সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম : স্রাইন কমিটির নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা

আগের সংবাদ

গৃহযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ মিয়ানমার

পরের সংবাদ

তৃণমূলে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : উত্তরের জেলা রাজশাহীর নয়টি উপজেলা নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন অর্ধশতাধিক প্রার্থী। ইতোমধ্যেই পোস্টার-ফেস্টুন সেঁটে এলাকাবাসীর নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন তারা। জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা- এই নয় উপজেলাতেই কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রতীক ছাড়া এই নির্বাচনে জয়ী হতে দলীয় শীর্ষ নেতাদের আর্শীবাদ পাওয়ার জন্য তদ্বির করছেন অনেকেই। সংসদ নির্বাচনে এমপিদের বিরোধিতা করলেও বর্তমানে স্থানীয় এমপির প্রিয়ভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী। আবার কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটি শুধু রাজশাহী জেলার চিত্রই নয়, পুরো বাংলাদেশের চিত্র। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা বনাম নৌকার স্বতন্ত্র থাকায় নানা গ্রুপে বিভক্ত দল। দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিতব্য উন্মুক্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা যেমন বাড়বে, তেমনি তৃণমূলে বিভক্তিও বাড়বে- এমন আশঙ্কা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেই কৌশল খুঁজছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতাদের মতে, আওয়ামী দেশের সবচেয়ে বড় দল। এখানে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক। অধিকাংশই নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সবাইকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। এর চেয়ে উন্মুক্ত হলে যিনি যোগ্য, তিনি ভোটে জিতে আসবেন এবং নির্বাচনও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে। আর বিভক্তি নির্বাচনকেন্দ্রিক, নির্বাচনের পর ওই বিভক্তি আর থাকে না। কারণ দলের আদর্শে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র মতে, আসন্ন রমজান মাসের শেষার্ধে স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা পারে। পাঁচ ধাপে ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী এপ্রিলে প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকারের নতুন আইন তৈরি করা হয়। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান চালু হয়। এর পর প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের দ্ব›দ্ব ও সহিংসতার পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। দলের নেতাসহ এমপি-মন্ত্রীরাও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। অনেক স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের পক্ষে কাজ করা নেতাদের বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক শাস্তি দেয়া হয়। এই পেক্ষাপেট গত ২২ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগের জরুরি কার্যনির্বাহী সভায় উপজেলা, সিটি, পৌর ভোটে নৌকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের শঙ্কা থেকেই প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশলও বটে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। নির্বাচনের মাঠে আলোচনায় নেই দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে এখন প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (নারী ও পুরুষ) পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিলে নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করা কঠিন হবে। অন্যদিকে দলের সবার

জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিলে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ তীব্র আকার নিয়েছে। অনেক জায়গায় সংঘর্ষে নেতাকর্মী হতাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমন অবস্থায় উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে বিরোধ আরো বেড়ে যাবে। সূত্র জানায়, বিদ্যমান বাস্তবতায় নির্বাচনে পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতি ও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচন চায় সরকার। এছাড়া স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে উপজেলা পরিষদে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব চায় ক্ষমতাসীনরা। বিনা ভোটে নির্বাচনের দায় নিতে চায় না দল। এজন্য স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে যেন অভ্যন্তরীণ কোন্দল জটিল আকার ধারণ না করে সেজন্য কৌশল খুঁজছে দল।
প্রতিদ্ব›িদ্বতার মধ্য দিয়েই যোগ্য নেতৃত্ব : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। প্রাচীন সংগঠন। দলে অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন, যাদের অনেকেই জনপ্রতিনিধি হতে চান। প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকলে তৃণমূলে কার কেমন জনসম্পৃক্ততা আছে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। প্রতিদ্ব›িদ্বতার মধ্য দিয়েই যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমনকি পৌরসভা নির্বাচনেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে সব নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে স্থানীয় সরকারে সরাসরি নৌকা প্রতীক দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও যদি দল কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়, তাহলে মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হবেন। দলের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি আরো বেড়ে যাবে। স্বতন্ত্রদের আটকালে ভোট প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে না। এতে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে; তা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠবে। তাই প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখাই সবচেয়ে ভালো পথ মনে করছে দল।
আগে একজনকে প্রতীক দিলে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন- মন্তব্য করে সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এতে দলীয় শৃঙ্খলা যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনই তৃণমূলে বিভেদ-বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিপাকে পড়তে হয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে। একেক নেতা একেক প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়িয়েছে। তিনি বলেন, এসব দিক বিবেচনা করেই স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে তৃণমূলে কোন্দলের কোনো আশঙ্কা দেখছি না। যার যাকে ভালো লাগবে, তাকে সমর্থন দেবে। ব্যক্তি সমর্থন আর দলীয় সমর্থন এক নয়। দলীয় আদর্শে সবাই ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
ভোটের মাঠে ‘কদর’ বাড়বে কর্মীদের : দলীয় প্রতীক ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। তবে দলীয় এমন সিদ্ধান্তে পকেট গ্রুপের চেয়ে ভোটের মাঠে কর্মীদের ‘কদর’ বাড়বে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এছাড়া নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, এটি খুব ভালো সিদ্ধান্ত। দলের এমন সিদ্ধান্তে নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হবে, তেমনি ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। উন্মুক্ত হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক ছিল। এমন সিদ্ধান্তের কারণে পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পড়বে, এমনটি মনে করা হচ্ছে।
এদিকে প্রার্থী উন্মুক্ত হওয়ায় দলীয় কোন্দল বাড়বে, সংঘাত বাড়বে- এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকেই। তাদের মতে, সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ নির্বাচনের কোন্দলের ক্ষত এখনো শুকায়নি। দলীয় প্রার্থী বনাম দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের কোন্দলের রেশ কাটেনি। আবার উপজেলা নির্বাচনে আরেক দফা দলীয় প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে উসকে দেবে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু রায় চৌধুরী বাবুল ভোরের কাগজকে বলেন, এবার আর নির্বাচন করব না। আমি নৌকার লোক। নৌকা প্রতীক নেই, তাই আমিও নির্বাচনে নেই।
অন্যদিকে দলীয়প্রধান এবং দলের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন অনেকেই। সাভার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চান আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক, তৃতীয় লিঙ্গের মিষ্টি চৌধুরী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, নৌকা পেতে চায় সবাই। কারণ নৌকার প্রতি জনগণের আস্থা বেড়ে গেছে। নৌকা থাকা মানেই উন্নয়ন। জনগণ উন্নয়ন চায়। তাই যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন, তার জয় মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন চান অনেকেই। পাবেন একজন। এক্ষেত্রে দলীয়প্রধান, প্রধানমন্ত্রী সুন্দর ও চমৎকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনগণ যাকে ভোট দেবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন।
আইনি জটিলতা নেই : দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে কোনো আইনি জটিলতা কিংবা সমস্যা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) বলছে, এতে আইনের ব্যত্যয় হবে না। নির্বাচন আয়োজনসহ অন্য ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখছে না তারাও। নির্বাচন কমিশন সচিব আলমগীর হোসেন জানান, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেবে না, তাতে কোনো সমস্যা নেই। রাজনৈতিক দলে যুক্ত কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ২৫০ জন ভোটারের সমর্থন রয়েছে, এমন প্রমাণ জমা দিতে হবে। তবে কেউ এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়ে থাকলে, তাদের ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা জমা দিতে হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়