গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : ভারতের সবচেয়ে নিম্নমানের প্রোডাক্ট আওয়ামী লীগ

আগের সংবাদ

বহুমাত্রিক কৌশল আ.লীগের

পরের সংবাদ

বুয়েটে হার্ডলাইনে সরকার

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ সম্প্রতি নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইসলামী ছাত্রশিবির ও হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান ঘটেছে বলে মনে করছে সরকার। সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছে এই সংগঠন দুটি। এরই অংশ হিসেবে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক চর্চা করা থেকে নানাভাবে বাঁধাগ্রস্থ করতে তৎপর তারা; যা অরেকটাই স্পষ্ট। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি অংশেরও দাবি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ ক্যাম্পাসে স্বার্থ হাসিল করছে। তবে এ বিষয়ে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্যে তার আভাসও মিলেছে কিছুটা। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও বুয়েট ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছে। একপ্রকার চ্যালেঞ্জ দিয়েই সংগঠনটির শীর্ষ নেতাসহ কয়েক হাজার কর্মী গতকাল প্রবেশ করেছে বুয়েট ক্যাম্পাসে। এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
বুয়েটের ঘটনায় সরকার যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে সরকারের দায়িত্বশীল দুইজন মন্ত্রীর বক্তব্যে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও একই মত। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে- বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে যে আন্দোলন হচ্ছে, তার পেছনে জঙ্গিবাদী কিংবা উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগও রয়েছে। সরকার বিষয়গুলো অবশ্যই খতিয়ে দেখছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বুয়েটের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। সেখানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে একটা অপরাজনীতি ও জঙ্গিবাদের কারখানায় পরিণত করা হবে, এটা যাতে না হয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। এ রকম কিছু পাওয়া গেলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে। তিনি বলেন, বুয়েটে সেদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। আর আমি রাজনীতি করি বলে বুয়েটে যেতে পারব না- এটা কোন ধরনের আইন? কোন ধরনের নিয়ম?
বুয়েট ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে নানা ঘটনায় জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদী মানসিকতার আলোচনা বারবার আসছে জানিয়ে শনিবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বুয়েটের চলমান আন্দোলনে পেছন থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে কিনা, পেছন থেকে কেউ জঙ্গিবাদী কিংবা উগ্রবাদী মানসিকতার কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা, সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এই আলোচনাটা বারবার আসছে। তিনি বলেন,

কিছুদিন আগেও অনেকে অভিযোগ করেছেন কিছু জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী গোপনে সেখানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমন একটি আলোচনা ও সমালোচনা ছিল। সে বিষয়টি আমরা আরো গভীরভাবে তদন্ত করব। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করবে। সেটা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, সব প্রতিষ্ঠানে। পেছন থেকে কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা, পেছন থেকে জঙ্গিবাদী ও উগ্রবাদী মানসিকতার কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা, সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে বুয়েটের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুয়েট ক্যাম্পাস ও এর আশপাশ এলাকায় একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানা গেছে। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, বুয়েটে আন্দোলনের নামে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের তৎপরতা আছে কিনা, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে আমাদের টিম রয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করছি। তদন্ত করে পরবর্তী সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আন্দোলন-সংশ্লিষ্টতায় গতকাল পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
রাজনৈতিকভাবেও বুয়েটের ঘটনাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন বুয়েটে যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে কথা বলে তারা গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। এরা সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী। এদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বুয়েটে যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে কথা বলে তারা গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। এরা সা¤প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কখনোই এ ধরনের কথা বলতে পারে না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বুয়েটেও গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ দিতে হবে। এই সুযোগকে যদি কেউ বাধাগ্রস্ত করে সেটি হবে অগণতান্ত্রিক। দেশের ছাত্র ও যুব সমাজ কখনোই তা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের নামে বুয়েটে ছাত্রদের ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবান্বিত ভূমিকা একটি গোষ্ঠী অস্বীকার করছে। এই বুয়েটের বহু শিক্ষক ও ছাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। সেই বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গগনে গণতান্ত্রিক শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমাননা করা হচ্ছে। এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। সংবিধান দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে।
এদিকে বুয়েটে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে সেখানে পুরোদমে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করবে সংগঠনটি। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এমন ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা ‘অসাংবিধানিক’। আমরা সেখানে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালুর দাবি জানাচ্ছি। বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের আহ্বান- অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। যে নিয়ম আপনারা শুরু করেছেন সেটি কালাকানুন, সেটি কালো আইন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কোনো আইন নেই। যদি থেকেও থাকে সেটি সংবিধানবিরাধী। আমরা শহীদ মিনার থেকে বুয়েট প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিচ্ছি, অনতিবিলম্বে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। বুয়েট শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির সিট ফিরিয়ে দিতে হবে। দাবি মানা না হলে ছাত্রলীগ জানে কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা বুয়েটই বন্ধ রেখেছে। সেখানে নিষিদ্ধ রাজনীতির চাষাবাদ হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিক রয়েছে। এখানে র‌্যাগিং, ‘ভাই’ ও গেস্টরুম কালচার রয়েছে। এটি পরিবর্তনের উপায় আরো ভালো রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা, রাজনীতি বন্ধ করা নয়। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির কাঠামো কেমন হবে তা শিক্ষার্থীরাই নির্ধারণ করবে। তবে সেখানে রাজনীতি থাকতে হবে।
এর আগে শনিবার বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে মধ্যে গতকাল শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন ছাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ স্বার্থ হাসিল করছে। হিযবুত তাহ্?রীর ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো সংগঠনগুলো এখানে কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়