‘গায়েবি’ জামিনে স্থগিতাদেশ : ‘উষ্মা’ প্রকাশ করে ডিএজির ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

দুপুরের পর ‘গাড়ি চলে না’

পরের সংবাদ

গুরু পাপের লঘুদণ্ড!

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ‘কত স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে নিয়ে। আমার মেয়ের জীবনটা শেষ হয়ে গেল। মেয়ে জীবিত থাকতে বিচার পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন যতটা আন্তরিক, আগে তা থাকলে হয়তো মেয়েকে হারাতে হতো না।’ গতকাল শুক্রবার সকালে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে কমিটির ৫ সদস্য অবন্তিকার কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় গেলে সন্তান হারানোর আর্তনাত এভাবেই ঝরে পড়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগমের কণ্ঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে একই বিভাগের সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানসহ তার সহযোগীদের দ্বারা হয়রানির তথ্য তুলে ধরেন তাহমিনা বেগম।
যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ। একদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যা, অন্যদিকে ফারজানা মীমের যৌন হয়রানির অভিযোগ- দুই ঘটনায় ফুঁসছে জবি। ছাত্রী ফারজানা মিমকে যৌন হয়রানির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিমকে বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গত দুই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নের ঘটনার ফুটন্ত আগুন নিভতে না নিভতেই অবন্তিকার আত্মহনন আর মীমের অভিযোগে অগ্নিকুণ্ড জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষক এবং নারী আন্দোলন কর্মীদের মতে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব, বিচার পাওয়া সম্পর্কে প্রচারের ঘাটতি, লোকলজ্জা, সামাজিক চাপ, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন শঙ্কা- এসব কারণে যৌন নিপীড়ন বাড়ছে। একই মনোভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও।
দেশের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যাংলয়ে গত দুই বছরে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনা পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ জমা পড়েছে যৌন হয়রানিবিষয়ক অভিযোগ জানাতে গঠিত ‘অভিযোগ কমিটি’তে। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির কার্যকারিতা কম। কমিটির কথা জানেনই না অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেক অভিযোগ এই কমিটিতে জমা হয় না। অনেক ঘটনা শিক্ষার্থীরা গোপন রাখেন হয়রানির ভয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও তা গোপন রাখা হয়। ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে ঘটনা প্রকাশ্যে এলে সক্রিয় হয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার ভোরের কাগজকে বলেন, এ ধরণের ঘটনা খুব কমই প্রকাশ পায়। ব্যক্তিগত ইমেজ নষ্ট হওয়ার ভয়ে, পারিবারিক, সামাজিকসহ নানা কারণে অনেকেই অভিযোগ করে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, সামাজিকীকরণ ও মনস্তাত্ত্বিক জায়গাটা থেকে অনেকেই বের হতে পারেন না। যারা অনেক সাহসী তারাই প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। তখন সবার টনক নড়ে।
কমিটিগুলো কী করছে : রাষ্ট্রপতির কাছে বিচার চেয়ে আবেদনে জবি শিক্ষার্থী ফারজানা মীম লিখেছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে

উপাচার্য বরাবর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বুলিং ও যৌন নির্যাতনের বিচার চেয়ে একটি আবেদন দায়ের করি। বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর তখন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের দায়িত্বে ছিলেন। এটার বিচার আমি এখনও পাইনি, উল্টো আমাকে যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক ও তার সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান, অনার্স পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমাকে ভীষণরকম বহিষ্কার ভয়ভীতি, পরীক্ষার ফেল করানো, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করে মৃত্যু হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। কখনো কখনো নারী শিক্ষকরাও ভুক্তভোগী হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ঠেকাতে ২০০৯ সালে অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। ইউজিসির তথ্যমতে, দেশের ৪৫টি পাবলিক ও ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটি রয়েছে, যা সেল নামেও পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য মতে, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২টি অভিযোগ আসে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগের সংখ্যা ৮টি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ সেলে ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৪টি অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত পাঁচ বছরে পাঁচটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে দুটি ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর জমা পড়ে। পাঁচটিতেই অভিযুক্তদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি হয়েছে। যেমন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩১ জানুয়ারি রসায়ন বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করেছিলেন এক ছাত্রী। এ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই অধ্যাপককে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই বছর ধরে অভিযোগ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, তার সময়কালে এখন পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে একজনকে বহিষ্কার এবং একজনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
নারীনেত্রী এবং গবেষকদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কমিটি নামকাওয়াস্তে। কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা বা সোচ্চার আন্দোলন চোখে পড়ে না। কমিটি সোচ্চার হলে শিক্ষার্থীরাও সোচ্চার হতো। অন্যদিকে শিক্ষকদের হাতে অনেক নম্বর থাকে। ফেল করার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী মুখ খোলে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর গত দুই বছরে ১৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছি। উপাচার্যের নির্দেশনা পাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভিযোগ নিষ্পত্তির চেষ্টা করি। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি। এরপর প্রতিটি বিভাগ পরিদর্শন করবো।
শাস্তির বিধান রেখে আইন তৈরি : ২০০৮ সালের দিকে দেশে ইভটিজিং বেড়ে যাওয়ার প্ররিপ্রেক্ষিতে অনেক নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে এবং অনেকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত ইভটিজিং নিরোধে দেশে তখন কোনো আইন ছিল না এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনো কার্যকরী কমিটি বা নির্দেশনা ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউ) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার চেয়ে একটি রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে দেশের উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত নির্দেশনা জারি করে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১০(ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার ভেতরে (নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকেও) আওতাভুক্ত করে। যৌন হয়রানির বিচার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্য শেষ করতে বলা হয়; ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা আছে। এছাড়া যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী, অপরাধের মাত্রা অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৌখিক বা লিখিতভাবে সতর্ক করা, ১-২ বছরের বহিষ্কার (শিক্ষার্থী), চাকরিচ্যুত, প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা, অর্থদণ্ড দেয়া (শিক্ষক ও কর্মচারী) এবং ক্যাম্পাসে চলাচল নিষিদ্ধ (বহিরাগত) করার বিধান রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা দেন হাইকোর্টে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে একটি আইন তৈরির কথা। কিন্তু এই আইনের খসড়া নিয়ে শুধু চর্চা হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে খুবই কম।
অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেরা যে বিচার করে, সেটিও অনেক সময় হয় মুখচেয়ে। দাপুটে শিক্ষক হলে তাকে কখনো কখনো নানা কৌশলে রেহাই দেয়া হয় বা মৃদু শাস্তি দেয়া হয়। অধিকাংশ শাস্তিই হয় বহিষ্কার নতুবা পদাবনতি। গবেষকদের মতে, এক্ষেত্রে বহিষ্কার, পদাবনতিই যথেষ্ট শাস্তি নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আইনজীবী সালমা আলী ভোরের কাগজকে বলেন, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে মামলা হওয়া উচিত। যদিও নারী ও শিশুবিষয়ক আইনের ধারা ১০ এ, সাইবার ক্রাইম আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে সুফল মিলছে না। এজন্য সমন্বিত আইন প্রয়োজন। আমরা মহিলা আইনজীবী সমিতি এবং আইন কমিশন দীর্ঘদিন ধরে এরকম একটি আইনের জন্য লড়াই করছি। মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বসেছি। এছাড়া মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ে আইনের খসড়াও জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, অনেকেই আশঙ্কা করেন, শত্রæতার কারণে মিথ্যা মামলার সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু তদন্ত সাপেক্ষেই তো বিচার হবে। তদন্তে কেউ নির্দোষ হলে সে শাস্তি পাবে না। কিন্তু প্রকৃত অপরাধী তো তার অপরাধের মাত্রা অনুয়ায়ী শাস্তি পাবে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত মন্তব্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মানিক ভোরের কাগজকে বলেন, ধর্ষণকামী মন সব সময় সুযোগ নেয়ার প্রবণতা খুঁজে। বিভিন্ন প্রলোভন তৈরি করে। অভিযুক্তের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বহিষ্কার সমাধান নয়; মামলা করা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পরিচালক এবং সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসীন রেজা ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ সেলের তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু একাডেমিক শাস্তি দিতে পারে। এর বাইরে কিছু নয়। সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য ভিকটিমকে আদালতে যেতে হবে।
প্রতিকার নয় প্রয়োজন প্রতিরোধ : বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর বাতিলকৃত ধারা ১০(২) পুনর্বহাল করা; সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার নীতিমালা তৈরি এবং এই নীতিমালা সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন দেয়া; যৌন হয়রানির ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও প্রতিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; শিক্ষা ব্যবস্থাকে জেন্ডার সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলামে জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকারের বিষয় যুক্ত করা প্রয়োজন। অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। বুধবার থেকে মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলিং কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের প্রোগামগুলো আগেও ছিল, এখন ব্যাপক আকারে করা হচ্ছে। জুন-জুলাই থেকে আমাদের এই কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হবে। ঘটনার শুরুতেই যেন নির্মূল করতে পারি, সেজন্যই এই উদ্যোগ। প্রথম বর্ষ থেকেই একজন শিক্ষার্থী যেন সতর্ক থাকতে পারে, এজন্য কাউন্সিলিং। শিক্ষকদের জন্যও আমাদের বার্তা থাকবে। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, সামাজিকীকরণ সবচেয়ে বেশি জরুরি। যদিও এটি দীর্ঘসূত্রতার বিষয়। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের আগে অতীত ইতিহাস জানা জরুরি। আর নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি ঘটনা প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযুক্ত শাস্তি পাবে আর অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযোগকারী শাস্তি পাবে। সচেতনতা দরকার যেন কেউ কাউকে শারীরিক, মানসিক, মৌখিক কোনোভাবেই হেনস্তা না করতে পারে।
সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসীন রেজা বলেন, প্রতিরোধ বেশি জরুরি। আর এজন্য পারিবারিক শিক্ষা, স্কুলিং, পিয়ার গ্রুপ এবং কাউন্সিলিং প্রয়োজন। নারীর প্রতি কীভাবে আচরণ করতে হবে- এই শিক্ষা পরিবার থেকেই প্রথম শেখানো প্রয়োজন। সুস্থ মানুষের মধ্যে পাশবিক চিন্তা থাকতে পারে না। এজন্য শিক্ষকদেরও কাউন্সিলিং প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়