সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

রাজধানীতে স্বস্তির চলাচলে চাপল এবার ভ্যাটের বোঝা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী সব ধরনের করছাড় হ্রাস করার যে নির্দেশনা রয়েছে সে লক্ষ্যে এবার মেট্রোরেলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায় এনবিআর।
মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এনবিআর এই মওকুফ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে চায় না বলে জানা গেছে। এনবিআর এ সুবিধা অব্যাহত না রাখলে গণপরিবহনটির ভাড়া আরো বাড়বে। বর্তমানে মেট্রোরেলের এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যেতে সর্বনি¤œ ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে ১০০ টাকা ভাড়া লাগে। জানা গেছে, মেট্রোর ভাড়ার ওপর ভ্যাট বসানো নিয়ে আলোচনা চলছে। ঈদের পর পুরোদমে আলোচনা শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতে করে সাধারণ জনগণ নতুন করে ভোগান্তিতে পড়বে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের যাত্রীদের টিকেটের ওপর ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে এনবিআর ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা অব্যাহত না রাখার কথা জানিয়ে দিয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট অব্যাহতি দেয় এনবিআর। আগামী জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে এ সুবিধা।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান রয়েছে। মেট্রোরেল যেহেতু পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গণপরিবহন, তাই মেট্রোর ভাড়াতেও ভ্যাট আরোপ হওয়ার কথা। ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়াতে স¤প্রতি এনবিআরকে চিঠি দেয় ডিএমটিসিএল। কিন্তু এ আবেদন নাকচ করল এনবিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, উন্নয়নের চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়াতে সব খাতেই কর ছাড় কমানো হচ্ছে। তাই এ খাতের ভ্যাট অব্যাহতি বাড়ানো হবে না। সেজন্য জুলাই থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় ১৫ টাকা ভ্যাট দিতে হবে মেট্রোরেলের যাত্রীদের। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এনবিআরকে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব পুনঃবিবেচনা করার আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেল চায় না এখনই যাত্রীদের ভাড়া বাড়ুক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, আমরা এই বিষয়টা গণমাধ্যমে দেখেছি, কোনো কাগজ বা চিঠি হাতে পাইনি। কাগজ হাতে পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন দিলীপ শিকারী দিপু। তার বাসা কমলাপুর। প্রতিদিন মতিঝিল মেট্রো স্টেশন থেকে মিরপুর ১০ পর্যন্ত যাতায়াত করেন তিনি মেট্রোরেলে। মেট্রোর ভাড়ায় ভ্যাট যুক্ত হওয়ার কথা শুনে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, মাস শেষে ৪০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালাতে হয়। এমনিতেই মেট্রোতে ভাড়া একটু বেশি। তারপরও জানজট থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন মিরপুর পর্যন্ত যাওয়া আসায় খরচ হয় ১২০ টাকা। এখন যদি ভ্যাট যুক্ত হয় তবে আমার

মতো মধ্যবিত্তরা এ ভাড়া বহন করতে পারবে না।
প্রায় একই রকম হতাশা প্রকাশ করলেন উত্তরা থেকে পল্টন নিয়মিত যাতায়াত করা ইশরাত ইকরা। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, পল্টনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে প্রতিদিন মেট্রোরেলে করে যাতায়াত করতে হয় তাকে। ভাড়া একটু বেশি হলেও স্বস্তির কথা চিন্তা করেই যাতায়াত করি। কিন্তু এখন যদি ভ্যাট বসানো হয়, তবে তো ভাড়া আরো বাড়বে। চারজনের সংসারে যা বেতন পাই তা দিয়ে চলাচল করতেই হিমশিম খেতে হয়। এখন ভাড়া বাড়ানো হলে তাতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে।
বর্তমানে মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনটি চালু আছে। বিভিন্ন রুটের মধ্যে বর্তমানে মতিঝিল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা, মতিঝিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০, মতিঝিল থেকে শাহবাগ ২০, মতিঝিল থেকে কারওয়ান বাজার ৩০, মতিঝিল থেকে ফার্মগেট ৩০, মতিঝিল থেকে বিজয় সরণি ৪০, মতিঝিল থেকে আগারগাঁও ৫০, মতিঝিল থেকে শেওরাপাড়া ৫০ এবং মতিঝিল থেকে কাজীপাড়ার ভাড়া ৬০ টাকা। এছাড়াও ৬০ টাকা দিয়ে মতিঝিল থেকে মিরপুর-১০ নম্বর, ৭০ টাকায় মতিঝিল থেকে মিরপুর-১১ নম্বরে যাওয়া যাচ্ছে। মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর ১০০ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত করা যাচ্ছে। এ ভাড়ার ওপরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করার কথা জানিয়েছে এনবিআর।
মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট আরোপের বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যৌক্তিক।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের ওপরে ভ্যাট বসানো হলে সরকারের আয়ের উৎস বাড়বে। যদিও সাধারণ জনগণের ভোগান্তি কিছুটা বাড়বে। তবে ভ্যাট বসালে মেট্রোরেলে মানুষ চড়বে না- এমনটা নয়। মেট্রোতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসালে ৬০ টাকার ভাড়ার সঙ্গে আরো ৯ টাকা যুক্ত হবে। তবে এটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। কারণ মেট্রোরেলে মধ্যবিত্ত শ্রেণিই যাতায়াত করে।
বর্তমানে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মূল্যস্ফিতি অনেক বেশি। এর মধ্যে নতুন করে মেট্রোরেলে যাতায়াত ভাড়া বাড়লে সাধারণ মানুষ আরো চাপে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল্যস্ফিতি কমানোর জন্য খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর ওপরে জোর দেয়া যেতে পারে।
রাজধানীর যানজট কমাতে এবং যাত্রী চলাচল দ্রুত করার এখন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে। এখন প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, পুরোদমে চালু হলে মেট্রোরেলে দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী চলাচল করবেন। তখন মাসে ৭২০-৭৩০ কোটি টাকা আয় হবে। মেট্রোরেল যখন পুরোদমে চলবে, তখন প্রতি বছর গড়ে এক হাজার কোটি টাকার মতো পরিচালন ব্যয় হবে। এই খরচের প্রায় ৭৫ শতাংশ আসবে টিকেট বিক্রি থেকে। বাকিটা পাওয়া যাবে স্টেশন প্লাজার দোকান ভাড়া, বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য খাত থেকে।
২০১২ সালে উত্তরা থেকে মিরপুর এবং ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। এটি মেট্রোরেল লাইন-৬ নামে পরিচিত। প্রথম পর্যায়ে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়। গত ৪ নভেম্বর চালু হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। শুরুতে মতিঝিল পর্যন্ত এই মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারিত করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়