আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

আগের সংবাদ

বাজার তদারকি দৃশ্যমান নয়

পরের সংবাদ

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী : বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করব

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া বিএনপি নেতাদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, তাহলে বিশ্বাস করব তারা সত্যি ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা তারা খেতে পারবে কি না এ উত্তর তাদের দিতে হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির,

উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ। আলোচনা সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির এক নেতা (রুহুল কবির রিজভী) তার গায়ের চাদর খুলে বলে দিয়েছেন, ভারতের পণ্য ব্যবহার করবেন না। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন। তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? তারা বউদের কাছ থেকে শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না? আমি বিএনপি নেতাদের বলব, তাদের বউরা যেন ভারতীয় শাড়ি না পরেন। যেদিন ওগুলো এনে অফিসের সামনে পোড়াবেন, সেদিন বিশ্বাস করব, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন।
বিএনপি নেতারা কি ভারতীয় মসলা ব্যবহার বন্ধ করতে পারবেন? এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করছি, মিজোরাম থেকে আদা আনি। মসলাপাতি, আদা, ভারত থেকে যা কিছু আসছে তাদের কারো রান্না ঘরে যেন এ ভারতীয় মসলা দেখা না যায়। তাদের মসলা ছাড়া রান্না করে খেতে হবে। এটা তারা খেতে পারবেন কি না সেই জবাবটা তাদের দিতে হবে। তারা রং-ঢং করতে ওস্তাদ, এটা আমরা আগেও দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু আঁতেল বুদ্ধিজীবী আছে। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না। এদের কিছুই ভালো লাগে না। তারা ওঁৎ পেতে বসে আছে, কখন কেউ তাদের ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের যে দলটি বড় বড় কথা বলে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সবাই না কী পালিয়ে গেছে! আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করল? শুধু যুদ্ধ পরিচালনা নয়, সশস্ত্র বাহিনীর গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে ভাগ করা হয়। এক একটা সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেক্টরে যিনি দায়িত্ব ছিলেন তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পায়, জিয়াউর রহমান একটা বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। এই কথা নিশ্চয়ই তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এটাও ভুললে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন মেজর।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করেছি। ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯টা বছর এই জাতির দুর্ভাগ্যের বছর। এই দেশটি ছিল পরাধীন। এ দেশের মানুষ ছিল শোষিত ও বঞ্চিত। সেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বাধীনতার বিজয় এনে দেয়া একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারীর জন্য সম্ভব। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশে ইতিহাস বিকৃতির পালা দেখেছি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম কলকাতায়। ভারত-পাকিস্তানের যখন বিভক্ত হয়, তখন তারা কিন্তু পূর্ব বাংলায় আসেনি, তারা করাচিতে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেখানে পড়াশোনা করে। সেখানেই আর্মিতে যোগ দেয়। সেখান থেকে কার্যাদেশ করে সামরিক অফিসার হিসেবে পূর্ব বাংলায় এসেছিল দায়িত্ব পালন করতে। এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু তার মনে তো পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে। তার প্রমাণও আছে। স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো, এই প্রমোশনগুলো কে দিয়েছে? এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছে। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও ভুলে যায়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস বিকৃত করে এখনো ভাঙা রেকর্ডের মতো ভুলে যাচ্ছে। ওদের কখনো আক্কেল হবে না। এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, তখন তারা কে কোথায় ছিল? যিনি (মঈন খান) বলেন যে ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গিয়েছিল? তার বাবা (মোমিন খান) কে ছিল? স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তখন খাদ্য সচিব ছিল। এই খাদ্য সচিব বেইমানি করে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে দুর্ভিক্ষ ঘটিয়েছিল। জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তখন পুরস্কার পেয়েছিল। তাকে মন্ত্রীর মর্যাদা উপদেষ্টা বানিয়েছিল। সেই মঈন খানের বাবা মোমিন খান। সে ছিল খাদ্য সচিব। জাহাজ ফিরিয়ে দিয়ে খাবার আসতে দেয়নি বাংলাদেশে, দুর্ভিক্ষ ঘটানো হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে ছিল। আমি ৮১ সালে দেশে আসি। সারা বাংলাদেশ ঘুরি। তখন প্রতি বছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে পরিবর্তন তারা করতে পারেনি। কারণ তারা আমাদের বিজয় নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। এটাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। যার কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করল। এরপর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা করল, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী তাদের গ্রেপ্তার করে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এরপরে দল গঠন। আজ রাজনৈতিক দল করে অনেক বড় বড় কথা বলে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ দেশে মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। সেই দল ক্ষমতা থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা তো আজ প্রমাণিত। ক্ষমতা দখলকারীরা অর্থাৎ টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম, তখন এ দেশের মানুষের ভাগ্যে কী ছিল? ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, চিকিৎসাব্যবস্থা নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট, এইতো অবস্থাটা ছিল। আজ যারা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল, আমি জিজ্ঞেস করি আপনারা কোথায় ছিলেন? সেটাও একটু বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৬ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন ঢাকায় গণহত্যা শুরু করল, তারা চট্টগ্রামেও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। চট্টগ্রামে যারা জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেরিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে তখন ছিল জিয়াউর রহমান। সেই সময় যারা বেরিকেড দিয়েছে জিয়াউর রহমানও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্যুয়াজ জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ২৫ মার্চ এ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে আক্রমণ চালায় সেই আক্রমণকারীর একজন কিন্তু জিয়াউর রহমান। সেটাও চট্টগ্রাম, এটাও ভুললে চলবে না।
বক্তব্যের শেষে জাতির পিতার বক্তব্যের উক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন ‘ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। একজন বাঙালির প্রাণ থাকতে এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই টিকে থাকবে। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে, এমন কোনো শক্তি নেই’। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে- জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রেখে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন-মান উন্নত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব- এটাই আমাদের প্রত্যয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়