যুবলীগ নেতার বদলে অন্যের জেল খাটার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী : যুদ্ধ থামানোর উপায় খুঁজুন

পরের সংবাদ

জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করুন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা আর নয় : নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী > বিশ্ব নেতাদের প্রতি ৬ প্রস্তাব শেখ হাসিনার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্ব নেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তহবিলকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে- মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থরক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। গতকাল শুক্রবার জার্মানিতে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তার প্রস্তাবিত পরামর্শে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ছয়টি পরামর্শ তুলে ধরার সময় তার প্রথম পরামর্শ উপস্থাপন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঠিক পথে রাখতে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, এই বছরের শেষ নাগাদ, আমাদের সবাইকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে বিশেষ করে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে ২০২৫-পরবর্তী একটি নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একমত হতে হবে।
তার দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সংঘাতের অনুভূতির বোধ থেকেও অনেক দূরে অনুভূত হয়।
তার তৃতীয় পরামর্শে বাংলাদেমের সরকারপ্রধান বলেন, জলাবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের তীব্র ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য
অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান পর্যায় অন্তত দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রæতি দেয়ার জন্য তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানান।
চতুর্থ পরামর্শে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থপ্রাপ্তি সুগম করার জন্য দীর্ঘকালের অমীমাংসিত সমস্যাটি তাদের সক্ষমতায় বিনিয়োগ করার সুযোগসহ সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের শুধুমাত্র দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং আরো দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তার পঞ্চম পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণ লাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফলাফল দেখাতে হবে।
সর্বশেষ ও ষষ্ঠ পরামর্শে তিনি বলেন, জলবায়ু কর্মসূচির জন্য বেসরকারি পুঁজি প্রবাহের জন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকল্পের জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করতে উদ্ভাবনী, মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, সবাই জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের বর্তমান মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। দুঃখের বিষয়, প্রতিশ্রæত জলবায়ু অর্থায়ন এখনো গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত। জলবায়ু অর্থায়ন এবং এর অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংজ্ঞার অনুপস্থিতির কারণে এটি আরো জটিল।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে কপ-১৫ চলাকালে শেষ মুহূর্তের সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা বেশ কঠিন হবে। দেশে ফেরার পর তিনি স্থানীয়ভাবে অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এখন স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু অভিযোজনের একটি পরীক্ষাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮০০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সবগুলোই নিজস্ব সম্পদ থেকে। তবে, আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছর যে ৭-৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন তার তুলনায় এটি এখনো অপর্যাপ্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়গুলোকে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় রাখার জন্য জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) অনুসারে প্রভাব প্রশমনের জন্য, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। অভিযোজনের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২১৫-৩৮৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। অর্থায়নের বিপুল ব্যবধান বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড চালু করার মাধ্যমে দুবাইতে কপ-২৮ একটি ইতিবাচক যাত্রা শুরু করেছে। তহবিলের জন্য ৭৯২ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি রয়েছে। আমরা আশা করি, তহবিলে অতিরিক্ত প্রতিশ্রæত অর্থ দেয়া হবে। তিনি বলেন, অর্থায়নের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে এখন লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হয়েছে। প্যারিস চুক্তির নীতিমালা দ্বারা তহবিল পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ওডিএ এবং অন্যান্য ধরনের জলবায়ু অর্থায়নের বাইরে তহবিল অবশ্যই নতুন ও অতিরিক্ত অর্থ পাবে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করা হয় না।
তিনি বলেন, তহবিলের পরবর্তী কাজ হলো কার্যকর প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় করা শুরু করা। তহবিল তাদের কাছে পৌঁছানো উচিত যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বাংলাদেমের সরকারপ্রধান আরো বলেন, অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া সহজ ও নমনীয় করা উচিত। তহবিলের পরিচালনা পর্ষদ এলডিসি এবং সিডস প্রতিনিধিদের মতামতের বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেবে বলে আশা করি। আমি অবশ্যই বাংলাদেশকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের সহায়তার প্রথম প্রাপক হিসেবে দেখতে চাই।
বাংলাদেশ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান নগণ্য (বৈশ্বিক নির্গমনের ০.৪৭% এর কম) হলেও আমার দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে। অনুমান করা হয়, এখন থেকে ২০৫০ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বার্ষিক জিডিপি ক্ষতি হবে ২% এবং এই হারে ২১০০ সালের মধ্যে ক্ষতি ৯% পর্যন্ত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন এবং সহিণষ্ণুতার জন্য বার্ষিক বাজেটের প্রায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং জিডিপির ০ দশমিক ৭৪ শতাংশ ব্যয় করে, যার ৭৫ শতাংশ আসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড ২০০৯ সালে নিজস্ব সম্পদ থেকে গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তহবিল এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ৮০০টিরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়