দোলাইরপাড়ে দুর্বৃত্তের হাতে ১ তরুণ খুন

আগের সংবাদ

জগন্নাথের ঘাটে ঘাটে হরিলুট

পরের সংবাদ

ময়মনসিংহে আবারো টিটু কুমিল্লায় সূচনার শুভ সূচনা : টিটু ১,২৭,০০০, হাসান ২৯,০০০ ভোট > সূচনা ৪৮,০০০, সাক্কু ২৬,০০০ ভোট

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন গতকাল শনিবার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটার উপস্থিতিও ছিল ভালো। ময়মনসিংহে বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটু। আর কুমিল্লায় প্রথমবারের মতো মেয়র পদের লড়াইয়ে নেমে বাজিমাত করেন তাহসীন বাহার সূচনা। এছাড়া এদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরো ২৩১টি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের আলোচিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিজয়ী তাহসীন বাহার সূচনা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের মেয়ে। তিনি নিজেও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সূচনা বাস প্রতীকে পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মনিরুল হক সাক্কু ঘড়ি প্রতীকে ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া, নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে ১৩ হাজার ১৫৫ ও হাতি প্রতীকের নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১৭৩ ভোট পান। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। শান্তিপূর্ণভাবেই এই সিটির ভোটগ্রহণ শুরু হয়। একটি কেন্দ্রে গোলাগুলি হলেও অন্য কোথাও থেকে তেমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খবর আসেনি। এই উপনির্বাচনে ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে বলেন জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন। জানা গেছে, দুই উপজেলার ২৭টি ওয়ার্ড ও ১০৫টি কেন্দ্র নিয়ে এই সিটি করপোরেশন।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি টেবিল ঘড়ি প্রতীকে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ভোট পান এবং তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী (হাতি মার্কা) জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাদেকুল হক খান মিল্কি পান ৩৩ হাজার ভোট। ময়মনসিংহ সিটি ভোটে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই মাস পর গতকাল শনিবারই বড় পরিসরে স্থানীয় সরকারের ভোট হল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন বা দলীয় প্রতীক না দেয়ার বিষয়টি ছিল এবারের নির্বাচনের প্রধান আলোচনার বিষয়। ময়মনসিংহে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। কেবল তিনিই দলীয় প্রতীকে লড়ছেন। কুমিল্লায় চার প্রার্থীর মধ্যে দুজনই আওয়ামী লীগের। ভোট বর্জন করা বিএনপির দুই বহিষ্কৃত নেতাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন। এই সিটিতে দলীয় প্রতীকে কারো প্রার্থী নেই।
দুুই সিটি ভোটের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কিছু কিছু জায়গায় কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিসহ গতকাল শনিবার দুই শতাধিক উপনির্বাচন ছিল সন্তোষজনক।
সিইসি বলেছেন, দুচারটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কোথাও প্রভাবে খাটানো হয়েছে, হস্তক্ষেপ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার ভোট শেষে বিকাল ৫টার দিকে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
ময়মনসিংহ সিটির সব পদে এবং কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন হয়েছে। একইদিনে অনুষ্ঠিত দুই শতাধিক নির্বাচনের অধিকাংশই ছিল উপনির্বাচন। দুই সিটিতে গড়ে ভোটের হার প্রায় ৫০ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সকাল ৮টায় নির্বাচন শুরু হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দুচারটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ১৮টি অপ্রীতিকর ঘটনায় ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রভাবে খাটানো হয়েছে, হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, এজেন্ট বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ এসেছে। এদিকে কুমিল্লায় কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলি হয়েছে, ছুরিকাঘাতও হয়েছে একটি কেন্দ্রে। তবে কেন্দ্রের ভেতরে ভোট প্রভাবিত হয়নি। সকাল থেকেই কুমিল্লায় তিন প্রার্থী তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া এবং ভোটারদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনেন। এর মধ্যে এক কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলিতে দুজন আহত হন বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, কুমিল্লায় সব প্রার্থীই কম বেশি শক্তি প্রয়োগ করেছেন। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পৌরসভা ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রত্যাশিত সুন্দর, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোনো কিছু বন্ধ হয়নি।
এদিকে কুমিল্লায় ভোটের শুরু থেকেই এজেন্টদের বের করে দেয়া, এজেন্টের ওপর হামলার অভিযোগ করে আসছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া) এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি)। অন্যদিকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা (বাস) ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর মধ্যেই সকাল ১০টায় নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলি হয়। পরে সেখান থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়।
আবার ইভিএম-ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ মিল না পাওয়ার কারণে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি অনেক বয়স্ক ভোটার- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে পুরুষের চেয়ে ভুক্তভোগী নারীদের সংখ?্যাই ছিল বেশি। এ নিয়ে নগরের অনেক ভোটকেন্দ্রে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগরের ৩১ নম্বর মহাখালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন থানারঘাট এলাকার বাসিন্দা বকুলি (৬৫) নামের এক বয়স্ক নারী। কিন্তু ইভিএমে এই ভোটারের হাতের আঙ্গুলের ছাপ না মিলার কারণে তিনি ভোট দিতে পারেননি। বকুলি বলেন, আমি তিনবার গেছি কিন্তু আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না। একই অবস্থা থানারঘাট এলাকার মোছা. শাহিদা বেগম (৭০), ছুফিয়া বেগম (৬১) ও জমেলা খাতুনসহ (৪৫) এই কেন্দ্রের আরো অনেক নারী ভোটারের। তারাও এই সমস্যার কারণে ভোট দিতে পারেননি।
মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ভোটের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতিও বেশ ভালো। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেছেন, নির্বাচনে টাকার খেলা হচ্ছে এবং ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন হাতি প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেকুল হক খান মিল্কি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। এতে নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯০ বুথে দেড় হাজার ইভিএমে ভোট নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে চারজন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পাঁচজন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১১ প্লাটুন পুলিশ, আর্মড পুলিশ এবং আনসার সদস্য, ১৭ টিম র‌্যাব ছাড়াও ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) এবং ১১ জন বিচারিক হাকিম (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) দায়িত্ব পালন করেন। এই নির্বাচনে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৪৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১১টি আসনে মোট ৬৯ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়াই করেছেন।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এই দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন- ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মসিকের সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, ঘোড়া প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, হাতি প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাদেকুল হক খান মিল্কি (টজু), হরিণ প্রতীকে কৃষকলীগ নেতা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত নাঙ্গল প্রতীকে মো. শহীদুল ইসলাম (স্বপন মণ্ডল)।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো একজন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়