সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

গাজায় ত্রাণের কাজ বন্ধে সংকট আরো বাড়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিজেদের ৭ কর্মী নিহত হওয়ার পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা স্প্যানিশ-আমেরিকান সেলেব্রিটি শেফ হোসে আন্দ্রেজ বলেছেন, ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনাটি ‘ভুল’ ছিল না। এটি ‘পরিকল্পিত’ হামলা। কেননা, ত্রাণকর্মীদের একের পর এক গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
ডব্লিউসিকের সঙ্গে কাজ করা আরেকটি মার্কিন ত্রাণ সংস্থা দ্য আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইড (আনেরা)-ও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে, কারণ তাদের স্থানীয় কর্মী ও কর্মীদের পরিবারগুলো বাড়তে থাকা ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। এই দুই ত্রাণ সংস্থা মিলে গাজায় প্রতি সপ্তাহে ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করত। এদিকে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ, ত্রাণ প্রবেশে বাধা ও চলমান সহিংসতায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ দুর্ভিক্ষের মুখে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। ডব্লিউসিকের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সাইপ্রাস থেকে গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ আসার একটি করিডোরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন দুর্ভিক্ষ এড়াতে গাজার উত্তরাংশে ত্রাণ প্রবেশের সুবিধার্থে গত মাসে এই করিডোরটি স্থাপনে ডব্লিউসিকে সহায়তা করেছিল।
সোমবার রাতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েলের নির্ধারিত একটি উপকূলীয় সড়ক ধরে ডব্লিউসিকের একটি গাড়িবহর দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সময় বিমান হামলার শিকার হয়। এর কিছুক্ষণ আগে ডব্লিউসিকে একটি বার্জ থেকে শতাধিক টন খাদ্য সহায়তা নামিয়ে গাজার দিয়ের আল-বালাহ এলাকার একটি গুদামে রেখেছিল। বার্জটি ত্রাণবাহী ৪টি জলযানের সঙ্গে গাজার উপকূলে এসেছিল। ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর ত্রাণের আরো ২৪০ টন খাদ্যসহ অপর জাহাজগুলো সাইপ্রাসে ফিরে যায়।
নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিল সতর্ক করে বলেছে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে পুরো ত্রাণ পদ্ধতিটিই হুমকির মুখে পড়েছে ও খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। ডব্লিউসিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ‘জেনেবুঝেই’ তাদের পরিষ্কার লোগো সংবলিত গাড়িগুলোয় হামলা চালিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করেই তারা পথে বের হয়েছিল।
নিহত ত্রাণকর্মীদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩ জন,

পোল্যান্ডের একজন, অস্ট্রেলিয়ার একজন এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। বাকি একজন ফিলিস্তিনি। ৬ জনের মৃতদেহ নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য গাজা থেকে মিসরে পাঠানো হয়েছে। আর তাদের ফিলিস্তিনি সহকর্মীকে গত মঙ্গলবার নিজ শহর রাফায় দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এ সময় তিনি গাজা পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ উল্লেখ করেন এবং ত্রাণকর্মীদের হত্যার ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেন। একই সঙ্গে সুনাক মানবিক কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধের অবসান এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে আলাপকালে ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষোভ ও উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ঘটনাটির একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেন তিনি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি এই হামলার ঘটনাকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন আর রাতের অন্ধকারে তারা ত্রাণবহরটি ‘শনাক্ত’ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষায় আরো বেশি কিছু করতে ‘তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ লক্ষ্যে সমন্বয়ের আরো উন্নয়ন ঘটাতে তারা অবিলম্বে নতুন একটি ‘মানবিক কমান্ড সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করছেন বলে জানিয়েছেন।
তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, এসব প্রতিশ্রæতি অর্থপূর্ণ কোনো পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে কিনা তা নিশ্চিত নয় তারা। তারা এ-ও বলেছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলা এ পর্যন্ত ১৯৬ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছে।
নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব ও জাতিসংঘ মানবিকবিষয়ক সাবেক প্রধান জ্যান এগল্যান্ড বলেছেন, গাজার মানুষের জন্য ডব্লিউসিকের কার্যক্রম বন্ধ মানে আরো দুর্ভিক্ষ, আরো মৃত শিশু আর চরম পুষ্টিহীনতার জন্য আরো বেশি মহামারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় পুষ্টিহীনতায় অন্তত ২৭ শিশুসহ ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা পরিকল্পিত, দাবি ডব্লিউসিকের : ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেজ গাজায় তার সাহায্য সংস্থার কর্মীদের ‘প্রতিটি গাড়িকে সুপরিকল্পিতভাবে’ লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন। সাহায্য সংস্থার বহরে ৩টি গাড়ি ছিল। এর মধ্যে দুটি ছিল সাঁজোয়া যান, যেখানে পরিষ্কারভাবে সাহায্য সংস্থার লোগো লাগানো ছিল। ৩টি গাড়ির উপরই হামলা চালানো হয়।
হোসে আন্দ্রেজ গত বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ভাগ্য খারাপের মতো এমন কোনো পরিস্থিতি ছিল না যে… ওপস… আমরা ভুল জায়গায় বোমা ফেলছি। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর সঙ্গে আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটা ছিল সত্যিকার অর্থেই সরাসরি একটি হামলা এবং তা ছিল পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত যানবাহনের উপর যেগুলোর গতিবিধি সম্পর্কে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) সবাই জানতো।
নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়াল : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯১ জন আহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা অন্তত ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়