কাগজ প্রতিবেদক : আসন্ন ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিন ছুটি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ঈদের আগে সরকারি ছুটি দুই দিন বাড়ালে লম্বা ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ ধীরে-সুস্থে গন্তব্যে যেতে পারবে। এতে দুর্ঘটনার সঙ্গে ভোগান্তিও কমবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, শুধু ঈদে নয়, বছরজুড়েই সারাদেশের সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এটিকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিবহনের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। তবেই সড়কে নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনা কমে যাবে।
১১ এপ্রিল ঈদ ধরে সরকারি ক্যালেন্ডারে ঈদের ছুটি ধরা হয়েছে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। ঈদের ছুটির পর ১৩ এপ্রিল শনিবার, ১৪ এপ্রিল নববর্ষের ছুটি। আর ঈদের আগে ৭ এপ্রিল শবে কদরের ছুটি। তার আগের দুই দিন ৫ ও ৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। ফলে ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি পেলে সরকারি চাকরিজীবীরা এবার ঈদে ছুটি পাবেন টানা ১০ দিন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবার ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ মোট ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঘরমুখো হবে। ঈদের আগের ৪ দিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে ৪ লাখ, প্রাইভেটকার-জিপ-মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় ১ লাখ, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। আন্তঃজেলার মধ্যে যাতায়াত করবে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি যাত্রী। ঈদের আগে-পরে সাপ্তাহিক ও উৎসবকেন্দ্রিক ছুটির কারণে এবার বেশি মানুষ ঘরমুখো হবে। দিনে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়বে। অথচ দেশের গণ-পরিবহনগুলোয় ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেয়ার সক্ষমতা আছে। গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সব পথে যাতায়াত পরিস্থিতি ‘কোমায়’ চলে যেতে পারে। সে কারণে ঈদের আগে সরকারি ছুটি ৮ ও ৯ এপ্রিল-এ দুই দিন বাড়ালে লম্বা ছুটিতে মানুষ ধীরে-সুস্থে গন্তব্যে যেতে পারবে। এতে দুর্ঘটনার সঙ্গে ভোগান্তিও কমবে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদে দেশে ৭১৪টি স্পটে যানজট হতে পারে- এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ১৪০টি স্পটে প্রখর নজরদারি দরকার। ১০টি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ২১৮টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্পটের বিষয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সর্তক করেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব স্পটেই ৬০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই রাজধানীর প্রতিটি সড়কের ফুটপাতে হকার ও অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় মন্তব্য করে মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও টোল পয়েন্টগুলো যানজটমুক্ত করতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু অসাধু পরিবহন মালিক-চালকেরা মরিরা হয়ে ওঠে। নৈরাজ্য বন্ধে কেবল কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি নয় বরং প্রকৃতপক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের প্রাণ গেছে। যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এবার ঈদে ছুটি ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁঁকি দেখছে সমিতি।
স্টেশনে প্রতারক চক্র রুখতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও মহাসড়কে ডাকাতি রোধের দাবি জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদ শেষে ফেরার সময় তেমন ভোগান্তি হয় না। ব্যবসায়ীরা যেমন দেরিতে আসে, তেমনি অন্যান্য মানুষও ধাপে ধাপে আসে। যাওয়ার সময়ই মূলত ভোগান্তি হয়। সবাই একই সময়ে একসঙ্গে যেতে চায়। তাই ঈদের আগে ছুটি দুদিন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক ও প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।