সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

সদকাতুল ফিতর : ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসলাম মানবতাবাদী ভারসাম্যপূর্ণ এক জীবন-ব্যবস্থা। ইসলামের বিধি-বিধানগুলো মানুষের কল্যাণের পরিপূরক। অভাবী, দুস্থ ও পরমুখাপেক্ষী মানুষের সাহায্য ও সেবায় আত্মনিবেদিত হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র ইসলামে। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি; যে ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানেরা খোদাতায়ালার পরম নৈকট্য ও ঘনিষ্ঠতা অর্জনের অপার সুযোগ লাভ করে থাকেন। সেই রমজানের সিয়াম সাধনা করতে গিয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় রোজাদারের যতটুকু ভুল-ভ্রান্তি, আলস্য-গাফিলতি বা শূন্যতা থেকে যাবে সেটির পরিপূরণের জন্য রয়েছে সদকাতুল ফিতরা আদায়ের বিধান; যা স্বাধীন মুসলমান, ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে। আর তা বিতরণ করা হবে অভাবী মানুষদের মধ্যে; যা ইসলামের শাশ্বত মানবতার রূপটির প্রতিফলন ঘটায়।
সদকাতুল ফিতর হচ্ছে পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। জাকাতুল ফিতর নামেও পরিচিত এই দানের ইবাদতটি প্রবর্তনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, সম্পদশালী মুসলমানের পাশাপাশি অভাবী মানুষেরাও যেন ঈদের আনন্দ-খুশি উপভোগের সুযোগ পায়। সদকাতুল ফিতরের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, এটি যেন ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করা হয়। বুখারি শরিফের হাদিসে হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের নামাজের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বেই সদকাতুল ফিতর প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে ঈদের আগের দিন বা দুদিন পূর্বেও এটি আদায় করার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেজন্য ঈদের ক’দিন আগে থেকেও এই সদকাতুল ফিতর দেয়া যাবে, এতে কোনো বিধির ব্যত্যয় ঘটবে না। এমনকি তা রমজানের যেকোনো সময় অথবা রমজানের আগেও আদায় করা যাবে; তবে ঈদের কিছু সময় পূর্বে এটি আদায় করা উত্তম। নগদ টাকা দেয়ার চেয়ে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে টাকা দিলেও ফিতরা আদায় হয়ে যাবে।
সদকাতুল ফিতর মানে হলো ফিতরের দান। ফিতর মানে হলো রোজা ভাঙ্গা বা রোজার সমাপন; এর দ্বারা ঈদুল ফিতরকেই বোঝানো হয়েছে। যেহেতু ইবাদতের এই বিধানটি ঈদুল ফিতরের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই এটিকে সদকাতুল ফিতর নামে অভিহিত করা হয়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবান বলতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীকে বোঝানো হয়েছে। তবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের জন্য সামর্থ্যবান ব্যক্তির সম্পদের নিসাবের ক্ষেত্রে বছর পূর্ণ করার বিষয়টি শর্তযুক্ত নয়। যাদের জাকাতের অর্থ দেয়া যায় তাদেরই সদকাতুল ফিতরও দেয়া যাবে। পবিত্র কুরআনুল কারিমের সুরা তওবার ৬০নং আয়াতে বলা হয়েছে- প্রকৃত অর্থে সদকা হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং বিপদগ্রস্ত মুসাফির ও পথসন্তানদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। উপরে বিবৃত এই ৮ শ্রেণির মানুষকেই সদকাতুল ফিতর দেয়া যাবে। তবে নিজ আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের এক্ষেত্রে অধিক হক রয়েছে; এদের মধ্যে যারা দরিদ্র, অভাবী ও ঋণগ্রস্ত তাদেরকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করলে তা হবে অধিক যুক্তিযুক্ত।
সদকাতুল ফিতর আদায়ে রয়েছে অনেক উপকারিতা। সমাজের নিরীহ, দরিদ্র, অভাবী ও দুস্থ মানুষের কল্যাণের পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে তাদের মুখে তৃপ্তি ও শান্তির হাসি ফুটে ওঠে। অভাবীদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনেরও এক মাধ্যম হলো এই সদকাতুল ফিতর। এটি প্রাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে দরিদ্র ব্যক্তি সাময়িক সচ্ছলতা অনুভব করে এবং এর মধ্য দিয়ে ধনী-নির্ধন সবার জন্য ঈদের আনন্দ-খুশিকে সর্বজনীন রূপদান করা যায়। রোজাদার সামর্থ্যবান ব্যক্তি রোজা পালন করতে গিয়ে যেসব ত্রæটি-বিচ্যুতি হয়ে যায় সেগুলো সংশোধনের এক উত্তম সুযোগ লাভ করে থাকেন সদকা প্রদানের মাধ্যমে এবং একইসঙ্গে তিনি দানশীল ও মমত্ববোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন। সর্বোপরি দীর্ঘ এক মাস মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে রোজাগুলোর কবুলিয়তের বিষয়ে একজন সামর্থ্যবান ব্যক্তি পরম প্রভুর কাছে সদকাতুল ফিতর আদায়ের মাধ্যমে মিনতি করার একটি উত্তম উপলক্ষ পেয়ে থাকেন এবং অর্জিত সম্পদের শুকরিয়া আদায়েরও তাওফিকপ্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য, এ বছর সরকারের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সদকাতুল ফিতরের এ আলোচনাটি আমরা শেষ করব আল্লাহর নবীর (সা.) ঘনিষ্ঠ সাহাবি, রাইসুল মোফাস্সেরিন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস দিয়ে; যেটি আবু দাউদ শরিফ ও ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) অশ্লীল ও অনর্থক কথাবার্তার কারণে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ত্রæটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য ও গরিব-মিসকিনদের খাদ্য প্রদানের স্বার্থে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করলে এটি হবে সদকাতুল ফিতর এবং ঈদের নামাজের পরে আদায় করলে এটি অন্যান্য সাধারণ দানের মতোই একটি দান হিসেবে গণ্য হবে।’ তাই আমরা নিজেদের স্বার্থেই ঈদের নামাজের পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করব এবং এর মধ্য দিয়ে আমাদের পালনকৃত রোজাগুলো খোদার দরবারে মঞ্জুর হওয়ার বিষয়ে প্রার্থনা করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়