খালেদ আহমদ, সিলেট থেকে : গ্রিন, ক্লিন আর স্মার্ট সিলেট হবে ‘আমরার সিলেট’। এই স্লোগান নিয়েই স্বপ্নের শহর গড়ার কাজ শুরু করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। স্থায়ী আর টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে নগর গড়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। নগরীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের জন্য হাতে নিয়েছেন কার্যকরী পদক্ষেপ। নগরবাসী ধীরে ধীরে এসব পদক্ষেপের সুফল পেতে শুরু করেছেন।
মূলত সিলেট নগরীর মানুষের অন্যতম সমস্যা ছিল ফুটপাত দখল, রাস্তাঘাটে ময়লার ভাগাড় আর জলাবদ্ধতা। এতদিন ফুটপাত থেকে কিছুতেই হকারদের সরানো যায়নি। এমনকি রাস্তার একটি অংশ হকারদের দখলে ছিল। হকারদের কারণে নগরীতে তীব্র যানজট লেগেই থাকত। শহরে আগত পর্যটকরাও এমন দৃশ্য দেখে বিরক্তভাব প্রকাশ করতেন।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে মেয়র সব পক্ষের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে হকারদের স্থায়ী সমাধানের চিন্তা করছিলেন মেয়র। এর সুফল মিলে রমজান মাস শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে। হঠাৎ করেই জানা যায়, লালদীঘিরপাড় মাঠে বরাদ্দকৃত জায়গাটি হকারদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই মাঠটি সংস্কার করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার হকারকে সেখানে পুনর্বাসিত করা হয়। তাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সহজ ও বিকল্প রাস্তা তৈরির কাজও করছে সিসিক। এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি হকাররা। বরাদ্দ নিয়ে নিজ নিজ স্থানে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের পাশাপাশি বেশ কঠোর আইনি পদক্ষেপও নেয় সিটি করপোরেশন। প্রতিনিয়ত দখলদারদের বিরুদ্ধে সিসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার চেষ্টা করছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এমন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই পুরো সিলেট নগরীর চিত্র এখন পাল্টে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমাদের নগরীকে দেখলে এখন একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর নগরী মনে হয়। সিলেটে যারা বেড়াতে আসেন তারা এবার সিলেটের সত্যিকারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে এমন কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং

করার আহ্বান জানান তিনি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেছিসের নির্বাহী পরিচালক এ টি এম বদরুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্বপ্নের গ্রিন, ক্লিন আর স্মার্ট নগরী গড়ার জন্য মেয়র যে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন সেগুলো সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। আমার বিশ্বাস সব সমালোচকদের চোখে আঙুল দিয়ে মেয়র মহোদয় দেখিয়ে দেবেন চাইলে সবকিছুই সম্ভব। তিনি বলেন, তবে এর জন্য সিটি করপোরেশনকে সময় দিতে হবে। কারণ টেকসই কাজ করতে সময় লাগে, সাময়িক অসুবিধা হয়। কিন্তু যখন কাজ সম্পন্ন হবে, তখনই আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারব।
এদিকে নগরীতে পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এ কাজে তদারকিও বৃদ্ধি করেছে সিসিক। ফলে এখন নগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার করে যাচ্ছেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এতে রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকার পাশাপাশি নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর গলির ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতিদিন ভোর হলেই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা রাস্তা পরিষ্কার করতে আসেন। ফলে পাড়ার রাস্তাটি সারাদিন পরিচ্ছন্ন থাকে এবং দেখতে ভালো লাগে। নগরীর সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকায় এখন হাঁটতে ভালো লাগে। এছাড়া নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার করে লোকজন। যেটি আগে এরকম হতো না। এজন্য মেয়র এবং সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানান হালিম।
অপরদিকে সিলেট নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে বিষয়টি অনুধাবন করে জলাবদ্ধতার সমাধানে স্থায়ী কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এজন্য বর্তমানে নগরীরর বিভিন্ন সড়কে খুঁড়াখুড়ি ও সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নানা মন্তব্য করছেন। তবে সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, সাময়িক এ অসুবিধা দূর হবে শিগগিরই। এই কাজ শেষ হলে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার সাজলু লস্কর বলেন, মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর স্বপ্ন একটি গ্রিন-ক্লিন এবং স্মার্ট ‘আমরার সিলেট’। এটি মেয়র মহোদয়ের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম স্লোগান। আর সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখেই তিনি সেদিকে এগুচ্ছেন।