মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী : অর্ধেকের বেশি নারীরই হয় বাল্যবিয়ে

আগের সংবাদ

একগুচ্ছ নির্দেশনা নিয়ে ফিরলেন ডিসিরা : হয়রানিমুক্ত মাঠ প্রশাসনের বার্তা

পরের সংবাদ

অগ্নিকাণ্ডের দায় সাত সংস্থার : দায়ী কর্মকর্তা ও ভবন মালিককে আসামি করতে হবে, টাস্কফোর্সে বিশেষজ্ঞদের রাখার সুপারিশ

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিভিন্ন ভবনে বারবার অগ্নিকাণ্ড ও এসব ঘটনায় হতাহতের জন্য অনুমোদন দেয়া ৭টি সংস্থাকে দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা। অতীতে এ ধরনের যে সব ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় দায়ীদের সাজা না হওয়ায় বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ করছেন তারা। অনুমোদন দেয়া দায়ী সংস্থাগুলো হলো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিষেবা দানকারী সংস্থা (ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি/ডেসা), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ভবনমালিক। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এ সময় বক্তারা জানান, একটি রেস্তোরাঁ করতে হলে দরকার হয় ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ই-ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র। এসব ছাড়পত্র যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদারকি ছাড়াই দেয়া অথবা ছাড়পত্রহীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিরুদ্বেগ থাকার কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও ভবনমালিককে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের’ আসামি করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি আর সময়ক্ষেপণ না করে অতিদ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে নোটিস টাঙিয়ে দেয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে রেটিং পদ্ধতি চালুরও দাবি করেন তারা। নিরাপদ খাদ্য ও ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রেটিং পদ্ধতি চালু করে প্রতিটি ভবনের সামনে রেটিং সনদ ঝুলিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্ঘটনার পর তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব থেকে ‘দায়মুক্তি’ নেয়ার চেষ্টা করছে। হাতে গোনা দুই একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, এ ধরনের প্রতিটি অগ্নি দুর্ঘটনায় হতাহতের পেছনে রয়েছে মুনাফাখোরদের অতি লোভ। তারা যেন কোটিপতি হওয়ার দৌড়ে নেমেছে। এতে কে মরল- তা যেন তাদের দেখার বিষয় নয়। এই লোভে

পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ, আর আসামি করা হচ্ছে সাধারণ কর্মচারীদের, এতে প্রকৃত দোষীরা অধরাই রয়ে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই মৃত্যুপথ থেকে উত্তরণে কাজ করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাপার সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশে নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-১১ অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলেছে। কিন্তু এখনো আমরা একটি নিরাপদ ও অভিঘাত সহনশীল নগরী গড়ে তুলতে পারিনি। নগরে সংঘটিত অগ্নিদুর্যোগ আজ বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়, সারাদেশে গত ৯ বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার ১৬৭টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৫১ জন; আর আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬০৬ জন। রাজধানীসহ সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ অননুমোদিত অবৈধ ভবন, অবৈধ ভূমি ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদারকির অভাব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একটি রেস্তোরাঁ স্থাপন করতে হলে দরকার হয় ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ই-ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র। প্রবন্ধে আরো বলা হয়, এসব ছাড়পত্র যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদারকি ছাড়াই দেয়া অথবা ছাড়পত্রহীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিরুদ্বেগ থাকার কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইনের ব্যত্যয় এবং তদারকির অভাবে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো অর্থাৎ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিষেবা দানকারী সংস্থা (ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি/ডেসা), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সর্বোপরি ভবনমালিক দায়ী।
প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিহীনতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকায় গত পাঁচ বছরে হওয়া অন্তত ৯টি বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা পারস্পারিক দোষারোপের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব থেকে ‘দায়মুক্তি’ নেয়ার চেষ্টা করছে। হাতে গোনা দুই-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই।
বাপার সহসভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল ডাটা বেজ তৈরি করে সব ভবনের সুবিধা-অসুবিধাগুলো রেটিং করা ও হট লাইন সেবা দ্রুত চালু করার দাবি জানান তিনি।
বেলার সভাপতি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগে দেশের সরকারকে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখতে হবে। এ ধরনের নিষ্ঠুর দৃশ্য যেন আমাদের আর কাউকেই দেখতে না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার অনুরোধ জরুরি ব্যবস্থা নিন। কার দোষে এ ধরনের মৃত্যু এড়ানো গেল না- তা খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় শুধু সরকারি সংস্থা নয়; ট্রাস্কফোর্স গঠন করলে স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদদেরও রাখার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি বিল্ডিং কোড অমান্যকারীদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকারের সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়ে মরতে হচ্ছে। অবহেলাজনিত ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। আর এর দায়ে আটক করা হচ্ছে খেটে খাওয়া কর্মচারীদের। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি সব কর্মচারীর মুক্তি দিয়ে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, দিনের পর দিন আগুনে এতগুলো মানুষকে বার-বি-কিউ করে মারা হচ্ছে; অথচ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো উদাসীন। এই ভবনে ছিল না কোনো ফায়ার এলার্ম। যার জন্য আগুন লাগার পরও অনেকে বুঝতেই পারেনি। তিনি ঢাকার সব ভবন জরিপ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ড লাগানোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এগুলো হলো আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ‘টাস্কফোর্স’ গঠন করে নগরীতে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, অন্য শহরগুলোতেও এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে অতি বিপজ্জনক ও বিপজ্জনক ভবনের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি ভবনের সামনে তালিকা টানাতে হবে। রাজধানীতে বিদ্যমান প্রায় ৯৫ ভাগ অবৈধ/অননুমোদিত/অনুমোদিত কিন্তু ব্যত্যয়কারী ভবনগুলোকে ড্যাপের বিধান অনুযায়ী নীতিমালা দ্রুততম সময়ে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংস্থা হিসেবে সিটি করপোরেশনগুলোর নেতৃত্বে অন্যান্য অংশীজনের মাধ্যমে ভবনের ‘প্রতি বছর নবায়নযোগ্য ব্যবহারযোগ্যতা’র সনদ ভবনের প্রবেশ অঞ্চলে প্রকাশ্যে টানাতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের নীতি অনুযায়ী ‘বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরএ)’ প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশের সব ভবন নিরাপদ করার উদ্যোগ নিতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিভিল ডিফেন্স অংশকে শক্তিশালী করে প্রতিটি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রশিক্ষিত জনগণ তৈরির কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সব সাংঘর্ষিকতা ও অস্পষ্টতা পরিহার করে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পারস্পারিক সামঞ্জস্যপূর্ণতা নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে ঢাকার সব খাল, জলাধার-পুকুর উদ্ধার, সংস্কার ও তা সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া আরো কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়