গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : ভারতের সবচেয়ে নিম্নমানের প্রোডাক্ট আওয়ামী লীগ

আগের সংবাদ

বহুমাত্রিক কৌশল আ.লীগের

পরের সংবাদ

নাজাতের প্রথম দিন : ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ পবিত্র মাহে রমজানের একুশতম দিবস। রহমত, মাগফেরাত আর নাজাত- এই তিন ভাগে তিনটি দশকে বিভক্ত পবিত্র রমজানের বরকতময় মাস। সে আলোকে আজ রোজাদারের জন্য রমজানের শেষ দশকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি তথা নাজাতের প্রথম দিন। উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর রেওয়ায়েতে পবিত্র বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে- ‘রমজানের শেষ দশকের আগমন ঘটলে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় মনোবলে নিজেকে সংহত করতেন, রাত্রিগুলোয় নিজে জাগরণ থাকতেন এবং গৃহের অধিবাসী অন্যদেরও রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকার প্রেরণা জোগাতেন।’ রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে লাইলাতুল কদর, এতেকাফ পালনের সুযোগ, ইবাদত পালন ও আমল প্রক্রিয়ায় রাসুলের (সা.) অধিকতর মনোনিবেশ, ইহতেসাব তথা আত্মবিশ্লেষণ ও আমলের ন্যায়ানুগ হিসাবের বিষয়ে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি ও রমজানের বিদায়সহ নানাবিদ কারণে এ দশকটি রোজাদারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মহান আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এ মানুষকেই তিনি পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদাও প্রদান করেছেন। সমগ্র সৃষ্টিকুলের ওপর সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেয়ার পরও অজস্র কৃপা-ভাণ্ডারে মানুষকে তিনি মমতার বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছেন। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অপরিসীম সৌন্দর্য দান করেও তিনি সেই মানুষকেই আবার সৃষ্টিকুলের সর্বনিকৃষ্ট হিসেবে জরাগ্রস্ততার অতল দেশে অধঃপতিত বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মানুষ তার কর্মের বিচারেই পারলৌকিক জীবনে সীমাহীন ও কল্পনাতীত দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার স্থান জাহান্নামের উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডের জ¦ালানিতে পরিণত হবে। কত ভয়াবহ সেই নরকাগ্নির আজাব তা ভাবতেই শরীর-মন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। উম্মতে মোহাম্মাদির (সা.) ভাগ্যাকাশে রয়েছে বর্ণনাতীত বরকতের মাহে রমজান- যার শেষ দশকে সম্পন্নকৃত ইবাদতের পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ সিয়ামব্রত পালনকারীদের জাহান্নামের সেই ভয়াবহ শাস্তি থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করে দেবেন। এ বিষয়েই মহানবীর (সা.) ঘোষণা- ‘ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নার’ অর্থাৎ রমজানের শেষ দশক হলো রোজাদারের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির অবলম্বন।
পবিত্র রমজানের শেষ দশকই হলো বান্দার জন্য তার বহুল প্রত্যাশিত পারলৌকিক নাজাতের উসিলা। এ দশকটির অত্যধিক গুরুত্ব, ফজিলত ও তাৎপর্যের পেছনে রয়েছে সহস্র মাসের চেয়েও উত্তম রজনি ‘লাইলাতুল কদর’-এর উপস্থিতি। আর লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ হলো, এ রাতেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র আল কুরআন; যা মহান আল্লাহর মহিমাময় বাণী এবং মানবজীবনের জন্য পরিপূর্ণ এক নির্দেশিকা। তাই রমজানের শেষ দশকে পালনকৃত নেক আমলগুলোর বিনিময়ে, লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত বরকতের ভিত্তিতে এবং নির্ভুল ও মহাপবিত্র কুরআন মাজিদের অব্যর্থ সুপারিশের বদৌলতে রোজাদার বান্দাগণ দোযখের আজাব থেকে নাজাত লাভে ধন্য হবেন।
রমজানের শেষ দশকে আমাদের কর্তব্য হলো, ইবাদত পালনের পরিসর বা মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়া। কেননা এই দশকের মধ্য দিয়েই রমজান আমাদের থেকে তার বিদায়ের বার্তাও ঘোষণা করে। তাই আমরা নিবিষ্টচিত্তে আমাদের রোজা-পালন, তেলাওয়াতে কুরআন, কিয়ামুল্লাইল, তাহাজ্জুদ, ইস্তেগফার, তওবা ও মোনাজাতসহ এই দশকে সব ইবাদত পালনে ব্রতী হবো। বিশেষ করে আমাদের আন্তরিক প্রয়াস চালাতে হবে যেন আমরা কোনোভাবেই লাইলাতুল কদরের অপরিসীম ফজিলত ও বরকত থেকে মাহরুম না হয়ে যাই। সেজন্য রমজানের একুশতম, তেইশতম, পঁচিশতম, সাতাশতম ও ঊনত্রিশতম রাতকে আমরা একনিষ্ঠ ইবাদতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করব। কেননা উপরিউক্ত পাঁচ রজনির কোনো এক রজনিতেই মহিমান্বিত শবে কদর আমাদের জন্য তার অগণিত রহমত ও বরকতের শান্তিময় সুধা নিয়ে হাজির হবে; কেউ যদি এ রাতের ফজিলত হাসিল করা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে তারচেয়ে দুর্ভাগা ও বঞ্চিত আর কেউ হতে পারে না। মহামহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কুরআনুল কারিম ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভাবের এ পুণ্যময় রজনির নেক আমলগুলো আমাদের জন্য ‘ইতকুম মিনান্নার’ তথা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের হাতিয়ার হবে।
মহান আল্লাহর একটি বাণীর উল্লেখপূর্বক এখানে বিশেষভাবে বলতে চাই, ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্য়া হাসানা ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান্নার’ অর্থাৎ হে রব! আমাদেরকে ইহকালীন ও পারলৌকিক উভয় জীবনে কল্যাণ দান করুন এবং দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পরকালীন জীবনে সাফল্য লাভ ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে মওকুফের প্রার্থনার পাশাপাশি পৃথিবীর যাবতীয় অকল্যাণ ও অসহনীয় বিষয় থেকেও পরিত্রাণ লাভের জন্য তাঁর কাছে মিনতি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। উল্লিখিত বাণীর আলোকে আমরা পৃথিবীজুড়ে চলমান করোনা মহামারি থেকে মুক্তির নিমিত্তে এই পবিত্র রমজানের বরকতময় শেষ দশকে মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি; তিনি যেন আমাদের দুনিয়ার সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন এবং পরকালীন জীবনে যেন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত দান করেন (আমিন)।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়