কবিতাসমগ্র

আগের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

পরের সংবাদ

ঐতিহ্যের সঙ্গী হলো বাঙালির উৎসব : নববর্ষ বরণ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে বাঙালি বরণ করে নিয়েছে বাংলা নতুন বছর- ১৪৩১ সাল। অতীতের ভুলত্রæটি ও ব্যর্থতার গøানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় নববর্ষ। এ দিনটির মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি বছর। আর তাই এদিন নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বর্ণিল উৎসবে মেতে ওঠে দেশ। নতুন বছরের প্রথম দিনে ভোরের আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে।
গত রবিবার রাজধানীসহ সারাদেশে ছিল বর্ষবরণের নানা আয়োজন। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ, রমনা, হাতিরঝিল ও সংসদ ভবন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হতে শুরু করে। বিশেষ করে রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার প্রত্যয়।
সকাল ৯টার পর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তীব্রতা বাড়তে থাকে। রোদের সঙ্গে গরম বাতাস যেন শরীরে হানা দিতে থাকে। তীব্র গরমের মাঝেও বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিতে অনেকেই বের হয়। তবে ঈদের ছুটি থাকায় গত কয়েকবারের তুলনায় মানুষের সংখ্যা ছিল কম।
নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা উদ্যানে সকাল থেকেই ভিড় করতে দেখা যায় নগরবাসীকে।
বর্ষবরণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ভোর ৬টায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে। ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জয়গানের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায় সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র ছায়ানট। প্রতিবারের মতো এবারো রমনার বটমূলে সুরের মাধুরীতে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। ভোরের আলো ফুটতেই আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে শুরু হয় এ আয়োজন। এতে ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নেন অন্য শিল্পীরাও। রবীন্দ্র-

নজরুলের গানের সঙ্গে জায়গা করে নেয় লোকজ সুরও।
এবার পুরো অনুষ্ঠান সাজানো হয় নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। এবার প্রায় ১৭০ জন শিল্পী অংশ নেন। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এ বছর প্রথমবারের মতো গেয়েছেন প্রায় ৮০ জন শিল্পী। এ অনুষ্ঠানে একক গান গেয়েছেন ১৮ জন শিল্পী। সব মিলিয়ে ৩০টি পরিবেশনা দিয়ে সাজানো হয় এবারের আয়োজন। ছায়ানটের পাশাপাশি বর্ষবরণে ছিল চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রকমারি কারুপণ্যের সম্ভার নিয়ে বৈশাখী মেলা প্রভৃতি। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। শোভাযাত্রায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। শোভাযাত্রা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো এলাকা।
ডিএমপির ব্যতিক্রমী সেবা : বর্ষবরণ উপলক্ষে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি বিতরণের বুথ বসানো হয়। এসব বুথ থেকে বিতরণ করা হয় খাবার পানির বোতল। পাশাপাশি রমনা পার্ক, টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আসা দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে ট্রলির মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে একটু স্বস্তি পেতে অনুষ্ঠানে আগতদের মাঝে হাতপাখা বিতরণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর রমনা পার্কে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
ঈদের ছুটির প্রভাব : ঢাকায় এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানগুলোয় লোকজনের তেমন বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। হঠাৎ কেন এমন হলো! কেউ কেউ বলছেন, ঈদের ছুটিতে লোকজন গ্রামের বাড়ি গেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকায়। যারা সকাল থেকে বের হয়েছিলেন, তারা মূলত ঢাকা ছাড়েননি। এবার ঈদে ঢাকা ছেড়েছে কোটির বেশি মানুষ। স্মরণকালের লম্বা ছুটি পেয়ে এখনো অনেকে গ্রামেই অবস্থান করছেন। কিছু লোকজন ঢাকায় ফিরলেও তা সংখ্যায় কম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়