আজকের খেলা

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল হোক

পরের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক ও বান্দরবান প্রতিনিধি : দুই দিনের মধ্যে বান্দরবানের তিন উপজেলায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো পাহাড়ি জনপদ। বিশেষ করে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ সন্ত্রাসীদের টাকা ও অস্ত্র লুট, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ তল্লাশির মধ্যেও হামলার মতো দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড দেখে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক অভিযানে নামতে যাচ্ছে যৌথ বাহিনী। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের নির্মূলের পাশাপাশি রুমা সোনালী ব্যাংক থেকে লুট হওয়া ১৪টি অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তবে সন্ত্রাসীরা পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অপহৃত রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সক্ষমতা জানান দিতে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে কুকি চিন। আতঙ্কের কিছু নেই। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে হলেও সন্ত্রাসীদের দমন করা হবে। এদিকে আজ (শনিবার) বান্দরবানের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি তল্লাশি চৌকি ও টহল জোরদারেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রতিটি থানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৭ ঘণ্টার মধ্যে বান্দরবানের দুই উপজেলায় দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার আলীকদমের ডিম পাহাড়ের ২৬ মাইল এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। একই রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে, পরে তারা বাজারের আশপাশে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা একসঙ্গে তাদের প্রতিহত করলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পিছু হটে যায়। এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হলেও পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবারও বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বন্ধ রয়েছে থানচি বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন অনেক নারী ও শিশু। থানচি এলাকায় বিজিবি ও পুলিশের সতর্ক পাহারা দেখা গেছে। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। সরজমিনে দেখা যায়, চাঁদের গাড়ি করে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে।

সেখানে কথা হয় স্থানীয় টিঅ্যান্ডটি পাড়ার বাসিন্দা জুলি আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, দিন দিন গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে। ছোট দুই ছেলেমেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে। তাই তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বান্দরবান সদরে চলে যাচ্ছেন। জুলি আক্তারের সঙ্গে থাকা রিনা আক্তার জানান, তিনিও সন্তানদের নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সদরের ব্রিজের মাথা এলাকা থেকে বান্দরবান সদরগামী চাঁদের গাড়ি ছাড়ে। সেখানে প্রায় ৮ ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, পাঁচটি চাঁদের গাড়ি করে যাওয়া যাত্রীদের বেশির ভাগ এলাকা থেকে চলে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি। থানচি উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান অং প্র মোরং বলেন, নারী ও শিশুরা আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন পরিচিতজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। কাপড়ের দোকানদার নুরুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যখন গুলির শব্দ পান, তখন ভয়ে দোকান ছেড়ে চলে যান। ১০ মিনিট পর আবার এসে দোকান বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকেন। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর বাসায় যান। ভয়ে সকাল থেকে আর দোকান খোলেননি তিনি। দুপুরে বিজিবি নামার পর দোকান খুলেছেন।
সরজমিন দেখা গেছে, এই বাজারে ২৪০টি দোকান রয়েছে। গতকাল দুপুরে ১৫ থেকে ২০টি দোকান খোলা দেখা গেছে। বাকিগুলো বন্ধ। থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জানা গেছে, পরপর দুটি গোলাগুলির ঘটনায় থানচি বাজারের ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা কমে গেছে। শুঁটকি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুসা বলেন, আগে দৈনিক ১০ হাজার টাকার শুঁটকি বিক্রি করতেন। এখন দুই হাজার টাকারও বিক্রি করতে পারছেন না।
গতকাল দুপুরে থানচি থানার চারপাশে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি থানায় একজন করে সহকারী পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। থানচি থানায় কথা হয় সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ জাহিদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিন থানায় তদারকের জন্য একজন করে এএসপি এসেছেন। থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, গোলাগুলির পর থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত আরো ১০০ পুলিশ সদস্য থানায় আসছেন। লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি। বান্দরবানে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, হঠাৎ করে বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলার যাতে কোনো অবনতি না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে অপহরণের দুই দিনের মাথায় পরিবারের কাছে ফিরলেন বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা উপজেলার বেথেল পাড়া দিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। পরে গতকাল তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, র‌্যাব খবর পাওয়ার পরপরই সোনালী ব্যাংক বান্দরবানের রুমা শাখার অপহৃত ম্যানেজারকে নিরাপদে উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং অক্ষত অবস্থায় ম্যানেজারকে উদ্ধার করা হয়। অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে রুমা থেকে উদ্ধারের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মূলত নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য এসব কর্মকাণ্ড করছে কুকি-চিন। র‌্যাব কমান্ডার আরো বলেন, পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না, আর সন্ত্রাসীদের নির্মূলের পাশাপাশি রুমা সোনালী ব্যাংক থেকে লুট হওয়া ১৪টি অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, স¤প্রতি যে হামলাগুলো হয়েছে, সেখানে বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ অপু জানান, আজ শনিবার ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বান্দরবানে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। মন্ত্রী বান্দরবানের রুমাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করবেন। এ সময় তিনি বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। শনিবার দুপুরে বান্দরবান সার্কিট হাউসে মতবিনিময় শেষে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মৎস্যজীবী লীগের ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে। সেখানে যৌথ অভিযান চলছে। অচিরেই পরিস্থিতি শান্ত হবে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিছু কিছু সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করেছে। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীটি রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে নেই। শুধু আছে বান্দরবানে। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিছু তরুণ অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়া দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। আশা করি অচিরেই পরিস্থিতি শান্ত হবে। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই সশস্ত্র তৎপরতার ঘটনায় গোটা পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত হবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
উদ্ধার ব্যাংক ম্যানেজার যা জানালেন : পরিবারের কাছে ফেরা ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শতাধিক সশস্ত্র কুকি-চীন সদস্যদের প্রত্যেকেই রুমা সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির উদ্দেশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক এবং আশপাশের এলাকায় ভীতি সঞ্চার করে তাকে খুঁজতে থাকে। লোকের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা জানতে পারে, তিনি পার্র্শ্ববর্তী মসজিদে এশার নামাজ পড়ছেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মসজিদে প্রবেশ করে নামাজরত প্রত্যেক মুসল্লিকে জিম্মি করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর আগে তিনি সন্ত্রাসীদের কৃষি কর্মকর্তা পরিচয় দিলে লোকদের জিজ্ঞাসা করে পরিচয় নিশ্চিত হয় কুকি চিন সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের সবাই জলপাই রঙের পোশাক পরা ছিল এবং প্রত্যেকের মুখমণ্ডল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। ব্যাংকের চারপাশ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছিল।
ম্যানেজার জানান, সন্ত্রাসীরা জানতে চেয়েছে, ঘটনার দিন ব্যাংকে কত টাকা নিয়ে আসা হয়েছে এবং ব্যাংকের ভল্টে মোট কত টাকা রক্ষিত আছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ম্যানেজারের কাছে ব্যাংকের ভল্টের চাবি চাইলে তখন ম্যানেজার তাদের কৌশলে ভল্টের চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানান। ভল্ট ভাঙতে চেষ্টা করে এবং পরে ম্যানেজারের কাছ থেকে আরো জানতে পারে- ভল্টে আঘাত করলে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যাপারটি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে। তখন তারা ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই তার চোখ বেঁধে ফেলে। টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা কোনো এক অপরিচিত পাহাড়ের ঝিরি পথে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। এই সময় তার সঙ্গে ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল। পথিমধ্যে তারা চোখ খুলে দেয় এবং অন্ধকারে চলার সুবিধার্থে হাতে একটি বাটন ফোন ধরিয়ে দেয়। পথে তারা কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয়। এরপর আবার হাঁটায়। এভাবে একপর্যায়ে রাত আনুমানিক আড়াইটার সময় অজ্ঞাত এক নির্জন স্থানে তাকে নিয়ে গিয়ে ঘুমানোর সুযোগ দেয় এবং যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য তারা পাহারা দেয়।
ঘটনার পরদিন সকালে সামান্য নাশতা দিয়ে আবারো হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরি পথ দিয়ে অন্য একটি পাহাড়ের ঝিরিতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫ জনের মতো সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। এ সময় তারা কলার পাতায় করে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। পরে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় পুনরায় নিয়ে যায়। সেখানে ১৫/২০ মিনিটের মতো বিশ্রামের সুযোগ দেয়। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে তারা ধাপে ধাপে বিশ্রাম এবং হাঁটার পর ভিন্ন একটি জায়গায় গিয়ে পৌঁছালে আবারো তাকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম খেতে দেয়। র‌্যাব জানায়, অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয় এবং কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয় তার পরিবারকে সেজন্য সতর্ক করে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ওই সূত্র ধরে র‌্যাব অবস্থান শনাক্ত করে। র‌্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেল পাড়ার মধ্যবর্তী কোনো এক স্থান থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ : সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি তল্লাশিচৌকি ও টহল জোরদারেরও নির্দেশনা দেয়া হয়। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার থানাগুলোয় এই নির্দেশনা দেয়া হয় বলে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তিনটি থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে তারা নিজেদের থানার আওতাধীন এলাকার ব্যাংকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান। সেখানে নানা ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি থানার একজন ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার একাধিকবার ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলা হয়। তারপর পুলিশ পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছে, কোনো কোনো ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে অস্ত্র নেই। আবার কোনো কোনো ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীকে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বদলে অন্য কাজ করানো হচ্ছে। এই ওসি আরো বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাদের বলা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়