গাজীপুরে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সংশয়

পরের সংবাদ

গৃহযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ মিয়ানমার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ঢাকা ও নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি : গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমার। পতনের মুখে জান্তা সরকার। একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে সব এলাকায়। দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে সাধারণ নাগরিকরা। এমনকি সশস্ত্র বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শত শত সদস্য হয় বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে; না হয় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশি দেশে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী- অগ্নিগর্ভ পুরো মিয়ানমার। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তেও। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মির তুমুল লড়াই অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে লাগাতার গোলাগুলি ও মার্টারশেল নিক্ষেপ হয়েছে। বিকালে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছোড়া গুলিতে আরো এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এর আগে সকালে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গুলিতে আহতদের একজন পবীন্দ্র ধর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ধরে চলা গোলাগুলিতে কম্পিত হয় পুরো সীমান্ত এলাকা। গোলাগুলির ভয়াবহতা দেখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ৫৮ সদস্য। তাদের বিজিবি ক্যাম্পে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত জনকে নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বাংলাদেশ কারো সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। তবে কেউ গায়ের ওপর এসে পড়লে ছেড়ে দেয়া হবে না। আমরা সবসময় তৈরি আছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে সবসময়ই নানা ধরনের বিদ্রোহ লেগেই আছে। স¤প্রতি আমরা দেখেছি, রাখাইনের অনেক এলাকা একের পর এক দখল করে নিচ্ছে আরাকান আর্মি নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ক্রমাগত তারা শক্তিশালী হয়ে আরো সামনের দিকে এগোচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ঘাঁটিগুলো একের পর এক দখল করে নিচ্ছে আরাকান আর্মি। আমাদের সীমান্তসংলগ্ন যেগুলো ছিল; সেগুলো তারা দখল করে নিয়েছে। আত্মরক্ষার্থে বিজিপির কয়েকজন সদস্য আমাদের সীমানায় ঢুকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। বিজিবি সদস্যরা তাদের অবরুদ্ধ করেছে। তাদের অস্ত্র জমা নিয়ে একটি জায়গায় আটকে রেখেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে তারা এদের নিয়ে যায়।
রোহিঙ্গাদের আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত একটিই- সীমান্তে এখন যুদ্ধ চলছে; এখানে কারো আসা উচিত হবে না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যদি মনে করে, তাদের ওখানে যুদ্ধ হচ্ছে, তারা অন্য কোথাও যাবে, এ মুহূর্তে আর কাউকে আমরা ঢুকতে দেব না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্ন এখন আসবে না, কারণ যুদ্ধ চলছে। গোলাগুলি চলছে। এখানে কারো আসা উচিত হবে না। যেই আসবে, তাকে আবদ্ধ করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেব।
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, তুমব্রু সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশও। এক্ষেত্রে বিজিবি কোনো সহযোগিতা চাইলে তাদের আইনানুগভাবে তা দেয়া হবে।
এদিকে লাগাতার গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা। গুলির অংশ ও রকেট লঞ্চারের ভগ্নাংশ উড়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকায় বসতঘরের ওপর। এ ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। অনেকেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় ঘরে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছেন না অভিভাবকরা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় গোলাগুলির ঘটনায় ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, রবিবার ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। এতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে ঘুমধুম-তুমব্রু। ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে গতরাত থেকেই প্রচণ্ড গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলার সীমানার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিমকূলে মিয়ানমার অভ্যন্তরে শনিবার রাত থেকে রবিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা জানান, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির কারণে ধুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ পারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকূল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ধুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রবিবার একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপদে অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফরিদুল আলম হোসাইনি জানান, সীমান্তের একশ গজ দূরত্বে থাকা মিসকাতুন নবী দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য ফাতেমা বেগম দুপুরে বলেন, সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। স্থানীয়রা ভয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক পরিবার সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে ছিল। সীমান্তের এপারে তুমব্রু ঘোনাপাড়ায় বিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার এসে পড়েছে এবং সীমান্তের বাইশপাড়ীর একটি ঘরের চালের ওপর বিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার এসে পড়েছে। এ ঘটনার পর থেকে অনেকে ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়