মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

বহুমাত্রিক কৌশল আ.লীগের

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : জাতীয় নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই বেজে উঠেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দামামা। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে মাঠ থাকবে খোলা। কোনো প্রার্থীকেই নৌকা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলটি। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এটি একটি নির্বাচনী কৌশল। অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্যই প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। এই কৌশল শুধু জমজমাট নির্বাচনই নয়; তৃণমূলের রাজনীতিতে বিভাজন ঠেকাবে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায়ও ভূমিকা পালন করবে। কারণ, এক নেতাকে নৌকা দিলে অন্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হতে পারেন, যা দলের ভাবমূর্তি ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী বলে কিছু থাকবে না। কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও দরকার হবে না। অন্যদিকে এই কৌশলে বিএনপিকে উভয়মুখী চাপে রাখা যাবে। বিএনপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিলে সংসদ নির্বাচন বর্জনে তাদের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হবে। আর অংশ না নিলে দলের অসংখ্য নেতা এই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা চাপে পড়বেন। এসব বহুমাত্রিক হিসেব-নিকেশ থেকেই উপজেলায় নৌকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন দলটির।
নেতারা বলছেন, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উন্মুক্ত করে দিয়ে এক ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এই নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে। তাদের ভাষ্য, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটিকে দেশে-বিদেশে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে চায় ক্ষমতাসীনরা। দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেয়ার আওয়ামী লীগের অবস্থানের পেছনে বিএনপিসহ বিরোধীদের ভোটে আনাও অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়া সংসদ নির্বাচন বর্জন করা রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি কিছুটা হলেও চাপে পড়বে। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর বিএনপি উপজেলা বা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করলে তাদের দলের অনেকেই স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেবেন। আবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে সংসদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল, এমনটা প্রমাণিত হবে।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া শুরুর পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিপাকেও পড়তে হয়েছে। আগে একজনকে প্রতীক দিলে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনই তৃণমূলে বিভেদ-বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিপাকে পড়তে হয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে। একেক নেতা একেক প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়িয়েছে। তবে নির্বাচনে দলের যে কেউ ইচ্ছা করলেই প্রার্থী হতে পারবেন না। যোগ্য, দক্ষ, জনসংযোগ রয়েছে- এমন একাধিক নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে ৭ জানুয়ারির

নির্বাচনের মডেল অনুসরণ করতে চায়। যেখানে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী থাকবেন। যিনি প্রচ্ছন্নভাবে দলের সমর্থন পাবেন। অন্যজন বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বিষয়টি নজরদারিতে রাখবেন। যথেচ্ছভাবে যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দাঁড়ায় এ ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বসবেন এবং একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে নির্বাচনে প্রার্থীরা সহিংসতায় জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি বা অন্যরা কোনো প্রার্থীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন দিতে পারবে না।
উপজেলায় একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন আপনাদের অনুরোধে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর আগে আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে নৌকা দিয়েছি। এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কতটা প্রতিযোগিতামূলক, কতটা প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হবে দেখা হবে। তবে উপজেলা নির্বাচনে এমপিরা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সংসদ সদস্যরা নির্বাচনে নিজের লোক জেতাতে প্রভাব বিস্তার করলে দল কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় যেন শেষ পর্যন্ত বিএনপির হাতে উপজেলার চাবি না চলে যায় সে জন্য এখন থেকেই সতর্কতা নেয়া হচ্ছে। কারণ নৌকা প্রতীক না থাকায় বিএনপি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে। তবে আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় তৃণমূলে বিভক্তির আশঙ্কা বাড়বে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০টির বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ৬২ জন। এর ফলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ অবস্থান এখনো রয়ে গেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি তৃণমূলের শৃঙ্খলা বজায় রাখার দিকটিও ভাবছে আওয়ামী লীগ।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। সংগঠন থাকলেই সমস্যা থাকবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের স্থানীয় পর্যায়ে দ্ব›দ্ব সংঘাতে ভুলে পরস্পরের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতারা (সাবেক বা বহিষ্কৃত) অংশ নিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপির নেতারা অংশ নেবেন বলে আশা করছি।
এদিকে চারটি ধাপে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া যাবে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল। মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ভোট গ্রহণ ৮ মে। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ৯টি জেলার ২২টি উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে। জেলাগুলো হলো- কক্সবাজার, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, জামালপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর, পিরোজপুর ও মানিকগঞ্জ। প্রথম ধাপে এসব জেলার ২২টি উপজেলায় ভোট হবে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের ভোট ২৩ মে, তৃতীয় ধাপের ভোট ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়