এমসিসিএইচএসএলে দুর্নীতির অভিযোগ

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে দুষ্ট চক্রের থাবা

পরের সংবাদ

মাহে রমজানের বৈশিষ্ট্য : ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হিজরি সনের বারোটি মাসের মধ্যে মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত। নানাবিধ বৈশিষ্ট্যের কারণে পবিত্র রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাহে রমজানের এইসব অনুপম বৈশিষ্ট্য এবং শ্রেষ্ঠত্বের মূলে রয়েছে মহান আল্লাহর বাণীসমূহের নির্যাস এবং রাসুলে পাকের (সা.) হাদিস শরিফের মর্মবাণী; যার পরিপ্রেক্ষিতে মাহে রমজানের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ ও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে আমরা সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারি। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-নিসৃত যেসব কারণে মাহে রমজান বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, এই আলোচনায় আমরা সেসব বিষয়ই তুলে ধরব।
পবিত্র রমজান মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ হওয়ার মাস। রমজানের শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান কারণও এটি। পৃথিবীর তাবত জনগোষ্ঠীর জীবনমানের পরিচালনা ও সমৃদ্ধায়নের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনাসহ যে মহাগ্রন্থ আল্লাপাকের পক্ষ থেকে নাজিল করা হয়েছে, সেই আল কুরআনুল কারিম এই বরকতময় মাসেই প্রথম ধুলির ধরায় আগমন করেছিল। সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘শাহরু রামাদানাল্লাযি উনযিলা ফিহিল কুরআন’ অর্থাৎ রমজান সেই মাস, যাতে অবতীর্ণ করা হয়েছে আল কুরআন। উল্লেখ্য, তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল কিতাবও এই মাহে রমজানেই নাযিল করা হয়েছে। এই রমজান একমাত্র রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস হিসেবে বৈশিষ্ট্যময়, যার পুরো মাসটিই মহান আল্লাহর নির্দেশে রোজা রাখা ফরজ তথা অবশ্য পালনীয় বিষয়। অন্য কোনো মাসে রোজা পালনকে আল্লাহপাক ফরজ ঘোষণা করেননি; এই মাসে যারা রোজাব্রত পালন করবে, রোজাই কেয়ামতের ময়দানে রোজাদারের জন্য সুপারিশের কারণ হবে। এছাড়া রোজাব্রত পালনের অন্যান্য ফায়দা তো আছেই! এ মাসেই ‘ফুতিহাত আবওয়াবুল জান্নাহ’ তথা জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দ্বারসমূহ রাখা হয় বন্ধ করে। মানবমনে কুমন্ত্রণার সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করে রাখা হয় এ মাসে। দুনিয়াবাসীর রহমতের জন্য এ মাসে আসমানের দরজাগুলোও খুলে দেয়া হয়। সহস্র মাসের চাইতেও শ্রেষ্ঠ যে রাত, সেই পবিত্র শবেকদর এই মাসেই নিহিত রয়েছে। এই পবিত্র রাতটি অনেক রহমত ও বরকতের, এ রাতের রয়েছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা, আছে ফজিলতের পুণ্য-ভাণ্ডার। তামাম রাতটিই থাকে শান্তিপ্রদ, রহমতের চাদরে আচ্ছন্ন, বরকতের ভাণ্ডারে ঘেরা এবং ঊষার উদয় না হওয়া পর্যন্ত বান্দার প্রার্থনা মঞ্জুর হতে থাকে। এ রাতে আসমান থেকে প্রতিপালকের নির্দেশে মানুষের কল্যাণে অবতীর্ণ হয়ে থাকে রহমতের ফেরেশতা, যাঁদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন হজরত জিব্রাইল (আ.)।
পবিত্র মাহে রমজানে রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, রোজার মাসে রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। রমজানের দিনে এবং রাতে মহান আল্লাহ তাঁর অগণিত বান্দাকে পাপাচারের দায় থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এটি বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। মহানবী (সা.) বলেছেন, সে ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, যে নাকি রমজান পেল কিন্তু তার গুনাসমূহ মাফ করাতে পারল না। রমজানের প্রতি রাতে মহান আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। রমজানে কিছু মুহূর্ত আছে যখন রোজাদার আল্লাহপাকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে তিনি লজ্জা পান এবং ক্ষমা করে দেন। ইফতারির প্রাক্কালে কিংবা সেহরির সময়ে দোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর।
পবিত্র রমজান পরম ধৈর্য ও সহনশীলতা শেখা ও চর্চার এক উপযুক্ত সময়। মহান আল্লাহর কাছে সবুর এখতিয়ারকারী ব্যক্তির সুসংবাদ রয়েছে। ‘ওয়াল্লাহু মাআসসাবেরিন’ তথা মহান আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীর সঙ্গে রয়েছেন। রমজানে যে ধৈর্য ও সহনশীলতার তালিম আমরা গ্রহণ করে থাকি নিজেদের কার্যক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলে সমাজ উপকৃত হবে। পবিত্র রমজানে কৃত আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ মাসে সম্পন্ন করা যে কোনো আমলের প্রতিদান অন্য মাসের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে মর্মে ইসলামে ঘোষণা রয়েছে। এমনকি এ মাসে একটি ওমরাহ আদায় করলে মহানবী (সা.) সেটিকে তাঁর সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এটি ইসলামের ইতিহাসে বিজয়ের মাস; বদরের রণাঙ্গনে তথা ইসলামের প্রথম সম্মুখ সমরে মুসলমানদের অস্তিত্বের জন্য যা ছিল অনিবার্য সেই প্রত্যাশিত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। এমনকি ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ও এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল।
রমজানের সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হলো পরম রবের সঙ্গে তার সৃষ্ট বান্দার রোজাব্রত পালনের মধ্য দিয়ে একনিষ্ঠ ও গভীর নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্কের একটি শুভসূচনা ঘটে। মহান আল্লাহ এ মাসে ঘোষণা করতে থাকেন, হে ভালো কাজ সম্পন্নকারী! সামনে অগ্রসর হও! আর ওহে মন্দ কাজের লোক! থেমে যাও! পবিত্র রমজানের উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যাবলির আলোকে নিঃসংকোচে বলতে পারি, মানুষ ও মানবতার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের লক্ষ্যেই এই পবিত্র মাসটি বিশ্ববাসীকে উৎসর্গ করা হয়েছে; আমরা যদি এ মাসের যথাযথ পবিত্রতা ও নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারি তাহলেই মহানবী (সা.) ঘোষিত ‘শাহরুল আযিম’ তথা মহান ও শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে রমজানের প্রকৃত ফায়দা হাসিল করতে আমরা সক্ষম হব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়