাদ্রাসা
দাতাদের ভিতরে মানবিকতা আর মনুষ্যত্বের গাঁথুনি-
ততধিক হয়ে যায় নড়বড়ে
আমরা আমশ্রোতা তাজিমের সাথে বলতে পারি না কিছুই
রাজনীতিক আর ব্যবসাদার দানশীল বাড়তে থাকে নেপিয়ার ঘাসের মতো
আমরা কেবল ক্রমশ: বনসাই হয়ে যাই…
** ফুল ফোটে অন্য কোথাও **
মুকুল হোসেন
আকাশ চ্যুত কোমল বৃষ্টি
কখনো জানে না
মেঘের পেটে বাড়ন্ত জল
সে মেঘ জানে না;
কতটুকু প্রয়োজন ছিলো
এই মেঘ এই বৃষ্টি।
যাযাবর পাখি জানে
চাতকের দৃষ্টি সুদূরপানে
শুষ্ক জমি জানে
কৃষকের চিন্তা-ভয়গুলি
মরা নদী জানে
অবরুদ্ধ জীবনের কলি
জানে বৃক্ষে
প্রাণশক্তি রসদ অমর্তে
জানে প্রজ্ঞাত পাটনি
যোগাযোগ বন্ধ মহা ক্ষতি
ভাব ও ভাষার অধোগতি।
যে ভাবে এ অহেতুক জীবনের ক্ষয়
প্রকৃতি তাকে জানাও
এও ফুল হয়ে ফোটে অন্যত্র কোথাও।
** ব্যক্তিগত অনুপ্রাস **
সাইয়্যিদ মঞ্জু
যদিওবা অবিদিত অন্তহীন সমুদ্র পরিধি
যুৎসই অনুপ্রাস অত্যন্ত গরজ জেনে, এই
পথের গন্তব্য থামে বালুকাবেলায়
খিজির দুয়ার খুলে জলের দুয়ার, অনিমেষ
দেখছে নিমগ্ন সমুদ্রসন্তান! ক্রমাগত ঢেউ
উপকূল ছুঁয়ে কতশত চিত্রকল্প অন্তমিল
নিজস্ব ভাষায়…
ঘাইতোলা কালো পোয়া কৈবর্তের দুঃখ- সুখ
নোনাখাতার পৃষ্ঠায় ধড়ফড় রূপচাঁদা লাক্ষ্যা
ইলিশ জীবন, আর আমি অনবরত সমুদ্র
ছন্দ রপ্ত করি সাঁতারু মাছের পিছু…
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।