নৌপথ ও বন্দরগুলো ঠিক আছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

গুরু পাপের লঘুদণ্ড!

পরের সংবাদ

‘গায়েবি’ জামিনে স্থগিতাদেশ : ‘উষ্মা’ প্রকাশ করে ডিএজির ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মাদকের এক মামলায় আসামিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। অথচ জামিন হয়েছে ভেবে সেই ?‘গায়েবি’ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের এমন আবেদনে ‘গায়েবি’ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ এসেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের বিচারক বলেছেন, আমরাও তো মানুষ। এমন কর্মকাণ্ডে আমাদেরও হৃদয় ভেঙে যায়। এরপরই সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদের কাছে এমন কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
কক্সবাজারের মাদকের এক মামলায় হাইকোর্টে জামিন চান মো. এমরান নামে এক আসামি। গত ১১ মার্চ আসামির জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ছিল। ওই আবেদনের ওপর ওইদিন শুনানি ও আদেশ হয়নি। শুনানি ও আদেশ না হলেও এই আসামির জামিন হয়েছে মর্মে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোট দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সাইফুদ্দিন খালেদ। ওই নোটের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গায়েবি’ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আসে।
এরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের বিরতির পর এজলাসে আসেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন। এজলাসে বসার পর ডায়াসে ডেকে নিয়ে ডিএজি সাইফুদ্দিন খালেদের উদ্দেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ইমরান বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় আমরা তো আসামিকে জামিন দেইনি। অথচ আপিল বিভাগ থেকে জামিন আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে কীভাবে আপনি এত বড় ভুল তথ্য দিলেন। এই কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। আপনি যেভাবে নোট দিয়েছেন, সেভাবে পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়েছে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো দায় দেখছি না। এ পর্যায়ে সাইফুদ্দিন খালেদা বলেন, কার্যতালিকার পূর্বের মামলার জামিন আদেশের বিষয়টি ভুল করে এই মামলায় মার্ক করেছি। এ কারণে আমার এই ভুল হয়েছে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম বলেন, যে আদেশ দেইনি, সেটা কীভাবে স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগে যেতে পারেন। ৩৪ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে আছি। সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কেউ কোনোদিন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। অথচ একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে একটা অসত্য তথ্য দিয়ে কোর্টকে হেয় করলেন। কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলেন। এটার জবাবদিহি আপনাকে করতে হবে। এ পর্যায়ে ওই আইন কর্মকর্তা ডায়াসের সামনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন বিচারপতি নজরুল ইসলাম বলেন, সম্মানের জন্য বিচারপতির আসনে আছি। সম্মান যদি না থাকে, তাহলে কিসের বিচার কাজ? আপনার একটা অসত্য তথ্যে টিভি চ্যানেলগুলোতে আমাদের নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হলো। আমি তো রাতে ঘুমাতে পারিনি। অথচ আমরা ওই মামলার শুনানিই করেনি, আদেশ তো দূরের কথা।
বিচারপতি আরো বলেন, আমরাও তো মানুষ, আমাদেরও হৃদয় আছে। আপনার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমাদের হৃদয় ভেঙে যায়। সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ আমাদের নিয়ে একটা অসত্য তথ্য প্রচার হলো। এর দায় কে নেবে? আপনি (ডিএজি) তো আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। ডিএজি সাইফুদ্দিন খালেদের উদ্দেশে বিচারপতি নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ডিএজি থেকে বিচারপতি হয়। আপনারও বিচারপতি হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু আপনি একটা কোর্ট সম্পর্কে কেন এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন? আপনার কর্মকাণ্ডে বিচার বিভাগ হুমকির মুখে পড়েছে। এটা তো কোনো ছেলেখেলা নয়। আপনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন। যদি সন্তুষ্ট না হই, তখন লিখিত আদেশ দেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়