গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : ভারতের সবচেয়ে নিম্নমানের প্রোডাক্ট আওয়ামী লীগ

আগের সংবাদ

বহুমাত্রিক কৌশল আ.লীগের

পরের সংবাদ

শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত চার শতাধিক : স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি ফ্রান্স-মিসর-জর্ডানের

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজার উত্তরে অবস্থিত সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফায় ইসরায়েলি হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত ১৩ দিন ধরে হাসপাতালটিতে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। অভিযানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মীসহ চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজার মিডিয়া অফিসের বরাতে এ খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এই আল শিফা হাসপাতাল থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে হামাস। যদিও হামাস বরাবর আল শিফা হাসপাতালকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
অভিযানের শুরুতে আল শিফায় হামাসের অন্তত দেড়শ সদস্যকে হত্যা এবং ৬০০ হামাস সদস্যকে আটক করার দাবি জানিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে অবরোধ ও অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনা ও সাঁজোয়া যানের ওপর মর্টার ও রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। তবে হতাহতের কোনো তথ্য জানায়নি গণমাধ্যমটি।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয় আরো ৭৫ হাজার ১৯০ জন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় নিহত ১৭ :
এদিকে, গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনের ভিড়ে আবারো নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এই ঘটনায় আহত হন আরো প্রায় ৩০ জন।
এর আগে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের সংখ্যা ১২ বলে জানানো হয়েছিল। ইসরায়েল এর আগেও কয়েক দফায় গাজায় সাহায্যপ্রার্থীদের ওপর এই ধরনের হামলা চালিয়েছে। গতকাল রবিবার এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার আল কুয়েত গোলচত্বরে হামলায় নিহতের

সংখ্যা ১২ জন থেকে বেড়ে ১৭ জনে পৌঁছেছে। হামলায় আরো প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার ওই মোড়ে জড়ো হচ্ছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারা একের পর এক ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে।
এর আগে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট বলেছিল, গত শুক্রবার একই গোলচত্বরে সাহায্য বিতরণের সময় বন্দুক হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সে সময় হাজার হাজার মানুষ সেখানে ময়দা এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী ট্রাকগুলো আসার অপেক্ষায় জড়ো হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী গাজাবাসীরা ফাঁকা গুলি চালায়, তবে ওই এলাকায় ইসরায়েলি সৈন্যরাও গুলি চালায় এবং কিছু চলন্ত ট্রাক খাবার নেয়ার চেষ্টা করা লোকদের আঘাত করে। এতেই হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।
এদিকে হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা মেডিকেল টিম এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের সহায়তায় হতাহতদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার ‘বেদনাদায়ক দৃশ্য’ বর্ণনা করেছেন। এমনকি হামলার পর কিছু আহত লোক মাটিতেও পড়ে ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী এর আগে খাদ্য ও সহায়তা সরঞ্জাম সরবরাহকারী ট্রাকের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর একাধিক বার বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে এবং এতে বহু সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনি নিহত হন।
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা অবশ্য আরো বেশ কয়েকটি আক্রমণের তথ্য সামনে এনেছে। সংস্থাটি বলছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের ওয়াদি গাজা সেতুর কাছে ইসরায়েলি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগাজি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা এবং মধ্য গাজার আল-বুরেজি শরণার্থী শিবিরে কামানের গোলাবর্ষণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি ফ্রান্স-মিসর-জর্ডানের :
এমন পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে ফ্রান্স, মিসর ও জর্ডান। কায়রোতে বৈঠকের পর তারা এই দাবি জানায়। অন্যদিকে ইরান-সমর্থিত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের অঙ্গীকার করেছে। গতকাল এই তথ্য জানায় আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মিসর, ফ্রান্স এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজায় ‘অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ এবং হামাসের হাতে আটক সব বন্দিদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে তিন কূটনীতিকের বৈঠকের পর এই আবেদন জানানো হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজোর্নও। তিনি সেখানে বলেন, তার সরকার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধের ‘রাজনৈতিক’ নিষ্পত্তির জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করবে। তিনি আরো বলেন, সেই প্রস্তাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সমস্ত মানদণ্ড’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা ফের শুরু হচ্ছে :
কায়রোতে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু হচ্ছে বলে নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মিসরের একটি টেলিভিশন স্টেশন। গত শনিবার আল কোয়াহেরা নিউজ টিভিতে এ খবর প্রচার করা হয়। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা গতকাল রবিবার কায়রোতে তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগে তারা কয়রোর মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের আলোচনা ফলাফল কী আসে তা দেখায় অপেক্ষায় রয়েছেন।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় ইসরায়েলের অভিযান স্থগিত রাখার বিনিময়ে হামাসের হাতে এখনো জিম্মি ১৩০ ইসরায়েলির মধ্যে ৪০ জনকে মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হামাস গাজা যুদ্ধের পূর্ণ অবসান এবং ভূখণ্ডটি থেকে সব ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানিয়েছে। যা কোনোভাবেই মানতে রাজি নয় ইসরায়েল। তারা বলেছে, হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করা পর্যন্ত তাদের অভিযান চলবে। তবে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে তারা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়