এমসিসিএইচএসএলে দুর্নীতির অভিযোগ

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে দুষ্ট চক্রের থাবা

পরের সংবাদ

আইসিসির এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের সৈকত

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন মাইলফলকের সূচনা করলেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইসিসির বার্ষিক পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৈকতকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেল থেকে এলিট প্যানেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০০৬ সালে আইসিসির আন্তর্জাতিক প্যানেলে যুক্ত হন শরফুদ্দৌলা সৈকত। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরের ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হয় তার। এখন পর্যন্ত পুরুষদের ১০টি টেস্ট, ৬৩টি ওয়ানডে ও ৪৪টি টি-টোয়েন্টিতে অন-ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি মেয়েদের ১৩টি ওয়ানডে ও ২৮টি টি-টোয়েন্টিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সব মিলিয়ে ১১৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের আর কোনো আম্পায়ারের ৭০ ম্যাচের অভিজ্ঞতাও নেই। মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার মারাই এরাসমাস অবসরে যাওয়ার পর থেকে সৈকতের এলিট প্যানেলে ঢোকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ছিলেন সৈকত। ‘এ’ দল ও জাতীয় দলে খেলেছেন, সেই সময়ের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আসর আইসিসি ট্রফিতে অংশ নিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো খেলার সুযোগ পাননি। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে নাম লেখান আম্পায়ারিংয়ে। এলিট প্যানেলে সুযোগ পাওয়া সৈকত বলেছেন, ‘আইসিসির এলিট প্যানেলে নাম আসাটা দারুণ সম্মানের। আমাদের দেশের প্রথম ব্যক্তি বলে এটি আরো বিশেষ ব্যাপার। আমার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে, তার প্রতিদান দিতে উন্মুখ হয়ে আছি। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং আরো চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আমি।’
সর্বশেষ বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন-ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করা সৈকত আরো বলেন, ‘আইসিসি ও বিসিবিকে ধন্যবাদ, আমাকে সমর্থন জোগানোর জন্য। সহায়তা ও নির্দেশনার জন্য আমার অন্য সহকর্মীদেরও ধন্যবাদ। আমার পরিবার ও বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই আমাকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য।’ নিজের সাফল্যের বিষয়ে বলেন, ‘ভালো আম্পায়ারিং করে মুগ্ধ করতে পেরেছিলাম, একটা ভাবমূর্তি গড়তে পেরেছিলাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে গিয়েও নার্ভাস ছিলাম না। আমার মনে হয় সেটিরই পুরস্কার আজকের এই অর্জন।’ আইসিসির আন্তর্জাতিক প্যানেল থেকে এবার এলিট প্যানেলে আম্পায়ার নির্বাচন করার জন্য যে নির্বাচক কমিটি কাজ করেছে, তাতে ছিলেন আইসিসির ক্রিকেট মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খান, সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, সাবেক আম্পায়ার টনি হিল এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শক মাইক রাইলি।
আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস সৈকত অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আইসিসি এলিট প্যানেলের আম্পায়ার হওয়ায় শরফুদ্দোউলা সৈকতকে অভিনন্দন।
বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এ প্যানেলে আসার অর্জনের স্বীকৃতি দিতে চাই। অনেক বছর ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও আইসিসি টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য এটি তার প্রাপ্য পুরস্কার।’
২০২৩ পুরুষ বিশ্বকাপের আগে ২০১৭ ও ২০২১ সালে আইসিসির নারী বিশ্বকাপ, ২০১৮ সালে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেন সৈকত। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সৈকত। যেখানে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিরপেক্ষ একটি সিরিজেও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দায়িত্ব পালন করেন আম্পায়ার সৈকত। সেখানে ব্রিসবেন টেস্টে ছিলেন অন-ফিল্ড দায়িত্বে। এর আগে অ্যাডিলেডে ছিলেন টিভি আম্পায়ার হিসেবে। সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এদিকে সৈকতের এলিট প্যানেলে আসার দিনে আইসিসির ম্যাচ রেফারিদের এলিট প্যানেল থেকে বাদ পড়েছেন ক্রিস ব্রড। ২০০৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসা ব্রড পরিচালনা করেছেন ১২৩টি টেস্ট, ৩৬১টি ওয়ানডে ও ১৩৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।
আইসিসির প্যানেল আম্পায়ার হিসেবে লম্বা সময় কাজ করার পর সৈকত এলিট প্যানেলে প্রবেশ করলেন। প্যানেল আম্পায়ারে রয়েছে বাংলাদেশের আরো তিন আম্পায়ার গাজী সোহেল, তানভীর আহমেদ ও মাসুদুর রহমান মুকুল। সৈকত যে পথ খুলে দিলেন একটা সময়ে বাকিরাও একই পথে হাঁটবেন এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। আগে বাংলাদেশের শুধু একজন আম্পায়ার দেশের বাইরে টেস্টে আম্পায়ার হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। শরফুদ্দৌলা সৈকতের আগে ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্ট পরিচালনা করেছিলেন এনামুল হক মনি।
সৈকতের যোগ দেয়ায় আইসিসির এলিট প্যানেলে আম্পায়ারের সদস্য দাঁড়াল ১২ জন। এমিরেট আইসিসি এলিট প্যানেল অব আম্পায়ারদের বাকিরা হলেন- কুমার ধর্মাসেনা (শ্রীলঙ্কা), ক্রিস্টোফার গ্যাফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটলবারো (ইংল্যান্ড), নীতিন মেনন (ভারত), আহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রেইফেল (অস্ট্রেলিয়া), রডনি টাকার (অস্ট্রেলিয়া) ও জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়