এমসিসিএইচএসএলে দুর্নীতির অভিযোগ

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে দুষ্ট চক্রের থাবা

পরের সংবাদ

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি তরুণ নিহত : পুলিশের সাহায্য চেয়ে মিলেছে প্রাণঘাতী গুলি

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নিজের বাসায় পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন। পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে তিনি ফোন করেছিলেন। পুলিশও এসেছিল সময়মতো। তবে সাহায্যের বদলে তার ভাগ্যে মিলেছে মৃত্যুর করুণ পরিণতি।
উইন রোজারিও নামে ১৯ বছর বয়সি ওই তরুণের বাড়ি গাজীপুরে। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকার ওজোনপার্কে ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ অ্যাভিনিউয়ে। স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে তাদের দ্বিতীয় তলার অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্য, তিনি ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’। তবে পুলিশি বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও (১৭)। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তাদের মা ছেলেকে বাধা দিচ্ছিলেন। তখন পুলিশের গুলি করার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই বাসা থেকে পুলিশের হটলাইন ৯১১ নম্বরে কল করে দ্রুত সহায়তা চান উইন। কয়েক মিনিটের মধ্যে টহল পুলিশ ওই বাসায় যায় পরিস্থিতি দেখার জন্য। পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, বাসায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা উইনকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। তখন দুই পুলিশ সদস্যই গুলি ছুড়ে তাকে বশে আনেন। এর আগে তার মা তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিলেন।
ওই মুহূর্তে আত্মরক্ষার্থে পুলিশের গুলি ছোড়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বলে দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা চেল। তবে কতটি গুলি করা হয়, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। পরিবার অবশ্য বলেছে, ৬টি গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উইনকে অ্যাম্বুলেন্সে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে উইনের মা ইভা কস্টা (৪৯) দাবি করেছেন, তার ছেলে পুলিশের দিকে কাঁচি হাতে ধাওয়া করেনি। পুলিশের বডি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই তা স্পষ্ট হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, উইন ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’ বলে তাদের জানিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও। উইনকে ঠেকাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আত্মরক্ষার প্রাথমিক অস্ত্র ‘টেজার’ প্রয়োগের চেষ্টা করলে তার মা তাদের ঠেকান। তবে পুলিশের এ বক্তব্য ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছেন ইভা। তিনি বলেন, উইন পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায়নি, মাকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল।
ইভা বলেন, উইন নিউইয়র্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। সে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল। ইন্টারভিউতে টিকে গেছে। মানসিকভাবে সে সুস্থ না থাকলে ইন্টারভিউতে টিকে কীভাবে?
এক সাক্ষাৎকারে উৎস রোজারিও বলেছে, গুলি ছোড়ার আগে পুরোটা সময় তার মা ভাইকে জাপটে ধরে রেখেছিলেন। এমনকি ভাইকে ধরা রাখা অবস্থায়ই গুলি ছোড়ে পুলিশ। এই গুলি ছোড়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও (৫২) ও মা ইভা কস্টা (৪৯) দুজনই জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে কাজ করেন। সপরিবারে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ২০১৪ সালে। ঘটনার সময় ফ্রান্সিস অফিসে ছিলেন।
জ্যাকসন হাইটসসংলগ্ন লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জেমস রয় বলেন, মাঝেমধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে উইন চার্চে আসত। আমি তাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। মানসিকভাবে সামান্য অসুস্থ ছিল। ৬ মাস আগেও সে জ্যামাইকা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে তাকে কখনো অস্থির হয়ে কোনো বাজে কাজে লিপ্ত হতে দেখিনি বা শুনিনি।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, আমাদের দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই বাসায় গিয়েছিল জরুরি সহায়তা করতে। তারা কখনোই কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগে আগ্রহী ছিলেন না। উইন যদি সাড়া দিতেন, তাহলে এমন পরিস্থিতির অবতারণা হতো না।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এরই মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তার অস্ত্র নিয়ে নেয়া হয়েছে। জন চেল জানান, পুরো ঘটনার দৃশ্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
এই ঘটনার দ্ুিদন আগেই এক সন্দেহভাজনের হাতে এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন কুইন্স বাসস্টপেজের সামনে পার্ক করা একটি গাড়ি থেকে এক ব্যক্তিকে সরানোর চেষ্টা করার সময় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি অফিসার জোনাথন ডিলারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়