পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের জন্য ৭ মার্চের ভাষণ এখনো প্রাসঙ্গিক : সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিলে বক্তারা

আগের সংবাদ

ময়মনসিংহে আবারো টিটু কুমিল্লায় সূচনার শুভ সূচনা : টিটু ১,২৭,০০০, হাসান ২৯,০০০ ভোট > সূচনা ৪৮,০০০, সাক্কু ২৬,০০০ ভোট

পরের সংবাদ

মুনাফার টার্গেট ইফতার পণ্য

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : আর মাত্র কয়েকদিন পরই পবিত্র রমজান শুরু। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। স্বাভাবিক কারণেই এই মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষত মুখরোচক ইফতার সামগ্রীর প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক থাকে বেশি। রমজান শুরুর আগে শেষ শুক্রবার ছিল গতকাল। এদিন ছুটি থাকায় রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে এসেছিলেন অনেকেই। তবে আগেভাগেই বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েন ক্রেতারা। বাড়তি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইফতার পণ্যকে টার্গেট করেছে। বিভিন্ন বাজার ও এলাকার মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলা, মুড়ি, খেজুর, বেসন, সরিষার তেল, বুটের ডালের দাম ১০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর শরবত তৈরির উপকরণ ইসবগুলের ভুসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া রমজাননির্ভর বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও অহেতুক বাড়ানো হয়েছে। রোজার সময় ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করে ইফতারে ফলের আইটেম রাখতে। তবে এ বছর রোজা শুরুর ১০-১২ দিন আগেই বাজারে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বাজার কর?তে আসা ক্রেতারা বলছেন, আগের রমজান থেকে এবারের রমজানে সবকিছুরই দাম বাড়তি। রমজান সামনে রেখে এখন ইফতার পণ্যেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। সরকার রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বললেও সেটা হচ্ছে না। সবকিছুর দামই বেড়েছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা বেশি চাহিদা দেখাচ্ছে বলেই সবকিছুর দাম বাড়তি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতি বছরই রোজায় মানুষ সাধারণত যেসব পণ্য বেশি ব্যবহার করে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেগুলোর দাম এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ যেন একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বাড়তি দামের পেছনে সাধারণ মানুষেরও অনেকটা দায় আছে। রোজার আগমুহূর্তে অন্তত সপ্তাহ-দশ দিনের বাজার কিনে জমিয়ে রাখা হয়। যে কারণে ওই সময়টাতে বাজারে পণ্যের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর এ সুযোগটাই নেয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। ক্যাব সভাপতি বলেন, রোজার আগমুহূর্তে যদিও জিনিসপত্রের দাম বেশি, দেখবেন দশম রোজা থেকেই আবার সবকিছুর দাম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এজন্য আমি মনে করি সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষকেও আরো একটু সচেতন হতে হবে।
খিলগাঁও কাঁচাবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বুটের ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা। কয়েকদিন আগেও ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ছোট দানার মসুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০-১৪৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি

হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ছিল ১১০-১১৫ টাকা কেজি। এদিকে ডালের দাম বাড়ায় বেড়েছে বেসনের দামও। বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, যা কিছুদিন আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। আর অ্যাংকর ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে, যা কিছুদিন আগে ছিল ৭০ টাকার মধ্যে। রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আবদুল্লাহ বলেন, রোজার আগেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। এখন আবার রোজা ঘিরে ইফতার পণ্যে দাম বাড়াতে শুরু করেছে। আর এই দাম প্রতি রোজায় বাড়ানো হয়। এটা যেন বিক্রেতাদের অভ্যাসে নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এটা যেন দেখার কেউ নেই। প্রতি বছর একইভাবে দাম বাড়লেও কর্তৃপক্ষ মুখে নানা কিছু বলে; কিন্তু দৃশ্যমান হয় না কিছুই। তাই আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। অথচ আমাদের আয় বাড়ছে না।
বাজারে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৯০ টাকা, দাম বেড়েছে কাঁচামরিচেরও। পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। বাজারে এখন এক কেজি সাধারণ মানের খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজার আগ মুহূর্তে এ ধরনের খেজুরের কেজি ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এছাড়া ভালোমানের খেজুর ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। গত রমজান থেকে যা ৪০০ টাকা বেশি। ৭০ টাকার কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
এছাড়া ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি দুই মাস আগে ১৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ট্যাং বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা, যা আগে ৮০০ টাকা ছিল। বড় সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা। যা আগে ২০০ টাকা ছিল।
এদিকে কিছুতেই কমছে না পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা কমেছে আদা আর রসুনের দাম। নতুন রসুন ১৭০-১৯০ টাকা ও আদা ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কমলাপুর এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা এনজিওকর্মী রাবেয়া সুলতানা বলেন, সরকার বলেছিল রোজার বাজারে জিনিসপত্রের দাম কম থাকবে। অথচ উল্টো জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সারাদিনের রোজা শেষে মানুষ যেসব পণ্য দিয়ে ইফতার করে সেসব পণ্যেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ইফতারে ব্যববাহর করা ছোলা, ডাল, বেগুনের দাম বেড়ে গেছে। যখন যেটা বেশি লাগে তখন সেটারই দাম বেড়ে যায়।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে সুলতান মাহমুদ নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজার আগমুহূর্তে আজ শেষ শুক্রবার। ছুটির দিন হওয়ায় এসেছিলাম রোজার মাসের বাজার করতে। কিন্তু প্রতিটি পণ্যেরই আজ বাড়তি দাম। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এবং পরশু বুধবার ভারতের পেঁয়াজ কিনেছি ৮০ টাকা কেজি, আজ বাজারে এসে দেখি ৯০ টাকা। চিনি-ডালের দামও বাড়তি মনে হয়েছে। তিনি বলেন, অন্য মুসলিম দেশগুলোতে প্রতি বছর শুনি রোজার মাস এলে প্রত্যেকটা জিনিসেরই দাম কমিয়ে দেয়া হয়। আর আমার দেশে যে যত পারে বাড়তি দামে বিক্রি করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে বারবার বলছেন রোজা উপলক্ষে কোনো জিনিসের দাম বাড়বে না; সেখানে একটা জিনিসও হয়তো বাকি নেই, যার দাম বাড়েনি। বাজার নিয়ন্ত্রণে জরুরিভিত্তিতে বাজারগুলোতে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং বাড়ানো উচিত।
এদিকে সবজি বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা এক দিনে সব কিনতে চায়। এতে বাজারে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এটা আগে বুঝতে পেরেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তখন বাজারে এসে কাস্টমাররা বলেন দাম বেশি। তারা আগে-পরে কিনলেই কিন্তু এমন হয় না।
মাছ মাংসের বাজারেও অস্থিরতা : শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহেও ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। রমজানকে সামনে রেখে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেন। মাংসের মতো মাছের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সাইজভেদে তেলাপিয়া ২২০-২৩০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে শুরু করে সাইজভেদে ৪০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ টাকার নিচে নেই পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছ। মাছ যত বড় তার দাম তত বেশি।
কিছুটা স্বস্তি সবজির বাজারে : বাজারে ভালোমানের আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। একই দামে মিলছে বাঁধাকপিও। শিম ৬০-৭০, টমেটো ৪০-৫০, করলা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০-৮০ টাকা মান ও সাইজভেদে লাউ ৭০-৯০ টাকা, শশা ৭০-৮০, মুলা ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরিষা শাকের আঁটি ১৫ টাকা, ডাটা শাক ১৫ টাকা, পালং ১০-১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০-৪০, লাল শাক ১৫ টাকা, বতুয়া শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্বস্তি নেই ফলের দামেও : গত সপ্তাহে যে আনারস বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। বড় বেল (বেলি বেল) গত সপ্তাহে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে এটির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্য ধরনের বেল যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা সেটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। জাম্বুরার দাম গত সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। পাকা পেঁপের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়। পেয়ারার দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। তরমুজ গত সপ্তাহে কেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
এছাড়া সফেদা ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকায়, সবরি কলা ডজন ৮০-১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাগর কলা, চম্পা কলা, বাংলা কলাসহ প্রতিটির দাম ডজনে ১০-২০ টাকা বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়