দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক

আগের সংবাদ

বিচার ও স্বীকৃতি যেভাবে সম্ভব : একাত্তরের গণহত্যা

পরের সংবাদ

দুপুরের পর ‘গাড়ি চলে না’

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রোজার দুই সপ্তাহ পেরুতেই ঢাকার রাস্তায় যানজট দারুণ ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। শুক্রবার ছুটির দিনে যানজটে ভোগান্তির পর গতকাল শনিবার দুপুর থেকেই ছিল অসহনীয় যানজট। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকা লোকজন গন্তব্যে পৌঁছতে বাহন ছেড়ে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে ঘরের বাইরে বের হওয়ায় রাস্তায় এই বাড়তি চাপ বলে মনে করছে ট্রাফিক পুলিশ। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মার্কেট বা শপিং মল রয়েছে; সেসব এলাকা ঘিরে রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। দুপুরে ওইসব এলাকায় চলাচল করা বাস ও প্রাইভেটকার চালকদের মতে, গাড়ি ও মানুষের চাপে রাস্তা ‘প্যাকেট’ হয়ে আছে। পুলিশের কড়াকড়ির পরও অনেক রাস্তার পাশে ফুটপাতে বা রাস্তার উপর দোকান বসার কারণে যানজটে ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে ইফতারসামগ্রীর দোকান রাস্তার উপরে বসানোর কারণে অনেক রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া, রাজধানীর বেড় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে বরাবরের মতো পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ‘বিশেষ পরিকল্পনা’ নেয়া হলেও সুফল মিলছে না। ইফতারির আগের পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিএমপির পদস্থ কর্মকর্তারা রাস্তায় নেমে সরাসরি তদারকি করলেও গাড়ির চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবে বিকেলের দিকে অফিস পাড়ায় যানবাহনের চাপ থাকে কম।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ১৮টি সংস্থা সম্পৃক্ত। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ তার মধ্যে মাত্র একটি, বাকি ১৭টি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা দরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন সড়কে সংস্কার ও মেরামতের কাজ চলছে। জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এসব সড়ক সাময়িক চলাচল উপযোগী করে দিতে বিভিন্ন সংস্থাকে ট্রাফিকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। তবে ট্রাফিক পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে যানজট নিরসনে কাজ করছে। যানজটে নিরসনে নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানমন্ডি-২৭, সাত মসজিদ রোড, মিরপুর রোড, ফার্মগেট, পান্থপথ, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা, ভাটারা, গুলশান এলাকায় দুপুরের আগ থেকেই রাস্তায় ছিল গাড়ির সারি। যানজটে স্থবির হয়ে পড়া সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। হাতের ইশারায় চলা ট্রাফিক ব্যবস্থায় কখনো অবস্থা দেখে আবার কখনো ওয়াকিটকিতে আসা নির্দেশনায় সিগনাল ছাড়ছে ট্রাফিক পুলিশ। বিকালে কারওয়ানবাজার সিগনালে আটকে থাকা প্রাইভেটকার চালক মনির হোসেন জানান, পান্থপথ সিগনাল থেকে বাংলামটরে যেতে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লেগেছে পৌনে একঘণ্টা। কখন কোনো সিগনাল ছাড়া হচ্ছে বুঝা দুষ্কর। কাকরাইলে এলোমেলো পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশের ছিল ত্রাহিদশা।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক গতকাল শনিবার সকাল থেকেই তীব্র যানজটে অচল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর ও ফার্মগেটমুখী সড়কে যানজট ছিল বেশি। যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী। দীর্ঘ সময় গাড়িতে আটকে থেকে উপায় না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছেন। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকে মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, মিরপুর, রামপুরা, গুলশান, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরসহ অনেক এলাকায় দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ জট। হঠাৎ গাড়ি চলা শুরু হলেও তার স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ থাকে না। একটি সিগন্যাল পার হতেই দীর্ঘ সময় লাগছে। এমনিতে স্বাভাবিক সময়ে মোটরসাইকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট যেতে পনের মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু বিকাল ৩টার দিকে এই পথ যেতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগার কথা জানিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। রাজধানীর অন্যান্য অংশের অবস্থাও একই রকম বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান। অবশ্য মোটরসাইকেল আরোহীদের চেয়ে বাসের যাত্রীদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে দুপুর একটায় মালিবাগ মৌচাকের উদ্দেশে বের হন কবির হোসেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মী বলেন, ৩টায় অফিস থাকায় প্রতিদিন দুপুর ১টার আগে বাসা থেকে বের হই। যেন একটু আগেই অফিসে যেতে পারি। রমজান শুরুর পর থেকেও সঠিক সময়ে অফিসে আসতে তেমন সমস্যা হয়নি। কবির হোসেন জানান, এতদিন যানজট সহনীয় ছিল। কিন্তু সড়কে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। ফলে তিনি গন্তব্যে পৌঁছছেন সাড়ে ৩টায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মী আসলাম হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুর টাউন হল থেকে ফার্মগেট যাওয়ার রাস্তায় এতো যানজট যে অলরেডি অফিসে যেতে আধাঘণ্টা দেরি হয়েছে। বারিধারায় অফিস করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী কবিতা। এফডিসির সড়কে আসার পর দীর্ঘ যানজটে থমকে যায় তার গাড়ি। মতিঝিল, রামপুরা, গুলশান ও বাংলামোটরের অবস্থাও ভয়াবহ। এসব সড়কে অন্যান্য সময় যানজট লেগে থাকে। গতকাল তা প্রকট আকার ধারণ করে। বিকালে দেখা যায়, এসব সড়কে গাড়ি নড়ছেই না। এক্সপ্রেসওয়ের নতুন রুটের কারণে সাতরাস্তা, হাতিরঝিলের দিকেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে সকাল থেকে তীব্র যানজট হয়েছে ওই এলাকায়।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের গতি এই রমজান মাসে যেন আরো ধীর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের সর্বশেষ (গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটও রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি নিয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে রাজধানীর সড়কে যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে হয় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। অর্থাৎ দেড় দশকে রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের গতি কমেছে ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটারের মতো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়