গাজীপুরে দেড় কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার ২

আগের সংবাদ

রাজধানীজুড়ে মশার রাজত্ব

পরের সংবাদ

ঝুঁকির মধ্যেই অনিয়ম বহাল

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীসহ দেশের প্রায় অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ নিয়মের তোয়াক্কা না করে যে যার মতো করে চলছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের মান নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি পরিবেশ এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে হুমকির মধ্যে। এমনিতে ১৩টি সংস্থার অনুমোদন নিয়ে রেস্তোরাঁ চালানোর বিধান থাকলেও অনেকস্থানে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। তারকা হোটেল ছাড়া সারাদেশে রেস্তোরাঁর সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। অনেক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মনে করেন, এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হতে পারে। এর মধ্যে রাজধানীতেই আছে প্রায় ২৫ হাজার। দু-তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবসা করছে ৩ হাজারের মতো রেস্তোরাঁ। ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদন আছে মাত্র ৫ হাজার ৬০০টি রেস্তোরাঁর। সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স আছে ৭ হাজারের মতো রেস্তোরাঁর। ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন কয়টি রেস্তোরাঁর আছে, তা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে তারা সতর্ক করলেও তোয়াক্কা করছে না কেউই। বরং অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা এবং বিকল্প সিড়ি নিশ্চিত না করে অনেকস্থানে পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে উঠেছে ফুডকোর্ট। প্রায় শপিংমলেই রয়েছে খাবার দোকান। কিন্তু কতটা নিয়ম মেনে এসব করা হয়েছে- এর সুদুত্তর নেই কারো কাছে।
এর মধ্যে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা হোটেল রেস্তোরাঁয় পুরোদমে অভিযানে নামে। গত ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত শুধু রাজধানীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৮৭২ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে প্রসিকিউশনের সংখ্যা ৮৮৭টি। সব মিলিয়ে ওই তিন দিনে ১৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে হোটেল রেস্তোরাঁ ১১৩২টি। ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রাখার দোকান ২০৭টি। কেমিক্যাল গোডাউন ৮টি। অভিযানে রেস্তোরাঁ মালিকরা আইনের আওতায় না আসায় প্রশ্ন উঠে। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি পুলিশের অভিযানকে হয়রানিমূলক দাবি করে উচ্চ আদালতে রিট করে। আদালত নিয়ম মেনে অভিযান চালানোর আদেশ দিলে অভিযানে ভাটা পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান থেমে নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো অভিযানই সবসময় একই গতিতে চলে না। প্রথম দিকে ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টের সংখ্যাটা বেশি ছিল, এজন্য অভিযানের সংখ্যাও বেশি ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, রেস্টুরেন্টের মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে, বিষয়টি তেমন নয়। অবহেলায় কার কার দায় রয়েছে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়। এক্ষেত্রে পুলিশ সবসময় শ্রমিকদের প্রতি সংবেদনশীল থাকে।
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক হিসেবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক

সমিতি উচ্চ আদালতে রিট করার পর অভিযানে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য খাদ্যে নিরাপত্তা ও পুষ্টিগুণ বজায় না থাকার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, খাদ্য ব্যবসায়ীদের জ্ঞানের অভাব। অনেকের জ্ঞান থাকলেও অধিক লাভের আশায় খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে। তিনি বলেন, ফুটপাতের দোকানসহ দেশে কমপক্ষে সাড়ে ৪ লাখ খাদ্য ব্যবসায়ী রয়েছে। এটা একটি আনুমানিক হিসাব। সঠিক কোনো ডাটাবেজ নেই। এই ব্যবসায়ীদের নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এখন অল্প অল্প করে দেয়া হচ্ছে, এটাকে বড় পরিসরে করতে হবে। লোকবল সংকটে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এটি সেভাবে পারছে না। তবে এই রমজান উপলক্ষে ৬ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরকে ৬ জোনে ভাগ করে খাদ্যের নিরাপত্তা মনিটর করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, খাদ্যের নিরাপত্তা ঠিক রাখতে যে সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে, এই সংস্থাগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই খাবারের মান আরো বাড়বে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৩ শতাধিক রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করে অগ্নি নিরাপত্তায় কি কি ঘাটতি রয়েছে, সে বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা রেস্টুরেন্ট মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাব, অল্প কিছু টাকা বেশি খরচ হলেও যেন অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
জানা গেছে, রেস্তোরাঁ ব্যবসার জন্য ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি ছাড়াও সিটি করপোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কলকারখানা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগসহ মোট ১৩টি দপ্তর-সংস্থার অনুমতি নিতে হয়। তবে বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ শুধু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদন ও সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনের বিষয়টি একটু জটিল বলে অনেকেরই সে অনুমোদন নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়মিত ভ্যাট আদায় করলেও অনেক রেস্তোরাঁ সংস্থাটির অনুমোদনের বাইরেই রয়ে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২২ সালের হিসাবে বর্তমানে দেশে তারকা হোটেলের সংখ্যা ৪৩টি। এর মধ্যে পাঁচতারকা হোটেল ১৭টি। চার তারকা ছয়টি ও তিন তারকা হোটেল ২০টি। এর বাইরে রাজধানীতে ঢাকার জেলা প্রশাসকের তালিকায় থাকা রেস্তোরাঁর মধ্যে ৩০ শতাংশ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নি¤œ-মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদের এসব রেস্তোরাঁয় যাতায়াত রয়েছে। যার বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, চকবাজার, ১০০ ফিট, ৩০০ ফিট, মিরপুর-২, লাভ রোড, খিলগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের সামনে, গুলশান-২ নম্বর ঝিলপাড়, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটির সামনে, সলিমুল্লাহ রোড, কৃষি মার্কেট এলাকা, বনানী ১৭ নম্বর সড়ক, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর, বনশ্রীসহ অনেক এলাকাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। এর অধিকাংশই ঘিঞ্জিভাবে তৈরি করা। অগ্নিকাণ্ড ও বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব স্থানের রোস্তারাঁ থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরা দায় হয়ে পড়বে বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এলোমেলোভাবে না করে আইন অনুযায়ী হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করতে বলেছেন হাইকোর্ট। ১২ মার্চ মঙ্গলবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ কথা বলেন। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী যারা রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছে তাদের হয়রানি করা কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়েও রুল জারি করে হাইকোর্ট। ১১ মার্চ সোমবার অভিযান বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়