মির্জাপুরে ডাকাতের হামলায় ট্রাকচালক নিহত

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি : ত্রিশ হাজার টাকায় নাগরিকত্ব!

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্য শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ : কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী > শিক্ষক সংকটও চরমে > বিদেশে চাকরি ও প্রশিক্ষণে বাধা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : দেশে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে। অবকাঠামো, শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে অনেক সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম। দেশে সরকারি ৩৭টি এবং বেসরকারি ৭২টি মেডিকেল কলেজ থাকলেও আন্তর্জাতিক মেডিকেল শিক্ষা কারিকুলাম নেই। শিক্ষক সংকটও চরমে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ৭ হাজার ২৪৭ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ হাজার ১৫০ জন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় অবস্থা আরো করুন।
মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট আছে। সেই সংকট দূর করতে হবে। সংখ্যার দিকে নয়, শিক্ষার গুণগত মানের দিকে নজর দেয়া হবে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তথ্য অনুাযায়ী, একটি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ১১টি বিষয় থাকা বাধ্যতামূলক। বিষয়গুলো হলো- অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, সার্জারি, মেডিসিন এবং গাইনি ও অবস। সাধারণ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতি ১০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। প্রতি ২৫ শিক্ষার্থীর জন্য

ন্যূনতম একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী শিক্ষক থাকতে হবে। অনেক সরকারি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ শর্ত পূরণ করতে পারছে না। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অবস্থা আরো নাজুক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
মানসম্মত শিক্ষার শর্ত পূরণ না করায় ইতোমধ্যে ঢাকার কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া চারটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো-উত্তরার আইটি মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডির নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ।
মেডিকেল শিক্ষার নানান সংকটের মধ্যে যুক্ত হয়েছে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি না পাওয়ার আশঙ্কা। ডব্লিউএফএমই সারা বিশ্বে মেডিকেল কলেজের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতে কাজ করে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, এমনকি নেপালও তাদের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। স্বীকৃতি না পেলে চলতি বছরের জুন থেকে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এতে হাতছাড়া হবে চাকরির বাজার। অংশ নিতে পারবে না কোনো আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণেও। অন্যদিকে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলাদেশে আসতে নিরুৎসাহিত হবে।
ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ডব্লিউএফএমইর স্বীকৃতি না পাওয়ার শঙ্কা থেকে এই সংখ্যাটি কমতে শুরু করেছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২২১টি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২ হাজার ৫৫১টি আসন সংরক্ষিত আছে। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন কমেছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সরকারিতে এমবিবিএসে ৯৬ ও ডেন্টাল কোর্সে ৬ জনসহ মোট ১০২ জন এবং বেসরকারি মেডিকেলে ১৯৭০ জন ভর্তি হয়েছিল। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেলে ১৭৩৭ জন ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৪২৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ আসে ভারত, নেপাল ও কাশ্মির থেকে। এছাড়া পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়তে আসেন।
বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চিকিৎসক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা সংগঠন প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়ার (পিএইচএ) চেয়ারপারসন ডা. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেডিকেল চিকিৎসার শিক্ষাক্রমে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের মেডিকেল শিক্ষা চার থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে স¤প্রতি বিদেশি শির্ক্ষাথী ভর্তি অস্বাভাবিক হারে কমেছে।
ডব্লিউএফএমইর স্বীকৃতির জন্য মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন, মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক, অবকাঠামোসহ নানা সংকটের সমাধানসহ ১১টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। সেই লক্ষ্য অর্জনে সংসদে গত বছর বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন বিল, ২০২৩ সংসদে পাস হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রশাসনিক আদেশে যে হারে মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, সেই তুলনায় শিক্ষক তৈরি হচ্ছে না। পুরনো বড় বড় মেডিকেল কলেজ ছাড়া অধিকাংশ নতুন সরকারি ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রোগী পায় না, শিক্ষার মানও যথেষ্ট নয়। এসব মেডিকেল থেকে যে চিকিৎসক বের হচ্ছে, তারা শুধু পুথিগত শিক্ষা পাচ্ছে। ব্যবহারিক শিক্ষা পাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়