ঢাকার জিনজিরা : বিয়ের পরদিনই বরের মৃত্যু

আগের সংবাদ

তৃণমূলে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা

পরের সংবাদ

সংরক্ষিত আসনেও চমক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ- উন্নয়নের প্রতিটি ধাপেই সরকার ও দলে একের পর এক ইতিবাচক চমক দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নেও তারুণ্য-অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে এক ঝাঁক কাণ্ডারীর হাতে দলীয় প্রতীক নৌকা দিয়েছেন তিনি। রাজপথ কাঁপানো দাপুটে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সাবেক আমলা, চিকিৎসক, তারকা, সাংবাদিক, নারী নেতৃত্বের মিশেলে মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়েছিলেন একাদশ সংসদ থেকে ৭৮ জন সদস্য। বাদ পড়েছিলেন সাবেক মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য। দ্বাদশ সরকারের মন্ত্রিসভায়ও চমক এনেছেন সরকারপ্রধান। ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার ১৪ জনই নতুন মুখ। এরই ধারাবাহিকতায় সংরক্ষিত নারী আসনেও চমক আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জোট শরিক এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে ৫০ আসনের মধ্যে এবার ৪৮ আসনেই প্রার্থী দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুটি আসন পাবে জাতীয় পার্টি। তবে ক্ষমতাসীনদের ৪৮ আসনের বিপরীতে হাজারো প্রতিদ্ব›দ্বীর দৌড়ঝাঁপ শুরু হলেও বাদ পড়বেন একাদশ সংসদের অধিকাংশই। তাদের জায়গায় ঠাঁই পাবেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নতুন মুখ। শরিক দল থেকে ঠাঁই পাবেন দুই থেকে তিনজন। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আইনপ্রণেতা হওয়ার সুযোগ পাবেন কেন্দ্রীয় কমিটি, সহযোগী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে। আর মনোনয়নে নতুন নেতৃত্ব, ভিশন-মিশন বাস্তবায়নে দক্ষ ও যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এই ফেব্রুয়ারিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। শিগগিরই এই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টনের বিষয়ে ১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করে ও স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত বুধবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এ চিঠি ইসি সচিবের কাছে হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। এ ব্যাপারে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্য সমর্থন দেবেন। সেই সমর্থনসূচক আলাদা আলাদা চিঠি তাদের স্বাক্ষরসহ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সন্নিবেশিত করে ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের গুরুত্ব : গত সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৪৩টি। এর মধ্যে খাদিজাতুল আনোয়ার, রুমানা আলী, সুলতানা নাদিরা ও তাহমিনা বেগম এবার সরাসরি আসনে জয়ী হয়েছেন। সূত্রমতে, বাকি যে ৩৯ জন আছেন, এর মধ্যে অল্প কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। পুরনোদের মধ্যে বেশির ভাগই বাদ পড়বেন। নতুন মুখই আসছেন বেশি। শীর্ষ নেতারা বলছেন, সংরক্ষিতদের মধ্যে দুয়েকজনের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার বিষয়েও আলোচনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা। নতুন সিদ্ধান্তের কথা তারা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, যারা জোট বা দলের অন্যদের সুযোগ করে দিতে সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন; ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে দলে ভূমিকা রেখেছিল- এমন পরিবারের সদস্যদের; ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দায়িত্ব নেয়ার পর যাদের পাশে পেয়েছিলেন- এমন নারী নেত্রীদের কেউ কেউ; সংখ্যালঘু স¤প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসহ গত সংসদে যেসব জেলা থেকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হয়নি- সেসব জেলা এবার মনোনয়নে অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়া অন্যান্যবারের মতোই লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে থেকেও দুয়েকজন সংসদে আসবেন।
সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা আমাদের পরীক্ষিত, ত্যাগীদের গুরুত্ব দেব। যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যারা আমাদের দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী, তাদের ব্যাপারটা আমরা অগ্রাধিকার দেব।
শীর্ষ নেতাদের মতে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নারী নেত্রী সরাসরি আসনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের অনেকেও মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য করা হতে পারে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দলের নিবেদিতপ্রাণ নেত্রীরা এবার মনোনয়ন পাবেন। এক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেত্রীরা প্রাধান্য পাবেন।
৪৮ পদের জন্য হাজারো প্রতিদ্ব›দ্বী : কেন্দ্রীয় কমিটি, মহিলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীনেত্রীরা আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় ও নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রত্যাশীরা নিজেদের জীবনবৃত্তান্তও নেতাদের কাছে জমা দিচ্ছেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি শবনম জাহান শিলা ভোরের কাগজকে বলেন, আমি একবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলাম। যতটুকু পেরেছি দায়িত্ব পালন করেছি। এবারো কিনব। যদি দল এবং দলীয়প্রধান আমাকে যোগ্য মনে করেন আমাকে দায়িত্ব দেন, আমি নিজেকে দেশের কাজে বিলিয়ে দেব। নারী উন্নয়নসহ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করব।
কুমিল্লা থেকে মনোনয়ন চান বীর মুক্তিযোদ্ধা, রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত পাপাড়ি বসু। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, রাজনীতি-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সত্তরের দশক থেকেই আমি সম্পৃক্ত। দায়িত্ব পালন করছি জাতীয় মহিলা সংস্থার কুমিল্লার চেয়ারম্যান হিসেবে। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কুমিল্লা শাখার সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি, রূপালি জেনারেল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কুমিল্লার জেনারেল ম্যানেজার, দৃষ্টি কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক, রোটারি ক্লাব অব কুমিল্লার ফাস্ট প্রেসিডেন্ট, হানিফ স্মৃতি সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রমা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে দরিদ্র, অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীর বৃত্তি দিচ্ছি মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া সব সম্মানীর অর্থ দিয়ে। এখন দল থেকে মনোনয়ন চাইব। যদি দল আমাকে যোগ্য মনে করে, আমি দেশের আরো বৃহত্তম সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারব।
আইনপ্রণেতা হতে চান একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানেরাও। শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান হিসেবে দেশের জন্য কিছু করতে পারলে ধন্য মনে করব। কিছু কাজ করছি। দল থেকে সাড়া পেলে অবশ্যই মনোনয়ন কিনব।
ঝিনাইদহ-মাগুরা ৩২৭ মহিলা আসন থেকে মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, ঝিনাইদহ শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, জজকোর্টের আইনজীবী শাহানারা খাতুন শানু। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি কখনোই। দেশের জন্য কাজ করতে চাই।
সংসদে সংরক্ষিত আসন চান তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীরাও। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক মিষ্টি চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। নেত্রী আমাকে সহদপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সান্ত¡না পুরস্কার কিংবা পিতা বা স্বামীর পরিচয়ে নয়, বরং ত্যাগী-পরীক্ষিত সত্যিকারের মাঠের রাজনীতিকদেরই মনোনয়ন দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু ভোরের কাগজকে বলেন, হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসা কেউ নন, বরং ত্যাগী, পোড়খাওয়াদের মনোনয়ন দেয়া উচিত। যারা দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে আসছেন, এমন নারী রাজনীতিক, যারা সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার যোগ্যতা রাখেন, তাদেরই মনোনয়ন দেয়া দরকার। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের অব্যশই জেণ্ডার সংবেদনশীল হতে হবে। নারীর অধিকার সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়