জবির নতুন প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন

আগের সংবাদ

শেখ হাসিনার ইউরোপ জয় : মিউনিখ সফর > সরকার প্রধানদের অভিনন্দনে সিক্ত > শেখ হাসিনাকে ঘিরেই সবার আগ্রহ > বক্তব্যে যুদ্ধবিরোধী বার্তা প্রসংশিত

পরের সংবাদ

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি : ত্রিশ হাজার টাকায় নাগরিকত্ব!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাধারণত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করা হয়। পৌরসভার মেয়র, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব নির্দিষ্ট আইডির মাধ্যমে এই কাজটি করে দেন। পরে তা ওয়েবসাইটে দেখতে পান নিবন্ধনকারী। এক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে পৌরসভা কিংবা ইউনিয়নের কম্পিউটার অপারেটরদের কাছে নিজেদের আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখেন মেয়র, চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের ওই আইডির এক্সেস নিয়ে পৌরসভা বা ইউনিয়নের ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন সরবারহ করে আসছে একটি চক্র। কোনো রোহিঙ্গা চাইলে মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিক।
জন্ম নিবন্ধন করার পর অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রও নিয়েছেন। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এই ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না, মো. রাসেল খান, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুর রশিদ ও সোহেল চন্দ্র। ডিবি বলছে- চক্রটি বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার ভিন্ন ভিন্ন থানা এলাকা থেকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে দিত। এজন্য ফেসবুকে বিভিন্ন নামে পেজ খুলে প্রচারণা চালাত তারা। তাদের মাধ্যমে অনেক দাগি আসামিও নিজের নাম পরিচয় পাল্টে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন নিয়েছে। আবার অনেকে ভুয়া পাসপোর্টও তৈরি করছেন।
গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রশিদ দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর এবং সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০ নম্বর রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। সংশ্লিষ্ট পৌরসভা মেয়র ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের জন্ম নিবন্ধনের এক্সেস ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিরল উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে দেখিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন কপি এবং নম্বর দিয়ে আসছিল তারা। এক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন

ব্যক্তির ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে দেয়ার কাজ দিতো গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম মুন্না ও রাসেল খান। মুন্না ও রাসেল যথাক্রমে বাগেরহাট এবং নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তারা ৫ জনই একে অপরের পরিচিত এবং পরস্পর সহায়তায় স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের বিরলের অধিবাসী দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহের কাজ করে আসছিল।
এ কাজে তারা সবাই আনুপাতিক হারে লাভ পেত। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়- কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য পৌরসভা ও ইউনিয়নে তাদের লোকজন রয়েছে; যারা ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার মানুষের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে দিয়েছে। এসব জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে অনেক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে দেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা করে নিতেন তারা।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মাধ্যমে অনেক অপরাধী আপরাধ করে নিজ এলাকার বাইরে আরেকটি জন্ম নিবন্ধন করে এবং পরিচয় গোপন করে নতুন করে অপরাধ শুরু করছে। অনেকে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরিতে এই জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করেছে। যাতে ব্যাংকঋণ ও অনলাইন অপরাধে পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারে। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করছে। এসব জন্ম নিবন্ধন দিয়ে অনেক দাগি/কুখ্যাত খুনি, ডাকাত এবং রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধী চক্র নিজেদের পরিচয় গোপন করে ফেলতে সক্ষম হয় অথবা নতুন করে নতুন পরিচয়ে আবার অপরাধ শুরু করতে পারছে।
আসামিদের গ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দেয়া ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি (অর্গানাইজড এন্ড ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, তার টিমের সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড (সাইবার ক্রাইম) নজরদারি করার সময় দেখতে পান ‘এনআইডি হেল্প ডেস্ক গ্রুপ’ ও ‘এনআইডি অনলাইন সার্ভিস’ নামে ফেসবুক গ্রুপে অজ্ঞাত ব্যক্তি কর্তৃক কললিস্ট, এসএমএস লিস্ট, নাম্বার টু এনআইডি, এনআইডি টু নাম্বার, লাস্ট কল লোকেশন, রেডিও লোকেশন, কোন সিম নম্বর থেকে তার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নগদ/বিকাশ, এনআইডি সার্ভার কপি, এনআইডি (সাইন কপি), সার্টিফিকেট (সাইন কপি), বিভিন্ন নাগরিক তথ্যাদি, জন্ম নিবন্ধন (সাইন কপি), জন্ম নিবন্ধন সংশোধনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনিভাবে প্রবেশ করে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করে, তার অনুলিপি টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করার পোস্ট দিয়েছে। পরে প্রযুক্তি সহায়তায় ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে এই চক্রের খোঁজ পাওয়া যায়।
এডিসি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২ জন কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে এবং অপর ২ জন পড়শোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি, বিশেষত রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরিতে ব্যাপক লাভ দেখে এই কাজে জড়িত হয়ে পড়ে তারা। যেহেতু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক নন এবং স্থানীয় নাগরিক পরিচিতির অভাবে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে তাদের এক্সেস নেই, সেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ভুয়া নিবন্ধন তাদের জন্য সুবিধাজনক এবং বহু রোহিঙ্গা চক্রটির মাধ্যমে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে নিয়েছে এবং এর মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃতরাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। দেশের প্রায় সব ধরনের সেবা ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ব্যবহারকারী সবাইকে তাদের আইডি পাসওয়ার্ড অধস্তনদের কাছে দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়